ব্যবসায়ীদের হয়রানি

দেশের ব্যবসায়ীরা শুল্কসংক্রান্ত হাজারটা সমস্যায় পড়েন নিত্যদিন। যাঁরা দেশের অর্থনীতির পুষ্টি জোগাতে কাজ করেন, বিপুল বিনিয়োগে শিল্পকারখানা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানেও ভূমিকা রাখেন-তাঁদের ওপরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যত দৌরাত্ম্য। এ নিয়ে আবেদননিবেদন, আলোচনা-বৈঠক, বিবেচনার আশ্বাস ইত্যাদির পরও দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, বলার সুযোগ নেই। এই যখন বাস্তবতা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আশার বাণী শোনালেন। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা যদি হয়রানির শিকার হন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি স্বীকার করেন যে আইনে অনেক কিছু থাকলেও, প্রয়োজনে এনবিআর সেগুলোর ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব শুনতে চান না। কাস্টম হাউসে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। অনেক সময় তারা অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে। এনবিআর এই অত্যাচার থেকে বের হতে চায়। এনবিআর চেয়ারম্যানের এই পর্যবেক্ষণ, আত্মসমালোচনা এবং উপলব্ধি ব্যবসায়ী সমাজের জন্য উদ্দীপনামূলক। তিনি বলেন, তাঁরা ব্যবসাবাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ব্যবসায়ীদের প্রতি কোনো পর্যায়েই হয়রানি সহ্য না করার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেন। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে  কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। কর্মকর্তাদের প্রতিও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ব্যবসায়ীরা গণহারে দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ব্যাংকিং খাতের অসহায়তা, ডলারসংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিজনিত সমস্যাগুলোয় ভোগেন। শুল্ক খাত এসবের একটি। দুর্মুখেরা বলেন, ‘সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব করের একটা  মোটা অঙ্কই চলে যায় এনবিআরের অসৎ কর্মচারীদের পকেটে। এ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পদসম্পত্তির হিসাব নিলেই তা প্রমাণিত হবে।’ দুর্মুখদের অভিযোগ শতভাগ সত্যি না হলেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যখন এনবিআর চেয়ারম্যান নিজেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা শুনতে চায় না।’ রাষ্ট্রের আইন না শোনার, না মানার কোনো অবকাশ নেই প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর। সে কঠোর বার্তাই দিলেন চেয়ারম্যান। তাঁর সদিচ্ছা বাস্তবায়িত হোক। ব্যবসায়ীবান্ধব ভূমিকা পালন করুক এনবিআর।