রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি। মূল সড়কে অনুমোদনহীন যান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে যানজট। ভোগান্তিতে পড়ছেন চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিত্যযাত্রীরা। দেখা যায়, বিভিন্ন মোড় ও ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তাদের তোয়াক্কা করছেন না অনেকেই। নিয়ম না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। অন্যদিকে ফিটনেসহীন যানবাহনের চলাচল বেড়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশাও চলছে প্রধান সড়কে। এ ছাড়া দিনে চলাচল নিষিদ্ধ ভারী যানবাহনও চলছে দিনেদুপুরে। সব মিলিয়ে মহা হযবরল অবস্থা। এতে যানজটের ভোগান্তি দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, কদিন দায়িত্ব পালনে বিরত ছিল ট্রাফিক পুলিশ। তখন শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কাজে ফেরে ট্রাফিক পুলিশ। তারপরও খেয়াল-খুশিমতো চলছে গাড়ি। বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা। ফ্লাইওভারগুলোতে পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানগাড়ি চলছে। প্রধান সড়কে কালো ধোঁয়া ছেড়ে পরিবেশ দূষণ করে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। মোড়ে মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় জটলা মোটরসাইকেল চালকদের। তারা উঠে যাচ্ছেন ফুটপাতে। বাসচালকরা যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠা-নামানোর ঝুঁকিপূর্ণ কাজটা করেই যাচ্ছেন। বিপজ্জনক গতিতে লাগাতার হর্ন বাজিয়ে ওভারটেকিং করছেন। শহরজুড়ে এ চরম বিশৃঙ্খলায় যাত্রীরা স্বভাবতই মহাবিরক্ত। অথচ ট্রাফিক পুলিশ এখনো যথাযথ নৈতিক ও পেশাদারি দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। রাতে অনেক স্থানে তাদের দেখাই মেলে না। ট্রাফিক পুলিশের এই ঝিমিয়েপড়া ভাবটা কাটানো জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের যে বিপুল কাজ চলছে দেশজুড়ে, তার ছোঁয়া লাগাতে হবে সড়ক এবং ট্রাফিক বিভাগেও। এ ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রবর্তনে জোর দেওয়া দরকার। সড়কে বিশৃঙ্খলায় দুর্ঘটনাজনিত প্রাণহানি ছাড়াও যানজটে অসংখ্য কর্মজীবীর কর্মকালের অপচয় হয়- যার প্রভাব পড়ে ব্যক্তি থেকে সমষ্টির অর্থনীতিতে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থী ও রোগীদের; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরুক, জনসাধারণের নিরাপদে, যৌক্তিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানো নিশ্চিত হোক। কর্তৃপক্ষ এর অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে পদক্ষেপ নেবেন- প্রত্যাশা সবার।