সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্র

মুহম্মদ আজিজুল হক আমান

সমাস নির্ণয় :

সমাস অর্থ প্রধান। অর্থ সম্বন্ধের দিক দিয়ে বিচার করেই সমাসের প্রকারভেদ। যেমন— (১) পূর্বপদ প্রধান (অব্যয়ীভাব সমাস)। (২) পরপদ প্রধান (তত্পুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু)। (৩) উভয়পদ প্রধান (দ্বন্দ্ব)। (৪) অন্যপদ প্রধান (বহুব্রীহি) করা হয়। সমাস নির্ণয় করতে গেলে নিচের বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানতে হবে।

১. আমাদের প্রথমেই সমাসবদ্ধ পদ বা সমস্ত পদের অর্থ জানতে হবে।

২. ব্যাসবাক্যের কোন কোন পদের মিলনে সমস্ত পদটি গঠিত হয়েছে এবং তার পূর্বপদ কি ও পরপদ কি তা ঠিক করতে হবে।

৩. এমন সমস্ত পদের অর্থ (যা পূর্বে জানা হয়েছে) এবং তার পূর্বপদ বা পরপদ বা উভয়পদ কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য একটি অর্থ বুঝাচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে হবে।

৪. (ক) যদি মনে হয় পূর্বপদেও অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে, তখন আবার দেখতে হবে পূর্বপদটি (যা সমস্তপদের গোড়ায়, কোন অব্যয় পদ কিনা, যদি অব্যয় পদ হয়ে থাকে তবে তা পূর্বপদ প্রধান সমাস অর্থাৎ অব্যয়ীভাব সমাস। কেবল অব্যয় পদ দেখেই অব্যয়ীভাব সমাস বলা যাবে না যদি পূর্বপদ অর্থাৎ অব্যয়ের অর্থই সমস্ত পদে প্রাধান্য না পায়। (খ) আবার যদি মনে হয় সমস্ত পদটির অর্থ পরপদ প্রধান তবে তা পরপদ প্রধান (তত্পুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু) সমাস হবে।

(গ) এখন এ তিনটির মধ্যে তত্পুরুষ হতে হলে পূর্বপদে (ব্যাসবাক্যের মধ্যে) ২য়া থেকে ৭মী পর্যন্ত কোনো না কোনো বিভক্তির চিহ্ন ছিল, না সমস্ত পদ লোপ পেয়েছে তা জানতে হবে। যদি বিভক্তি চিহ্ন দেখা যায় তবে যে যে বিভক্তির চিহ্ন থাকবে সেই সেই তত্পুরুষের নামকরণ হবে। যদি কৃদন্ত পরপদ কৃদন্ত পদ (কৃৎ ধাতু নিষ্পন্ন পদ বা ক্রিয়াপদ) দেখা যায় এবং পূর্ব পদটি ‘উপপদ’ (বিশেষ্য পদ) হয় তাকে নিঃসন্দেহে উপপদ তত্পুরুষ সমাস বলা যাবে। (বহুব্রীহি সমাস বলে ভুল করা যাবে না)।

(ঘ) যদি সেই পরপদ প্রধান সমস্ত পদটির পূর্বপদে সংখ্যাবাচক বিশেষণ পদ থাকে তা দ্বিগু সমাস বলে। আবার কেবল পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ দেখেই দ্বিগু সমাস বলা চলবে না, কারণ সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাসেরও প্রথমে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে। তবে তা অন্যপদ প্রধান। 

পূর্বপদ সংখ্যা + পরপদ প্রধান = দ্বিগু সমাস।

আর পূর্বপদে সংখ্যা +অন্যপদ প্রধান= দ্বিগুসমাস।

আর পূর্বপদে সংখ্যা + অন্যপদ প্রধান= সংখ্যা বহুব্রীহি।

(ঙ) আর যদি সমস্ত পদটি পরপদ প্রধান হয় ও পূর্বপদে ২য়া থেকে ৭মী পর্যন্ত কোনো বিভক্তির চিহ্ন না থাকে বা সংখ্যাবাচক শব্দও না থাকে তখন পূর্বপদ পরপদ বিশেষণ বিশেষ্য বা বিশেষ্য বিশেষণ নিশ্চয়ই তবে, তখন সে সমাসকে বলা যাবে কর্মধারয় সমাস।

কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদের মধ্যে উপমান, উপমিত, রূপক কর্মধারয় সমাস নির্ণয় করতে হলে দেখতে হবে পরপদ প্রধান সমাসটির পূর্বপদ পরপদে উপমান উপমেয় সাধারণ ধর্ম কি আছে।

উপমান (যার তুলনা করা যায়) ও সাধারণ কর্ম থাকলে উপমান কর্মধারয়।

উপমেয়-উপমান আছে কিন্তু সাধারণ ধর্মের উল্লেখ নেই। তবে তা হবে  উপমিত কর্মধারয়।

যদি উপমেয়-উপমান থাকে এবং উপমেয়-উপমানের মধ্যে অভেদ কল্পনা বোঝায়, তাহলে হবে রূপক কর্মধারয় সমাস।

৫. যদি সমস্ত পদের অর্থে পূর্বপদ ও পরপদ উভয় পদের অর্থ বিদ্যমান থাকে বা প্রাধান্য পায় তবে তা হবে দ্বন্দ্ব সমাস।

৬. যদি মনে হয় সমস্ত পদটির অর্থ পূর্বপদ বা পরপদ কোনোটির অর্থকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্য তৃতীয় পদকে বোঝাচ্ছে তাহলে তখন তা হলো বহুব্রীহি সমাস।

৭. বহুব্রীহি সমাস ধরতে পারলে যদি তাতে পূর্বপদ পরপদ একই অধিকরণ (বিভক্তি) যুক্ত হয় তা হবে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি। যদি পূর্বপদ পরপদ আলাদা-আলাদা বিভক্তি (সাধারণত উত্তর পদ ৭মী বিভক্তি যুক্ত) হলে হবে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস। যদি পূর্বপদ পরপদ একই পদেরই দ্বিত্ব হয় এবং ক্রিয়ার পারস্পরিকতার ভাব থাকে তবে তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলা হয়। সেই অন্যপদ প্রধান সমাসে পূর্বপদে সংখ্যা থাকলে সংখ্যা বহুব্রীহি, সেই অন্যপদ প্রধান ব্যাসবাক্যস্থ, মধ্যবর্তী পূর্বপদের বিভক্তি অটুট থাকলে অলুক বহুব্রীহি এবং পূর্বপদ সহার্থক হলে হবে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস।

উপরিউক্ত আলোচনার সূত্র ধরে নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হলো : (১) দুর্ভিক্ষ (ভিক্ষার) অভাব, সমস্ত পদের গোড়ার ‘দুর’ অব্যয় পদ আছে, ‘দুর’ (অভাবের) অব্যয়ের অর্থই প্রধান। তাই ইহা পূর্বপদ প্রধান অব্যয়ীভাব সমাস।

(২) রথ দেখা (রথকে দেখা) : এখানে ‘দেখা’ পরপদের অর্থ প্রধান এবং পূর্বপদে ‘কে’ ছায়া বিভক্তির চিহ্ন আছে যা সমস্ত পদে লুপ্ত হয়েছে। অতএব এটি ২য়া তত্পুরুষ সমাস।

(৩) পাঁচফোড়ন (পাঁচফোড়নের সমাহার) : এখানে ফোড়ন পরপদের অর্থপ্রধান ও পূর্বপদে সংখ্যা পাঁচ আছে, সুতরাং এটি হচ্ছে দ্বিগু সমাস।

(৪) নীলোৎপল (নীল কে উৎপল) : সমস্ত পদটির অর্থে পরপদ উৎপল-এর অর্থ প্রাধান্য অথচ পূর্বপদে ছায়া মেলে বিভক্তি চিহ্ন নেই। পূর্বপদ সংখ্যাও নয় তাই এটি কর্মধারয় সমাস।

(৫) দম্পত্তি (জায়া ও পতি) : এটিতে পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ের অর্থই সমস্ত পদে প্রাধান্য আছে। তাহলে এটি উভয়পদ প্রধান যা দ্বন্দ্ব সমাস।

(৬) ফণীভূষণ (ফণীভূষণ যাহার) : এটিতে সমস্ত পদটি পূর্বপদ ‘ফণী’ ও পরপদ ‘ভূষণ’ এর মধ্যে কোনোটির অর্থকে না বুঝিয়ে তৃতীয় একটি পদ ‘শিব’-কে বোঝাচ্ছে, সুতরাং এটি অন্যপদ প্রধান অর্থাৎ বহুব্রীহি সমাস। আবার এখানে পূর্বপদ ও পরপদ একই বিভক্তি যুক্ত বলে একে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলা হয়।

(৭) পঞ্চানন = (পঞ্চ আনন যাহার) উভয়ের দুটি উদাহরণ নেই ‘পঞ্চ সংখ্যা আছে। পূর্বপদে সংখ্যা থাকে সংখ্যাবহুব্রীহি ও দ্বিগু সমাসে কোনটি দ্বিগু কোনটি সংখ্যাবহুব্রীহি হবে।

(ক) উদাহরণকে পরপদ নদীর অর্থই প্রাধান্য তাই এটি হবে দ্বিগু সমাস।

(খ) উদাহরণে পূর্বপদ ‘পঞ্চ’ পরপদ আননকে না বুঝিয়ে অন্য তৃতীয়পদ শিরকে বোঝাচ্ছে অর্থাৎ অন্যপদ প্রধান তাই এটি সংখ্যা বহুব্রীহি সমাস।

সর্বশেষ খবর