টেলিফোন করে অনেক সাধারণ নাগরিক ও সুহৃদ তাদের আশা আকাক্সক্ষার কথা মিডিয়াতে জানাতে অনুরোধ করছেন। সব চাওয়ার মূল একটাই- এ সরকারকে যেন রাজনৈতিক দলগুলো সময় দেয় সুশাসনের বীজ রোপণ করতে। কারণ গত ৫৩ বছরে একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে দেশে এখন কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আছে কি না সন্দেহ। অন্তর্বর্তী সরকারকে সবকিছু নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। সংস্কার করে সব অনিয়মের ইতি ঘটাতে হবে। এ মুহূর্তে জনপ্রিয় কোনো দল যদি হইচই করে আমরা হতাশ হয়ে পড়ব। ভাবব আবারও কি সেই ক্ষমতালিপ্সা চুরিচামারি পাচারকাণ্ড শুরু হবে। রক্তের ওপর সাঁতার কেটে জাতিকে আজকের এ জায়গায় আসতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার অসীম সাহস আত্মত্যাগ রক্তের বিনিময়ে আর কোনো দল অন্ধকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আমি লেখা শুরু করেছিলাম তারেক রহমানের সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। শুভার্থীদের টেলিফোনে থামাতে হলো। এ বিষয়ে পরে লেখা যাবে। এখন পাঠকদের চাহিদায় কলম ফিরালাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অন্তত তিন থেকে চার বছর হওয়া উচিত। সংস্কারের জন্য আরও বেশি সময় দরকার হলে তাও দিতে হবে। রাজনৈতিক দল গঠিত হয় নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের জন্য। সে জন্য ক্ষমতায় যাওয়া দরকার। তবে তাড়াহুড়া করলে চলবে না।
যারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বর্ণালি সুযোগ দেখছে, পুনর্গঠনের পর দেশ চালাতে তাদের জন্য আরও ভালো হবে। ক্ষমতার মরণ নেশা দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে পাগলা ঘোড়ার মতো তাড়িয়ে বেড়িয়েছে এতকাল। মাঝখানে আমজনতা নিষ্পেষিত হয়েছে জীবনের সর্বক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ হোমরা-চোমরা দেখলাম শাড়ি ব্লাউজ বোরকা পিন্দে ক্যান্টনমেন্টে প্রাণ রক্ষার আবেদন করে গুপ্ত স্থানে মুখে কুলুপ এঁটে প্রাণ রক্ষার আনন্দে আছে জনরোষ থেকে বাঁচতে পেরে।
বঙ্গ ভাগনে নিয়মিত ছন্দহীন বুলেটিন বাজিয়ে হাসির খোরাক জোগাচ্ছে। চারদিকের হাবভাব হাঁকডাক দেখে মনে হচ্ছে বিএনপি ক্ষমতার স্টিয়ারিং ধরতে অস্থির হয়ে উঠছে। তাদের অস্থিরতা যেন আমাদের অর্জন পণ্ড না করে। সুশাসনের কাঠামোর ওপর রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দাঁড় করাতে সরকারকে সময় দিতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে সব নাগরিকদের। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে।
মনে রাখতে হবে ছাত্রদের থলিতে সততা আছে, দক্ষতা অভিজ্ঞতা নেই। সরকারের সঙ্গে ছায়ার মতো কাজ করলে রাজনৈতিক দল ও তাদের জনপ্রিয়তা পালে বাতাস পাবে। ব্যত্যয় করলে বিপর্যয় নেমে আসবে। বিএনপির যথাযথ মুখপাত্র ছাড়া পাতি নেতারা আবোল-তাবোল বললে দলের জনপ্রিয়তা ধস নামবে। ক্ষমতায় আসার জন্য এত অস্থির যারা তারা রাজনীতিক না, তারা ধান্দাবাজ।
জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামী দলগুলো এ মুহূর্তে দেশের সর্ব সাধারণের চাহিদা বুঝে পা ফেলছে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। খাই খাই দলের গুন্ডাদের গ্রামগঞ্জ দখলের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলছে। তাদের নামে কোনো দখল ভাঙচুরের মারধরের অভিযোগ নেই। তাদের শৃঙ্খলাবোধ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা প্রমাণ করছে পতিত হাসিনার অপপ্রচার সত্ত্বেও এ দেশ তাদের কাছে নিরাপদ থাকবে।
ওদিকে বঙ্গ ভাগনে জয় বসে নেই, নিয়মিত বিরতিতে খোয়াব দেখে অন্তঃসারশূন্য আওয়াজে কাফি শুনাচ্ছেন। দলবল রাজনীতি ফেলে তার জননী ভারতবন্ধু নিজ বোনকে জলদি সঙ্গে নিয়ে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। দলের কর্মীদের জাহান্নামের আগুনে ফেলে দিব্যি পুরান বাড়িতে আদরে আছেন। এত বড় স্বার্থপর মানবী কী করে মস্তবড় দলের মস্তক ছিলেন গবেষণার বিষয়। এক প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে টেলিফোনে বলে, মেজরজীবনে আওয়ামী লীগের অফিসেও যাব না, দল করা তো দূরের কথা। নিজের বোনের কল্যাণ বোঝেন, দেশের কোটি কোটি কর্মীর কথা ভাবল না এখন কর্মীদের ঘাড়ে মামলা চাপবে। নেতা-নেত্রীর অপকর্মের খেসারত তাদের দিতে হবে। রাজনীতিকে কলঙ্কিত করে গেলেন হাসু আপা।
হামলা মামলায় আজ দলের সবাই গা-ঢাকা দিচ্ছে সামনে আসল কেয়ামত। সরকার ঠিকমতো গুছিয়ে বসার পর শুরু হবে আসল ধরপাকড়। জয় সাহেব বলছেন তিন মাসের মধ্যে ভারত নির্বাচন করিয়ে দেবে, এমন দিবা খোয়াব দেখছেন ওয়াশিংটনের নিজ বাসভবনে নিদ্রার ভিতর। সবাই পলাতক তাই তিনি দলের লাউড স্পিকারের কাজ করছেন। কী হাউস তিন মাসের ভিতর নির্বাচন। এ ব্যাপারে সে নাকি তার নতুন বন্ধুদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করছে। বিএনপিও দ্রুত নির্বাচন চায়। তারা ফসল ঘরে তুলতে চায়, অনেক দিন বুভুক্ষ। ভাগনে আপনি কোন বিবেচনায় তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাইলেন, তাতে আপনার কী ফায়দা, মাথা ঠিক আছে নাকি বেসামাল কথা বলছেন। অনেকে বলেন, শারাবন তহুরার বদৌলতে নাকি অনেকে চৌথা আসমানে বিচরণের স্বপ্ন দেখেন।
বিএনপি কোনোভাবে এ সরকারকে চাপ দিলে পরিণতিতে তাদের অমঙ্গল হবে, দেশীয় আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক গুটি চালাচালি দেখলেই তা অনুভব করা যায়। সংস্কার না হলে যেই লাউ সেই কদু আবার ক্ষমতায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে, সংবিধান সংশোধন করতে হবে, অনেক প্রতিষ্ঠানের ওভারহোলিং করতে হবে, যে জন্য অবশ্যই সময় দরকার।
বিএনপির এক ছোকরা নেতা ড. ইউনূসকে সরে যেতে বলেছে, যতবড় মুখ না ততবড় কথা। জনতার চাহিদার বিপরীতে আওয়াজ দিলে কেউ তা মেনে নেবে না। লুটপাট দখল হাঙ্গামা মারামারি প্রতিশোধের অপকর্ম থেকে সরে না এলে রঙিন স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। অর্বাচীন যারা তারা এ দলের নামে যাইতাই বলছে। তাদের প্রতিহত করা বিএনপির বোদ্ধানেতাদের দায়িত্ব¡, মানুষ তিক্ত এখন, এসব দেখলে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে রাস্তায় নামবে, সাবধান দেশের শান্তি বিনষ্ট থেকে দূরে থাকুন। সবরকারীর সঙ্গে আল্লাহ থাকেন।
দুঃশাসনকে সুশাসন দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। অরাজকতা দিয়ে ভালো ফল আসবে না। বিএনপির ব্যক্তিপূজার মৌসুম শুরু হয়েছে। ভাইয়া ভাইয়া কলরব শুরু হয়েছে, এসব বন্ধ করুন। চামচামি চাটুকারী ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন পরিণত রাজনীতিক। তিনি অর্বাচীনদের থামাবেন- এমনটিই আশা করা যায়।
জাতির আশা অন্তর্র্বর্তী সরকার একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, গণমাধ্যম, নিরাপত্তা, রাষ্ট্রদূত, স্থানীয় সরকার সংস্কার করতে হবে।
এক লুটেরা বিদায় দিয়ে আরেক লুটেরাকে জনগণ বসাতে চায় না। শুদ্ধ পদ্ধতি শুদ্ধ নির্বাচন সফেদ লোক নির্বাচিত করতে পারে। জনবিপ্লবে হাসিনা পালিয়েছে নিজ বোনকে নিয়ে। ফেলে গেল অগণিত কর্মীকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের বিপদের মধ্যে। সব প্রতিষ্ঠানকে বেপরোয়াভাবে ধ্বংস করেছে।
ব্যাংক লুট করেছে, রাষ্ট্রের ভান্ডার তছরুপ করেছে, টাকা পাচার করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে কী- সাংঘাতিক। ভোটের নামে জাতিকে জিম্মি করে নিপীড়ন চালিয়েছে। তাঁর লাউড স্পিকার জেনারেল আজিজের বিচার করা উচিত। পৃথিবীর বুকে ভালো ভোট হয়েছে নির্লজ্জের মতো বলে। এই ভোট উপলক্ষে কত কামিয়েছেন সেই হিসাব নিতে হবে। ভোট জায়েজ করতে সামরিক অফিসারদের পরোক্ষ ঘুষের প্রচলন শুরু করে শেখ হাসিনার এ এজেন্ট।
আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে তা বুঝতে হবে। অর্বাচীনদের বলব, সাবধান হুঁশিয়ার, ফালতু কথা বন্ধ করুন। দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। জাতিকে এখন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ক্ষমতার লোভী হলে ক্ষমতা আসবে না। রাজনীতির গ্রামার মেনে চলতে হবে। বাহু ঝাঁকুনি ক্ষমতার উত্তাপের বহিঃপ্রকাশের অনুশীলন বন্ধ করুন। ক্ষমতা অতি মাত্রায় দেখানো, অপব্যবহার প্রতিক্রিয়ায় হাসিনা পালিয়েছে, আর কারোর পরিণাম এমন হওয়া উচিত নয়। আদ্যোপান্ত সংস্কার করতে, সুশাসন ফিরিয়ে আনতে সময় দিতেই হবে।
আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাতটা করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের ওপর। পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের নামে। এরপর আঘাত আসে ইসলামী দলগুলোর ওপর। তারপর বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। এ কথা সত্য আলেম-ওলামাদের ওপর আক্রমণ করেছে, জুলুম করেছে, তাদের নির্যাতন করা হয়েছে।
ছাত্ররা দেশকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করেছে। তাদের সঙ্গী হয়েছে পুরো জাতি। আওয়ামী লীগ সরকারের এসব কর্মে অন্য সব দলের জন্য শিক্ষা নিহিত রয়েছে। বেশি ফাল মাইরেন না, লম্পঝম্প আস্তে করুন, দেশ তেতে আছে, ঠান্ডা করুন। আপনাদের দেশের মানুষ চেনে। বেগম খালেদা জিয়া ক্লিনহার্ট অভিযান কাদের কর্মে বিরক্ত হয়ে পরিচালনা করেছিলেন জাতি জানেন। অন্যায় আশা করি স্থান পাবে না তাদের দলে। জুলাই আগস্টে যা হলো এটি একটি গণবিপ্লব। ’৬৯ এবং ’৯০-এ যেটা হয়েছে সেটা ছিল গণঅভ্যুত্থান। এবারের গণবিপ্লবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষই অংশ নিয়েছে। এ আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। চূড়ান্ত হিসাব এখনো হয়নি আরও বাড়বে। আর কত মানুষ পঙ্গু হয়েছেন তার কোনো হিসাবই নেই। শেখ হাসিনা বলেছিলেন তিনি পালাবেন না। বঙ্গবন্ধুর কন্যা পালায় না। তিনি ঠিকই পালিয়েছেন। তবে দেশ এবং জাতির অনেক ক্ষতি করার পর। এখনো তিনি বিদেশ থেকে ষড়যন্ত্র করছেন বলে মনে হচ্ছে। বিএনপি সংযম দেখাতে পারলে, ধৈর্যশীল থাকলে সামনে তারা সরকার গঠনের সুযোগ পাবে মনে হচ্ছে। বিএনপির বিরোধী দল ভবিষ্যতে জামায়াত হয়ে উঠবে বলে মনে করি। আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনা-রেহানা হাত ধরাধরি করে পালিয়ে বিপদে রেখে গেছে।
দেশের সংবেদনশীল সময় এখন, সব রাজনৈতিক দলের এ সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা উচিত। দেশ থাকলে সরকার হবে মন্ত্রী হবে দল থাকবে। এ নাজুক সময় গণমাধ্যমের বড় ভূমিকা রাখা উচিত। ভারত মনগড়া হিন্দুদের ওপর হামলার সংবাদ প্রচার করছে। তাদের মিডিয়া হিন্দুদের উসকে দিচ্ছে, এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের মিডিয়ার বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা উচিত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে। দেশটা আমাদের, ভালো-মন্দ সব আমাদের আক্রান্ত করবে। দেশপ্রেমিক মানুষের এখন এ সরকারের পাশে দাঁড়াতে হবে, গণতান্ত্রিক শাসনবাবস্থা কাঠামো তৈরি করতে আমরাও আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে উঠব। ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে ওঠে নৈতিকতার রাজনীতি শুরু হোক, দেশ হোক সমৃদ্ধি।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক