প্রথম অধ্যায় : কোষ ও এর গঠন
সৃজনশীল প্রশ্ন : উদ্ভিদের এক প্রকার অজ্ঞাণু খাদ্য তৈরি করে এবং অন্য প্রকার অঙ্গাণু স্নেহ বিপাকে ভূমিকা রাখে ও শক্তি উৎপন্ন করে থাকে।
ক. জিন কী? ১
খ. কোন অঙ্গাণুকে কেন কোষের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয়? ২
গ. উদ্দীকের ১ম অঙ্গাণুটির গঠন ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. উদ্দীকের ১ম ও ২য় অঙ্গাণুর তুলনামূলক আলোচনা কর। ৪
উত্তর : ক. জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্ষুদ্রতম একককে জিন বলে।
খ. রাইবোসোমকে কোষের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয়।
সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় বিরাজমান অথবা অন্তঃপ্লাজমীয় জালিকার গায়ে অবস্থিত যে দানাদার কণায় প্রোটিন সংশ্লেষণ ঘটে তাকে রাইবোসোম বলে।
প্রোটিন সংশ্লেষণের শুরুতে MRNA আদি কোষের 30S এবং প্রকৃত 40S সাব-ইউনিটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এরপর আদি কোষে 30S সঙ্গে 50S মিলে 70S একক গঠন করে এবং প্রকৃত কোষে 40S এর সঙ্গে 60S সাব-ইউনিট এসে একত্রিত হয়ে 80S একক গঠন করে এবং প্রোটিন সংশ্লেষণ শুরু হয়। তাই রাইবোসোমকে কোষের প্রোটিন তৈরির কারখানা বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের প্রথম অঙ্গাণুটি হলো ক্লোরোপ্লাস্ট।
ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন নিচে দেওয়া হলো-
১. আবরণী : সমস্ত ক্লোরোপ্লাস্ট দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে।
২. স্ট্রোমা : আবরণী দ্বারা আবৃত পানিগ্রাহী, কলয়েডধর্মী ম্যাট্রিক্স তরলকে স্ট্রোমা বলে। এতে 70S রাইবোসোম, DNA, RNA ইত্যাদি থাকে। এতে শর্করা তৈরির এনজাইমও থাকে।
৩. থাইলাকয়েড ও গ্রানাম : স্ট্রোমাতে অসংখ্য থলে আকৃতির অংশগুলোকে থাইলাকয়েড বলে।
কতগুলো থাইলাকয়েড এক সঙ্গে একটির ওপর আর একটি সজ্জিত হয়ে স্তূপের মতো থাকে। থাইলাকয়েডের এ স্তূপকে গ্রানাম (বহুবচনে গ্রানা) বলে। প্রতিটি ক্লোরোপ্লাস্টে সাধারণত ৪০-৬০টি গ্রানা থাকে।
৪. স্ট্রোমা ল্যামেলি : দুটি পাশাপাশি গ্রানার কিছুসংখ্যক থাইলাকয়েডস্ সূক্ষ্ম নালিকা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এই সংযুক্তকারী নালিকাকে স্ট্রোমা ল্যামেলি (একবচন-ল্যামেলাম) বলে। এতে কিছু ক্লোরোফিল থাকে।
৫. ফটোসিনথেটিক ইউনিট ও ATP-Synthases : থাইলাকয়েড মেমব্রেন বহু গোলাকার বস্তু বহন করে। এদের ATP-Synthases বলে। এতে ATP তৈরির সব ধরনের এনজাইম থাকে। মেমব্রেনগুলোতে বহু ফটোসিনথেটিক ইউনিট থাকে। প্রতি ইউনিটে ক্লোরোফিল-এ, ক্লোরোফিল-বি, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিলের প্রায় ৩০০-৪০০ অণু থাকে।
৬. DNA ও রাইবোসোম : ক্লোরোপ্লাস্টে তার নিজস্ব বৃত্তাকার DNA ও রাইবোসোম থাকে। এদের সাহায্যে ক্লোরোপ্লাস্ট নিজের অনুরূপ সৃষ্টি ও কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করতে পারে।
খ. উদ্দীপকের প্রথম অঙ্গাণু হলো ক্লোরোপ্লাস্ট ও দ্বিতীয় অঙ্গাণু হলো মাইটোকন্ড্রিয়া।
নিচে ক্লোরোপ্লাস্ট ও মাইটোকন্ড্রিয়া-এর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো।
১. ক্লোরোপ্লাস্ট উদ্ভিদকোষে দেখা যায়। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়া উদ্ভিদকোষ ও প্রাণীকোষে দেখা যায়।
২. ক্লোরোপ্লাস্টে সবুজ রঞ্জক পদার্থ থাকে। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়ায় রঞ্জক পদার্থ থাকে না।
৩. ক্লোরোপ্লাস্টের অন্তঃপর্দায় ভাঁজ থাকে না। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃপর্দার ভিতরের দিকে অসংখ্য ভাঁজ (ক্রিস্টি) থাকে।
৪. ক্লোরোপ্লাস্টে কোনো প্রকোষ্ট নেই। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়া অসম্পূর্ণ প্রকোষ্টে বিভক্ত।
৫। ক্লোরোপ্লাস্টে থাইলাকয়েড থাকে। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়ায় থাইলাকয়েড থাকে না।
৬. ক্লোরোপ্লাস্টের থাইলাকয়েডের মধ্যে কোয়ান্টাজোম নামক যে দানা থাকে তা বৃন্তহীন। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তঃপর্দার গায়ে অক্সিজোম নামক যে দানা থাকে তা বৃন্তযুক্ত।
ক্লোরোপ্লাস্ট ETS-এর মাধ্যমে ফটোফসফোরাইলেশন ঘটে। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়া ETS-এর মাধ্যমে অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন ঘটে।
৮. ক্লোরোপ্লাস্ট শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। অন্যদিকে মাইটোকন্ড্রিয়া শ্বসনে সহায়তা করে।
সৃজনশীল প্রশ্ন :
ক. সেন্ট্রাল ডগমা কী? ১
খ. জেনেটিক কোড বলতে কী বুঝ? ২
গ. চিত্র A-এর ভৌতগঠন ব্যাখ্যা কর। ৩
ঘ. জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে A ও B -এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ কর। ৪
উত্তর : K. রেপ্লিকেশন, ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে DNA ও RNA এবং প্রোটিনের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। এ সম্পর্কটি হচ্ছে- এদের একটি থেকে অন্যটির উৎপাদন। DNA থেকে RNA উৎপাদন, RNA থেকে প্রোটিন উৎপাদন এবং প্রোটিন (এনজাইম) দ্বারা DNA ও RNA উভয়ের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ-এই হচ্ছে এ সম্পর্কের মূল কথা। এ ধারণা বা প্রত্যয়টি জীববিজ্ঞানের একটি মৌল প্রত্যয়।
খ. জীবের বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরকারী কোডকে জেনেটিক কোড বলে। DNa- তে এ কোড অবস্থিত। জেনেটিক কোড হলো নিউক্লিয়োটাইডের অনুক্রম ও অ্যামিনো অ্যাসিডের অনুক্রমের মধ্যে যোগাযোগ পদ্ধতি।
একাধিক কোডন একটি অ্যাসিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ করে (যেমন লিউসিন)। একটি কোডন কখনো একাধিক অ্যামিনো অ্যাসিডকে কোড করে না। কোডনসমূহ সার্বজনীন। জেনেটিক কোড তিন অক্ষরবিশিষ্ট। কোডন AUG দিয়ে চেইন শুরু এবং কোডন UAA, UAG ও UGA দিয়ে চেইন শেষ হয়।
গ. চিত্র A হলো DNA।
নিচে DNA-এর ভৌতগঠন ব্যাখ্যা করা হলো।
১. DNA অণু দ্বিসূত্রক, বিন্যাস ডান থেকে বাম দিকে ঘুরানো সিঁড়ির মতো, যাকে ডাবল হেলিক্স বলে।
২. সূত্রদ্বয় সমদূরত্বে পরস্পর বিপরীতমুখী (একটি র্৫র্৩ কার্বনমুখী, অন্যটি ৩র্®র্৫ কাবর্নমুখী) হয়ে অবস্থান করে।
৩. সূত্র দুটি তৈরি হয় ডিঅক্সিরাইবোজ স্যুগার (S) ও ফসফেটের (P) পর্যায়ক্রমিক সংযুক্তির মাধ্যমে।
৪. সূত্র দুটির মাঝখানের প্রতিটি ধাপ তৈরি হয় একজোড়া নাইট্রোজেন বেস (A = T ev GC) দিয়ে।
৫. ফসফেট যুক্ত থাকে ডিঅক্সিরাইবোজ স্যুগারের র্৩ ও র্৫ কার্বনের (৩য় ও ৫ম কার্বনের) সঙ্গে এবং ক্ষারকগুলো যুক্ত থাকে ডিঅক্সিরাইবোজ স্যুগারের র্১ কার্বনের (১ নং কার্বনের) সঙ্গে। কাজেই সূত্রকের বাইরের দিকে ফসফেট এবং ভিতরের দিকে নাইট্রোজেন ক্ষারক থাকে।
৬.
DNA অণুতে চার ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষারক (অ্যাডিনিন, গুয়ানিন থাইমিন এবং সাইটোসিন) থাকে। অ্যাডিনিন (A)-এর সম্পূরক ক্ষারক থাইমিন (T) এবং গুয়ানিন (G) এর সম্পূরক ক্ষারক সাইটোসিন (C)।
৭. একদিকের অ্যাডিনিন অন্যদিকের থাইমিনের সঙ্গে ২টি হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা যুক্ত থাকে (A=T/T=A) অন্যদিকে গুয়ানিন সাইটোসিনের সঙ্গে ৩টি হাইড্রোজেন বন্ড দ্বারা যুক্ত থাকে (GC/CG)|
৮. ডাবল হেলিক্স-এর প্রতিটি ঘূর্ণনে ১০ জোড়া মনোনিউক্লিওটাইড থাকে। ফলে সিঁড়ির এক ধাপ থেকে অন্য ধাপের দূরত্ব ৩.৪ A।
৯. প্রতিটি প্যাঁচে হেলিক্স ব্যাস ২০ A।
১০. হেলিক্সের প্রতি ঘূর্ণনে ১টি গভীর ও ১টি অগভীর খাঁজের সৃষ্টি হয়।
১১. DNA-এর আণবিক ওজন ১০৬-১০৯ এর মধ্যে।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্র A হলো DNA ও চিত্র B হলো RNA।
জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে DNA ও RNA-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো। DNA হলো Deoxyribonucleic acid প্রকৃত কোষের ক্রোমোসোমের মূল উপাদান হলো DNA। DNA ক্রোমোসোমের গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। DNA বংশগতির আণবিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। জীবের সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। জীবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বংশপরম্পরায় অধঃস্তন প্রজন্মে স্থানান্তর করে। জীবের পরিবৃত্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। DNA জীবের যাবতীয় বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায়।
RNA হলো Ribonucleic Acid সব জীবকোষে RNA থাকে। একটি কোষে বিরাজমান RNA-এর শতকরা ৯০ ভাগ থাকে সাইটোপ্লাজমে, বাকি ১০ ভাগ নিউক্লিয়াসে। RNA-এর প্রধান কাজ প্রোটিন সংশ্লেষ। iRNA অ্যামিনো অ্যাসিড স্থানান্তর করে। rRNA রাইবোনিউক্লিয়োপ্রোটিন গঠন করে। mRNA,DNA হতে বার্তা বহন করে রাইবোসোমে পৌঁছায়। কিছু ভাইরাস দেহে gRNA বংশগতি বস্তু হিসেবে কাজ করে। যেমন TMV মাইনর RNA বিভিন্ন ধরনের এনজাইমের কাঠামো দান করা এবং এনজাইম হিসেবে কাজ করে।