রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
জীববিজ্ঞান

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

সুকুমার মণ্ডল

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

দ্বিতীয় অধ্যায় : জীবকোষ ও টিস্যু

আজকের আলোচনা : সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানুসমূহের মধ্যে- নিউক্লিয়াস এর বর্ণনা ও কাজ, মানবদেহের স্নায়ু, পেশি, রক্ত, ত্বক এবং অস্থির কাজ পরিচালনায় বিভিন্ন প্রকার কোষের ভূমিকা সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানুসমূহের বর্ণনা ও কাজ :

ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায় এমন কিছু সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গানুর মধ্যে নিউক্লিয়াসের সঙ্গে এবার আমরা পরিচিত হব—

নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা (Nucleus) :

জীবকোষের সাইটোপ্লাজমে নির্দিষ্ট পর্দাঘেরা ক্রোমোসোম বহনকারী সুস্পষ্ট যে বস্তুটি দেখা যায় সেটিই নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রিকা।

অবস্থান : উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষে এদের দেখা যায় তবে জীবকোষ ও লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না ।

 

গঠন : এর আকৃতি গোলাকার, ডিম্বাকার বা নলাকার। সুগঠিত কেন্দ্রিকায় নিচের অংশগুলো দেখা যায় :

ক. নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Taslima Afroy)

খ. নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm)

গ. নিউক্লিওলাস (Nucleolus)

ঘ. ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum)

ঙ. নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Nuclear membrane) :

ক. নিউক্লিয়ার ঝিল্লি (Taslima Afroy) :

নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে যে ঝিল্লি তাকে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি বা কেন্দ্রিক ঝিল্লি বলে।

গঠন : এটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি।

এ ঝিল্লি লিপিড ও প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত।

এ ঝিল্লিতে মাঝে মাঝে কিছু ছিদ্র থাকে একে নিউক্লিয়ার রন্ধ্র বলে ।

কাজ : এই ছিদ্রের মাধ্যমে কেন্দ্রিকা ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে কিছু বস্তু চলাচল করে। এই ঝিল্লি সাইটোপ্লাজম থেকে কেন্দ্রিকার অন্যান্য বস্তুকে পৃথক করে ও বিভিন্ন বস্তুর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

 

খ) নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm): কেন্দ্রিকা ঝিল্লির অভ্যন্তরে জেলির ন্যায় বস্তু বা রসকে কেন্দ্রিকারস বা নিউক্লিওপ্লাজম বলে। কেন্দ্রিকারসে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন, উেসচক ও কতিপয় খনিজ লবণ থাকে।

গ) নিউক্লিওলাস (Nucleolus):

কেন্দ্রিকারসের মধ্যে ক্রোমোজোমের সঙ্গে লাগানো গোলাকার বস্তুকে নিউক্লিওলাস বা কেন্দ্রিকানু বলে।

অবস্থান : ক্রোমোজোমের রঙআগ্রাহী অংশের সঙ্গে এরা লেগে থাকে।

গঠন : এরা RNA ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত।

এরা নিউক্লিক এসিড মজুদ করে ও প্রোটিন সংশ্লেষ করে।

নিউক্লিয়াসের কাজ :

কোষের সব জৈবনিক ক্রিয়া বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লিয়াস

নিউক্লিয়াসে বংশগতির বৈশিষ্ট্য নিহিত

এটি কোষে সংঘটিত বিপাকীয় কার্যাবলীসহ সব ক্রিয়া-বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে মানবদেহের স্নায়ু, পেশি, রক্ত, ত্বক এবং অস্থির কাজ পরিচালনায় বিভিন্ন প্রকার কোষের ভূমিকা :

ঘ) ক্রোমাটিন জালিকা (Chromatin reticulum):

কোষের বিশ্রামকালে কেন্দ্রিকায় কুণ্ডলী পাকানো সূক্ষ্ম সুতার ন্যায় অংশই ক্রোমাটিন জালিকা। কোষ বিভাজনের সময় এরা মোটা ও খাট হয় তাই তখন তাদের আলাদা আলাদা ক্রোমোজোম হিসেবে দেখা যায়।

ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলো বংশগতির গুণাবলি বহন করে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে নিয়ে যায়। কোনো একটি জীবের ক্রোমোজোম সংখ্যা ওই জীবের জন্য নির্দিষ্ট। এসব ক্রোমোজোমে বংশধারা বহনকারী জিন অবস্থান করে। পুরুষানুক্রমে বংশের বৈশিষ্ট্য বহন করা ক্রোমোজোমের কাজ।

কোষ জীবদেহের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) গঠনের একক। এককোষী ও বহুকোষী প্রাণীদের কোষে কাজ ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়। পৃথিবীর আদি সব ধরনের ক্রিয়াকলাপ যেমন খাদ্যগ্রহণ, দেহের বৃদ্ধি ও প্রজনন ওই এক কোষের মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। বহুকোষী প্রাণীদের দেহকোষের মাঝে ভিন্নতা আছে, আছে বৈচিত্র্যতা।

মানবদেহে নানা ধরনের কোষ আছে যারা ভিন্ন ভিন্ন কাজে নিয়োজিত। মানবদেহের স্নায়ুকোষ জালের মতো ছড়িয়ে থাকে। দেহের যে কোনো অংশের উদ্দীপনা গ্রহণ করে মস্তিষ্কে প্রেরণ করা, আবার মস্তিষ্কের কোনো বার্তা শরীরের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে দেওয়াই এদের কাজ।

চোখের স্নায়ুকোষগুলো দেখতে এবং কানের স্নায়ুকোষগুলো শুনতে সাহায্য করে। মানব চোখের মতো বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুকোষ না থাকায় বেশিরভাগ প্রাণীই পৃথিবীর দৃশ্যমান বস্তুগুলো রঙিন দেখতে সক্ষম হয় না। অনেক প্রাণী শুধু দিনে অথবা রাতে দেখতে পায়। আমাদের কাজকর্মে, হাঁটাচলায় এবং নড়াচড়ায় পেশিকোষ ব্যবহৃত হয়। তিন ধরনের রক্তকোষ (লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা) মানবদেহের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। লোহিত রক্তকণিকা কোষগুলো ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণ করে হৃদযন্ত্রের সাহায্যে ধমনীর মাধ্যমে কৈশিক নালি হয়ে দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শ্বেত রক্তকণিকা দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। রক্তের অনুচক্রিকা কোষগুলো শরীরের কেটে যাওয়া অংশ থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে শরীরের ত্বকীয় কোষগুলো দেহের আবরণ দেওয়া ছাড়াও শরীরের অবস্থানভেদে বিভিন্ন কাজ করে থাকে । যেমন-মাথার ত্বকীয় কোষ থেকে চুল গজিয়ে থাকে। শরীরের ত্বকীয় কোষগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ঘাম নির্গমন কোষ থেকে ঘাম নির্গত করে। অস্থিকোষ দেহে অস্থি অথবা কোমলাস্থি তৈরি করে দেহের দৃঢ়তা দিয়ে থাকে। দেহের আকার, গঠন, অস্থির বৃদ্ধি ইত্যাদিতে অস্থিকোষের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর