সদাচরণের প্রতীক ছিলেন রসুল (সা.)। তাঁর মতো সদালাপী কেউ ছিল না। সহিষ্ণুতার প্রতিবিম্ব ছিলেন তিনি। ছিলেন মানবকুলের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর দিনরাত রসুল (সা.)-এর খেদমত করেছি, কিন্তু তিনি কখনো আমাকে প্রহার করেননি, ধমক দেননি, কোনো দিন বলেননি কেন তুমি এ কাজ করেছ আর কেন এটি করনি।’ (বুখারি) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) কখনো অশ্লীল কথা বলতেন না, অশোভন কিছু করতেন না, তিনি বলতেন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেই ব্যক্তি, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (বুখারি) আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মোমিন বান্দা সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রোজাদার ও নামাজির মর্যাদা অর্জন করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেয়ামতের দিবসে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে তারা যারা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। আর সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও কেয়ামত দিবসে আমার থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী হবে তারা যারা তোমাদের মধ্যে বাচাল, দাম্ভিক, অহংকারী ও হিংসুটে। আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ইমানের দিক থেকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মোমিন সে যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং পরিবার-পরিজনের প্রতি অধিক হৃদ্যতাসম্পন্ন। (তিরমিজি) নবুয়তের আগে-পরে উভয় সময়ে রসুল (সা.) ছিলেন নিজ মাতৃভূমি মক্কাসহ গোটা আরবে সবচেয়ে সত্যবাদী বলে পরিচিত। এ কারণেই প্রথমবার যখন ওহি অবতীর্ণ হয় এবং হজরত খাদিজা (রা.)-কে তিনি বলছিলেন, নিজেকে নিয়ে ভয় হচ্ছে আমার। খাদিজা (রা.) তাঁকে বললেন, আপনি পেরেশান হবেন না বরং আপনি নিশ্চিন্ত ও শান্ত থাকুন। আল্লাহর কসম তিনি কখনো আপনাকে অপদস্থ করবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়তা বজায় রাখেন, সব সময় সত্য কথা বলেন, দুর্বলের বোঝা বহন করেন, অসহায়ের জীবিকার ব্যবস্থা করেন ও বিপদগ্রস্তদের যথাযথ সাহায্য করেন। (বুখারি) মক্কার লোকেরা নবীজিকে পাগল, জাদুকর ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে আঘাত দিলেও কখনো তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেনি। তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাঁর আনীত দীনকে, কিন্তু তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেনি। কুরাইশ নেতা উমাইয়া বদরের যুদ্ধে নিহত হবে, নবীজির মুখ থেকে এ কথা শোনার পর সে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যায় এবং বলতে থাকে, মুহাম্মদের কথা অবশ্যই সত্য হবে, সে কখনো মিথ্যা বলে না। এমনিভাবে মক্কায় সর্বাধিক বিশ্বস্ত বলেও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিলেন। এমনকি ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পরও মক্কার কুরাইশরা তাঁকে বিশ্বস্ত বলে আখ্যা দিয়েছিল। ঠিক তেমনিভাবে নবীজির লজ্জাশীলতা এমন ছিল- হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, পর্দার আড়ালে থাকা কুমারী নারীর চেয়েও নবীজি অধিক লজ্জাশীল ছিলেন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক