রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
শিক্ষকের কথা

সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার মান বাড়েনি

বগুড়ার একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান \'বগুড়া পুলিশ লাইন্স হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ\'। এসএসসি ও এইচএসসিসহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন শাহাদৎ আলম ঝুনু। শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান সৃজনশীল পদ্ধতি, ভালো ছাত্রের গুণাবলী কি হওয়া উচিত, ইংরেজি দুর্বলতা দূরীকরণে রণীয়সহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি সম্প্রতি কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বগুড়া প্রতিনিধি- আবদুর রহমান টুলু

সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার মান বাড়েনি

প্রশ্ন : একজন ভালো ছাত্রের কি কি গুণাবলি থাকা উচিত?

উত্তর : একজন ভালো শিক্ষার্থীর যে সব গুণাবলি থাকা উচিত তা হলো নিয়মিত ক্লাস করা, ক্লাসের পড়া নিয়মিত তৈরি করা, সত্য কথা বলা, বড়দের বা শিক্ষকদের মান্য করা, নিয়মানুবর্তী ও সময়ানুবর্তী হওয়া। তাছাড়া তাদেরকে ভালো চারিত্রিক গুণাবলি সম্পন্ন হতে হবে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে এবং নিয়মিত খেলাধুলা করতে হবে।

প্রশ্ন : ভালো ফলের জন্য পড়াশোনার নির্দিষ্ট রুটিনের গুরুত্ব কতটা? এ ক্ষেত্রে গৃহশিক্ষক বা কোচিংয়ের প্রয়োজন আছে কি?

উত্তর : ভালো ফলাফলের জন্য পড়াশোনার নির্দিষ্ট রুটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ছাত্র নিয়মিত রুটিন মাফিক পাঠ্যাভ্যাসের মাধ্যমে একটি সুন্দর ফলাফল করতে পারে। এ ক্ষেত্রে গৃহশিক্ষক বা কোচিংয়ের প্রয়োজন খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। তবে সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জানাতে পারে।

প্রশ্ন : সহশিক্ষা কার্যক্রম পড়াশোনায় কি ধরনের প্রভাব ফেলে?

উত্তর : সহশিক্ষা কার্যক্রম পড়াশোনায় অনেক প্রভাব ফেলে। তা শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি ও একগুঁয়েমি দূর করে মনকে সতেজ রাখে এবং পড়াশোনায় শক্তি যোগায়। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্যান্য বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তোলে যা পরবর্তী জীবনে তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন : তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষ পড়াশোনার ক্ষেত্রে কিভাবে সহায়ক হতে পারে?

উত্তর : জ্ঞানার্জনের বিভিন্ন ক্ষেত্র আজ উন্মুক্ত করেছে তথ্য-প্রযুক্তি। সেখান থেকে একজন শিক্ষার্থী তার প্রয়োজনীয় এবং ভালো দিকগুলো গ্রহণ করে জ্ঞানার্জনের বিষয়গুলো সহজলভ্য করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন থাকতে হবে এবং এগুলো বর্জন করতে হবে।

প্রশ্ন : সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাসের হার বেড়েছে। শিক্ষার মানবৃদ্ধি হয়েছে কি?

উত্তর : সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাসের হার বেড়েছে তা সত্য কিন্তু শিক্ষার মান মোটেই বাড়েনি। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বিমুখ হচ্ছে এবং অনুমান নির্ভর উত্তর লিখছে। মূল বইও তারা ঠিকমতো পড়ছে না। আমি মনে করি, প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি হওয়া উচিত পুরোটাই রচনামূলক যা দেশে ২৫ বছর বা তারও আগে চালু ছিল। নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতি বাদ দেওয়া উচিত।

প্রশ্ন : দেশের শিক্ষার্থীরা সাধারণভাবে ইংরেজিতে দুর্বল। তা কাটাতে করণীয় কি?

উত্তর : ইংরেজি দুর্বলতা দূরীকরণে পাঠ্য-পুস্তকগুলো ব্যাকরণ ও সাহিত্যনির্ভর হতে হবে। মূল বইগুলো যেন শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে আনন্দের সঙ্গে পাঠ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাকরণনির্ভর সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীতে বিদ্যমান গ্রামার অংশটি ৫০ নম্বরের স্থলে ১০০ নম্বর করতে হবে এবং ইংরেজি দ্রুতপঠন পুনরায় প্রবর্তনসহ ৬ষ্ঠ থেকে উচ্চতর শ্রেণীতে ৩০০ নম্বরের ইংরেজি সিলেবাস (উচ্চতর ইংরেজিসহ) প্রবর্তন করতে হবে।

প্রশ্ন : আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের ভিত্তি কি?

উত্তর : আমার প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বেশ কিছুু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, এখানে একঝাঁক অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক নিয়মিত ও যত্নের সঙ্গে পাঠদান করে থাকেন। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠক্রম শেষ করে থাকেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। তৃতীয়ত, শ্রেণীতে পাঠ্যাভ্যাস নিয়মিতকরণ। চতুর্থত, বেশি বেশি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রদান। পঞ্চমত, শৃঙ্খলা ও নিয়ম কানুনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ।

 

 

সর্বশেষ খবর