শ্রমিকের ঐতিহাসিক অবদানের ফলেই বিশ্ব অর্থনীতি চাঙা হয়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপি সব সময় শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান ও শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে আপসহীন সংগ্রাম করে গেছে। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় এবং তা রক্ষায় ও প্রতিশ্রুতি পালনে কখনই পিছপা হয়নি দলটি। শ্রমিকদের কল্যাণে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার নীতিতে বিশ্বাসী শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল। সরকারে থাকতে বিএনপি এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে। শ্রম আইন সংস্কার ও আধুনিকীকরণ, বেতন ও মজুরি কমিশন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও তাদের বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের সন্তানদের চিকিৎসা ও তাদের লেখাপড়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের শ্রমিক সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রয়োগ করেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেকে সব সময় একজন শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। শ্রমিকদের দুটো হাতকে তিনি উন্নয়নের চাবিকাঠি ভাবতেন। এ দেশের শ্রমজীবী ও পরিশ্রমী মানুষের কল্যাণে তিনি যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে উপস্থাপিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার ২৩ নম্বর দফায় কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। একটি সেমিনারে তারেক রহমান বলেছেন, দেশের প্রায় ৩ কোটি নারী-পুরুষ বেকার রয়েছে। এত মানুষকে বেকার রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। তাই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। সেটি সরকারি ও বেসরকারিভাবে হতে পারে। বিশেষ কোনো প্রকল্পে কর্মসংস্থান তৈরি, উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে হতে পারে। এতে করেই বোঝা যায়, দেশের কর্মসংস্থান ও শ্রমিকদের নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করেন। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ জাতীয় শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন করে। এই কনভেনশনের সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস লিখিত বক্তব্যে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। শ্রমিকদের কল্যাণে যা যুগোপযোগী।
প্রস্তাবনা হলো- ১. আজকের শ্রমিক কনভেনশনের লক্ষ্য সব ধরনের শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাদের বেতন-ভাতা, ছুটিসহ অন্যান্য মৌলিক দাবি পূরণ করা। শ্রমিকদের সামগ্রিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ২. শ্রম আইন সংশোধন ও যুগোপযোগী করা। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল, শ্রম আইন ২০১৮ আগামীতে বাতিল করা হবে। ভবিষ্যতে শ্রমিকদের মতামতের প্রাধান্য থাকবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে থাকবে শ্রমিকদের অংশীদারত্ব। ৩. ভবিষ্যতে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য মালিক-শ্রমিক এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে, গঠন করা হবে বিশেষ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল। ৪. শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করা হবে। সেজন্য তৈরি করা হবে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, সড়ক পরিবহন অথবা সেন্ট্রাল ফান্ডকেন্দ্রিক একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো। ৫. শ্রমজীবী অন্তঃসত্ত্বা নারী, অসুস্থ শ্রমিক, দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক এবং বেকার শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মাতৃকালীন সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা হবে। ৬. প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য আলাদা রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেওয়া হবে, নিশ্চিত করা হবে আলাদা আইডি কার্ড। এটা তাদের হেলথ ও রেশন কার্ড হিসেবে কাজ করবে। ৭. অপ্রচলিত খাতের শ্রমিকদের প্রচলিত খাতের শ্রমিকদের মতো আনুপাতিক হারে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। ৮. অসংগঠিত, অনিবন্ধিত শ্রমিক-কর্মচারীদের সংগঠিত এবং চিহ্নিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। শ্রম দপ্তর থেকে দেওয়া হবে রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। ৯. প্রত্যেক রেজিস্টার্ড শ্রমিকের কাজের ব্যবস্থা করা হবে। কাজের সংস্থান না হওয়া পর্যন্ত ন্যূনতম হারে হলেও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে সম্মানজনক ভাতা দেওয়া হবে। ১০. ডিউটিরত অবস্থায় কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন ভাতা দেওয়া হবে। পরিবারে কর্মক্ষম কেউ থাকলে তাকে ওই স্থানে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। ১১. শ্রমিকদের মধ্য থেকে, শ্রমিকদের মতামতের ভিত্তিতে, খাত ও ধরনভিত্তিক শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। ১২. সভা-সেমিনারসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন করে তোলা হবে। ১৩. শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক ইস্যুতে শ্রমিকদের ছেলেমেয়েকে বিশেষ অধিকার দেওয়া হবে কিংবা এ সংক্রান্ত ভাতা দেওয়া হবে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য