নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায় রাষ্ট্র সংস্কারের তোড়জোড় চারদিকে। প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত দেড় দশকে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে মেধা-যোগ্যতার চেয়ে দলীয় বিবেচনা অগ্রাধিকার পেয়েছিল। যে কারণে সরকার পতনের পর সব ক্ষেত্রে শূন্যতা দেখা দেয়। সরকার পরিবর্তনে জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপন, পুলিশের কর্মবিরতি, প্রশাসনে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেরই গা-ছাড়া ভাব জনসাধারণকে সংকটজনক অবস্থায় নিক্ষেপ করে। সড়কে যান নিয়ন্ত্রণে নামতে হয় শিক্ষার্থীদের। রাতে-পাহারা বসাতে হয় পাড়া-মহল্লায়। এর অন্যতম কারণ প্রশাসনিক স্থবিরতা। যা কাটাতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে জনপ্রশাসন। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। যাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল মূলত তাদের দ্বারা সরকারের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। এতে তারা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হলেও অনেকেই প্রাপ্য পদোন্নতি বা পদায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছেন। এরকম ১১৭ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন। প্রশাসন নির্দিষ্ট বিধিবিধানের মাধ্যমে চলার কথা। সেখানে ব্যক্তি-গোষ্ঠী-দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব ঘোরতর অন্যায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দলদাসে পরিণত হয়েছে এবং সরকার তা উপভোগ করেছে। পরিণতিতে প্রশাসনে ঘুণ ধরেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটির টাকার মালিক হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বেনজীর, মতিউর, আসাদুজ্জামানের মতো অনেককেই। আশা করি অন্য সবারও খোঁজ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। বিচারের মুখোমুখি করাবে। তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তার চলছে। এ কাজটা যেন শেষ করা সম্ভব হয়। তার জন্যই জনপ্রশাসন ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মেধা, জ্যেষ্ঠতা, সততা, নিষ্ঠার বিচারে পরীক্ষিত কর্মনিষ্ঠ নিবেদিতদের দায়িত্ব দিতে হবে। শতভাগ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলদাসত্বের চর্চা বন্ধ করতে হবে। না হলে আজ কজনের নিয়োগ বাতিল এবং কজনের আটকে থাকা পদোন্নতিতেই প্রশাসন সংস্কার হবে না। জনপ্রশাসনে ‘সত্যিকার সংস্কার’ কাম্য। যা সরকারি কর্মচারীদের নতুন করে মনে করিয়ে দেবে যে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, প্রভু নয়।