অনেক সময় জায়গা-জমি বা টাকা-পয়সা নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হয়। সেই বিবাদ মীমাংসার জন্য অনেক সময় থানা-পুলিশ ও কোর্ট হাকিমের সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু সেখানে দলিল-প্রমাণ ও সাক্ষী-সবুত ছাড়া মীমাংসা হয় না। নিজের হক হলেও তা হাকিমের কাছে দলিল বা সাক্ষী দ্বারা প্রমাণ করতে না পারলে ব্যাহত সে হক তার থাকে না। দলিল বা সাক্ষী ছাড়া ভিতরের খবর কে বলতে পারে?
হাকিম বা বিচারক তো আর গায়েবের খবর জানেন না। তিনি বাহ্যিক দলিল, সাক্ষী দ্বারা বিচার করে দেন। কিন্তু অনেক সময় সে বিচার দৃষ্টিতে সঠিক হলেও বাহ্যিক দৃষ্টিতে বেঠিক হয়। হকদার দলিল বা সাক্ষী উপস্থিত করতে না পেরে নিজের হক থেকে বঞ্চিত হয়। অবশ্য সে হক কিয়ামতে তার জন্য সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু প্রতিবাদী জেনেশুনে যদি বাদীর হক ওই ফায়সালা অনুযায়ী গ্রহণ করে, তাহলে তা বিচারকের দেওয়া ফায়সালা বলে তার জন্য ওই মাল হালাল হয়ে যাবে না। ব্যাহত, বিচারকের ফায়সালা পরের মালকে হালাল করতে পারে না।
এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আর তোমরা আমার নিকট বিচার নিয়ে এসেছ। সম্ভবত তোমাদের কেউ কেউ একে অন্যের চেয়ে দলিল ও প্রমাণ পেশকরণে অধিক পারদর্শী। ফলে আমি তার নিকট থেকে আমার শোনা মতে তার স্বপক্ষে ফয়সালা দিয়ে তার ভাইয়ের কিছু হক তাকে দিয়ে দিই, তাহলে সে যেন তার কিছুই গ্রহণ না করে। যেহেতু আমি তো (এ অবস্থায়) তার জন্য (জাহান্নামের) আগুনের একটি অংশ কেটে দিই।”
আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের কসম দ্বারা কোনো মুসলিমের অধিকার হরণ করে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ দোজখ ওয়াজিব এবং বেহেশত হারাম করে দেন। লোকেরা বলল, যদিও সামান্য কিছু হয় তাও, হে আল্লাহর রসুল! বললেন, যদিও বা পিল্লু গাছের একটি ডালও হয়। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি এমন জিনিস দাবি করে, যা তার নয়, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়। আর সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।
প্রকাশ থাকে, ইসলামে যার হক নেই, সেই হক যদি কোনো তাগুতি সরকারও দিয়ে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই নাহক। ইসলাম কারও হক নষ্ট করেনি। ইসলামের ভাগ-বণ্টনের সম্পূর্ণটাই ইনসাফ। যেহেতু মহান সৃষ্টিকর্তা কারও প্রতি জুুলুম করেন না (সুরা ইউনুস ৪৪)।
এখন যদি কোনো মুসলিম তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে প্রচলিত আইনের বলে নিজের নাহক অধিকার আদায় করে, তাহলে তা তার হারাম খাওয়া হবে।
কিছু মানুষ আছে, যারা অর্থ উপার্জন করতে চায় না। এরা পরের জিনিসে লোভ করে তার চোখের আড়ালে অজান্তে সেই হিফাজতে রাখা জিনিস নিয়ে চম্পট দেয়। লোকের মেহনত বলে কামানো জিনিসে তাদের চোখ যায় এবং তা চুরি করে নিজের পেট চালায় ও বিলাসিতা করে। এমনকী সংসারের ছোটখাটো জিনিস চুরি করার ফলে ছিঁচকে চোরও চৌর্যবৃত্তিতে পাকা হয়ে যায়।
এই শ্রেণির অপরাধী যখন অপরাধ করে, তখন সে মুমিন থাকে না, অর্থাৎ ইমান থেকে খারিজ হয়ে যায়। আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, কোনো ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে, তখন মুমিন থাকা অবস্থায় সে চুরি করতে পারে না এবং কোনো মদ্যপায়ী যখন মদ্যপান করে তখন মুমিন থাকা অবস্থায় সে মদ্যপান করতে পারে না।
আর যে মক্কায় হাজিদের জিনিসপত্র চুরি করে এমন এক চোরের জন্য মহানবী (সা.) বলেছেন, এমনকী (সূর্য গ্রহণের নামাজ পড়ার সময়) জাহান্নামে আমি এক মাথা বাঁকানো লাঠি ওয়ালাকেও দেখলাম, সে তার নাড়িভুঁড়ি টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যে তার ওই লাঠি দিয়ে হাজিদের সামান চুরি করত। লাঠির ওই বাঁক দিয়ে সামান টেনে নিত। অতঃপর কেউ তা টের পেলে বলত, আমার লাঠিতে আপনা-আপনিই ফেঁসে গেছে, আর কেউ টের না পেলে সামানটি নিয়ে চলে যেত। চুরির জগতে চুরির নানা ধরন রয়েছে :
ডাক বিভাগের কোনো কর্মচারী বা অন্য কারও চেক বা ড্রাফট চুরি। অর্থ ব্যয় করে যাদের রক্ষক বানানো হয়, তারাই ভক্ষক হয়ে জনসাধারণের মাল চুরি করে। সরকারি বিদ্যুৎ চুরি। মাল সরকারের হলেও তা এক প্রকার চুরি।
যা অর্থের বিনিময়ে পাওয়া যায়, তা লুকিয়ে বিনা পয়সায় ব্যবহার করা চুরি নয় তো কী?
তদনুরূপ টেলিফোনের লাইন চুরি। লাইন চুরি করে ব্যবহার করা এবং বিল দিতে ফাঁকি দেওয়া, অথবা বিল অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া, অথবা চুরির লাইনে অর্থ কামানো ইত্যাদি সবই হারাম।
লাইব্রেরি থেকে গোপনে বই নেওয়া অথবা বই পড়তে নিয়ে ফেরত না দেওয়াও এক প্রকার চুরি। দোকানে মাল কিনতে ঢুকে কোনো প্রকার কিছু মাল গোপনে রাখা অথবা হিসাবের বাইরে রাখাও চুরি ছাড়া আর কী?
♦ লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক