মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা। আল্লাহ ছাড়া আর কারও কোনো কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা নেই। কোনো কিছু বিলীন করার ক্ষমতাও কারও নেই। আল্লাহ যখন বলেন (কুন), তা হয়ে যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহর নির্দেশনায় সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে। আর কারও সে ক্ষমতা নেই। মানুষ পারে শুধু রূপান্তর করতে। আল কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, আল্লাহই প্রতিটি বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সব সৃষ্ট জীবের রব। রাব্বুল আলামিন আল্লাহ প্রতিটি সৃষ্ট জীবের চাহিদা অনুযায়ী রিজিক সরবরাহ করেন। আল কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, দুনিয়ায় যত জীব রয়েছে তাদের রিজিক আল্লাহর জিম্মায়। তিনি তাদের অবস্থান ও প্রস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত, প্রতিটি বস্তুই লিপিবদ্ধ রয়েছে সুস্পষ্ট গ্রন্থে।
আল্লাহ রহমান ও রহিম, তিনি অতি দয়ালু ও পরম মমতাময়। তার দয়া-মায়া-মমতার কোনো শেষ নেই। তিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে অতি দয়ার সঙ্গে লালনপালন করেন। প্রতিটি প্রাণীর রিজিক প্রদান করেন। আল্লাহ নিজের মাঝে ধারণ করেন সৃষ্ট জীবের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা এবং মমত্ববোধ। যা দ্বারা তিনি তাঁর সৃষ্টিকে প্রতিপালন করেন। আল কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, সব স্তুতি-প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য; যিনি রহমানুর রহিম, পরম দয়ালু ও অনন্য মমতাময়। তাঁর রহমতের বারিধারা অঝরে বর্ষিত হয়। প্রত্যেকে তা অনুভব করে। তাই আল্লাহ ইরশাদ করেন, তিনি পরম দয়ালু তাঁর সম্পর্কে জ্ঞাতদের জিজ্ঞাসা করুন (সুরা ফুরকান : ৫৯)।
আল্লাহ দয়ালু ও মেহেরবান। তিনি নিজে যেহেতু এই গুণ ধারণ করেন যেহেতু তিনি দয়াকারীকে পছন্দ করেন। তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়া করলে খুশি হন। দয়াকারীর প্রতি আল্লাহ বেশি বেশি দয়া করেন। যারা দয়ালু তাদের প্রতি স্বয়ং রহমান দয়া করেন। সুতরাং দুনিয়াবাসীর প্রতি তোমরা দয়া কর, তবেই আসমানবাসী তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। (আবু দাউদ)। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় অন্য মানুষের প্রতি দয়া ও সদাচরণের মাধ্যমে। দয়ার অন্য নাম সদাচরণ, যাকে আরবিতে হুসনুল খুলক বা খুলুকুল আজিম বলে। সদাচরণ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় আমল। ফরজ ইবাদতের পর সর্বোৎকৃষ্ট কাজ হলো সদাচরণ। তাই সদাচরণকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে যেমন প্রিয় হন, তেমনি মানুষের কাছেও প্রিয়। আর এ কারণে প্রিয় নবী (সা.) একটি হাদিসে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মুমিন বান্দা তার সদাচরণের মাধ্যমে রোজাদার ও রাত জেগে ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভ করেন। (আবু দাউদ)।
সদাচরণ কেবল যে উত্তম আমল তাই নয়, বরং একে পূর্ণ ইমানের পরিচয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। একটি হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, সবচেয়ে পরিপূর্ণ ইমানদারদের অন্তর্ভুক্ত ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো এবং যে আপন পরিবারপরিজনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নম্র আচরণকারী।
সদাচরণে রয়েছে সীমাহীন নেকি। যে কারণে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাচরণে উৎসাহিত করেছেন। সদাচরণ নেকির পাল্লা ভারী করে দেয়। একটি হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মুমিনের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে বেশি ভারী কোনো জিনিস থাকবে না। (আবু দাউদ)।
সদাচরণের মাধ্যমে রসুল (সা.)-এর প্রিয় পাত্র হওয়া যায়। সদাচরণের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকটবর্তী স্থানে বসার সৌভাগ্য লাভ হবে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের সবার মধ্যে আমার কাছে অধিক প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী স্থানে বসার সুযোগ লাভ করবে ওই সব লোক, যারা তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম চরিত্রের অধিকারী। (তিরমিজি)।
আর এ কারণে রসুল (সা.) সাহাবিদের সদাচারী ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, হে মুয়াজ! মানুষের জন্য তোমার চরিত্র সুন্দর কর (মুয়াত্তা)।
সদাচরণ থেকে সৃষ্টির সেবার মনোভাব গঠিত হয়। তাই আল্লাহতায়ালা সদাচরণকারী ও সৃষ্টির সেবাকারীদের জন্য আপন মহব্বত, মাগফিরাত ও জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আর তোমরা আপন রবের ক্ষমার দিকে দ্রুত অগ্রসর হও এবং ওই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমানজমিনের প্রশস্ততার সমতুল্য। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকি ও আল্লাহভীতদের জন্য। যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতায় নেক কাজে সম্পদ খরচ করে, রাগ হজম করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, আল্লাহ এ ধরনের উত্তম সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের ভালোবাসেন (সুরা আলে ইমরান : ১৩৩-১৩৪)।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক কর না। আর তোমরা পিতামাতার সঙ্গে সদাচার কর এবং আরও সদাচার কর আত্মীয়স্বজন, এতিমমিসকিন, পাড়াপ্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার কর তোমাদের অধীন ব্যক্তিদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপছন্দ করেন- যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অহংকার করে (সুরা নিসা : ৩৬)। সৃষ্ট জীবের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি প্রদান করা যায়। সৃষ্টির সেবাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। তার জন্য আল্লাহর সাহায্য নিশ্চিত হয়। সৃষ্ট জীবের যে কোনো ধরনের সেবা প্রদান আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয় আমল।
লেখক : ইসলামিক গবেষক