রাজধানী ঢাকা মহানগরীর নাগরিকদের দুর্ভাগ্য যে, নগরপিতাদের একজন পালিয়ে যান সরকার পতনের আগেই। অন্যজন পতন নিশ্চিত দেখে লুকিয়ে পড়েন। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আত্মগোপনে রয়েছেন অধিকাংশ কাউন্সিলরও। উত্তরে ৫৪ এর মধ্যে ৪৮ এবং দক্ষিণে ৭৫ এর মধ্যে ৬৬ জন কাউন্সিলর পলাতক। ওয়ার্ড সচিবদের পরিসংখ্যানও প্রায় একই রকম। অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মেয়রদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ করলেও কাউন্সিলরদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। স্বভাবতই হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনের নৈমিত্তিক কাজে। মশক নিধন থেকে শুরু করে ১৪ ধরনের সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন, নাগরিক, ওয়ারিশ, আয়, অবিবাহিত, দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ না হওয়া, পারিবারিক সদস্য, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার সত্যায়িত সনদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা যাচাইসহ ১৪ রকম নাগরিক সেবার জন্য কাউন্সিলরের স্বাক্ষর লাগে। মহানাগরিকদের চারিত্রিক সনদও দেন এই ‘ভালো মানুষেরা’! জুলাই বিপ্লবে বদলে যাওয়া দৃশ্যপটে তারা গা-ঢাকা দেওয়ায় প্রায় সব সেবা বন্ধ রয়েছে। মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজের তদারকিসহ টিসিবির পণ্য বিতরণ কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। অত্যাবশ্যক সব নাগরিক সেবাই বিঘিœত। অনেক এলাকায় মশার উপদ্রবে বসবাস দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমে এটা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। অস্বস্তিকর এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এরকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সংকটের আপাত সমাধান হিসেবে সব নাগরিক সেবা সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ন্যস্ত করা যেতে পারে। তাহলে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ জরুরি সেবাগুলো চালু থাকে। নাগরিকদের বঞ্চিত হতে হয় না। কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন- আশা করেন মহানগরবাসী।