বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
শিক্ষকের কথা

নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়তে দরকার নৈতিক বোধসম্পন্ন শিক্ষক

নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়তে দরকার নৈতিক বোধসম্পন্ন শিক্ষক

এইচএসসি ছাড়াও অনার্স এবং মাস্টার্স প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে— দেশের এমন ৬৮৫টি কলেজের ওপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি একটি র‌্যাংকিংস প্রকাশ করেছে। র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিভাগের সেরা ১০টি কলেজের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির এ সাফল্যের পেছনে রহস্য কি, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক মানোন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলির বিকাশে করণীয় কি— এসব নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রেজাউল করিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি— মো. নাসির উদ্দিন।

 

প্রশ্ন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো দেশের সব কলেজের র‌্যাংকিং প্রকাশ করেছে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

অধ্যক্ষ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো দেশের সব কলেজের র‌্যাংকিং প্রকাশ করেছে। সেই র‌্যাংকিংয়ে করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ পঞ্চম স্থানে আছে জানতে পেরে অনেক খুশি হয়েছি। এ সাফল্যের জন্য শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা গর্ববোধ করছেন। এই র‌্যাংকিং পদ্ধতি কলেজগুলোর শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। ভালো ফলাফলের জন্য একদিকে যেমন প্রতিযোগিতা বাড়বে তেমনি মানসম্মত শিক্ষার প্রসার ঘটবে। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। তাই এই র‌্যাংকিং পদ্ধতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বড় ভূমিকা রাখবে।

প্রশ্ন : র‌্যাংকিংয়ে এ সফলতার পেছনে আপনার প্রতিষ্ঠানের কোন দিকগুলো ভূমিকা রেখেছে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : কলেজের শিক্ষকরা পাঠদানে আন্তরিকতা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসমুখী করার কারণে কলেজটি বারবারই ভালো ফলাফল করছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং অভিভাবকদের সহযোগিতা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও শিক্ষকদের সঠিকভাবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে সৃজনশীলতা, দক্ষতা, দায়িত্ববোধ, দেশাত্মবোধ ও নৈতিকতাবোধ জাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী করে গড়ে তোলার বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। অবিভক্ত বাংলায় করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজটি বঙ্গের আলীগড় নামে খ্যাত ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত স্বীকৃতি আবার প্রমাণ করেছে করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজটি আজও সেরা।

প্রশ্ন : বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে আপনার প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কেমন?

অধ্যক্ষ : আমাদের কলেজের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলই ঈর্ষণীয়। প্রতি বছর এইচএসসিসহ অনার্স, মাস্টার্স ও ডিগ্রি পরীক্ষার ফলাফলও যথেষ্ট ভালো।

প্রশ্ন : দেশের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মান বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হলে কলেজ শিক্ষকদের বিসিএস পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও শিক্ষকদের উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে হবে। সর্বোপরি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার মান ও পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

প্রশ্ন : শিক্ষার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা কী?

অধ্যক্ষ : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্ক মধুর হতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রীদের তার সন্তানের মতো করে শিক্ষাদান দিয়ে তাদের ক্লাসমুখী করে গড়ে তুলতে হবে। নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে গড়তে হবে।

প্রশ্ন : শিক্ষকদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ থেকে উত্তরণে করণীয় কী?

অধ্যক্ষ : এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের উচ্চতর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদেরও নিজেদের মান বাড়াতে সচেষ্ট হতে হবে। এজন্য নিয়মিত পড়াশোনা ও গবেষণা করতে হবে।

প্রশ্ন : মূল্যবোধের অবক্ষয় এখন সমাজের সর্বস্তরে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর উন্নয়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যক্ষ : নৈতিক শিক্ষার ওপর প্রতিটি ক্লাসে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। সহশিক্ষার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করে পাঠদান করা হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়তে দরকার নৈতিক বোধসম্পন্ন শিক্ষক। এই বিষয়টি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে গুরুত্বসহকারে ধরে রাখতে হবে। কারণ শিক্ষক আদর্শবান না হলে শিক্ষার্থী কোনোভাবেই আদর্শবান হতে পারে না।

প্রশ্ন : সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্রে কিভাবে ভূমিকা রাখে?

অধ্যক্ষ : সহশিক্ষা কার্যক্রম যত বেশি সম্প্রসারণ হবে এর ছায়াতলে তত বেশি শিক্ষার্থী সমবেত হতে পারবে। ফলে তাদের মাঝে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হবে। পাশাপাশি তারা বাইরের জগত্টাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে এর কোনো বিকল্প নেই।

প্রশ্ন : আপনার শিক্ষা জীবনে কোনো মধুর স্মৃতি থাকলে বলুন।

অধ্যক্ষ : আমি বিসিএস করে ১৯৮৮ সালে কলেজে যোগদানের পর প্রথম দিন থেকে ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়ে এসেছি। আমার সময়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রীই আজ নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠেছে। এটা মনে হলেই আমার আনন্দ লাগে, মনটা ভরে যায়।

প্রশ্ন : কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার উপদেশ কী?

অধ্যক্ষ : ছাত্র-ছাত্রীদের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা। যে জ্ঞান দেশের ও মানুষের উপকারে আসবে। সেই জ্ঞানে গুণান্বিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আর ছাত্র-ছাত্রীরা যখন প্রকৃত দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে গড়ে উঠবে, তখনই তাদের দিয়ে দেশ ভালো কিছু স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

সর্বশেষ খবর