বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
কারক ও বিভক্তি

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

মুহম্মদ আজিজুল হক আমান

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

কারকের পরিচয় : আমাদের পারিবারিক সংসারে, সাধারণত কর্তাই প্রধান ব্যক্তি; যার সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যের কোনো না কোনো, সম্বন্ধ রয়েছে। কেউ তার পিতা, কেউ তার মাতা, কেউ তার পুত্র, কন্যা ইত্যাদি। সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিরাই পরিবারে বাস করে। পরিবার প্রধান (কর্তা)কে কেন্দ্র করেই পরিবারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। তিনি পরিবারে কখনো অনুপস্থিত থেকেও পরিবার পরিচালনা করেন।

তেননি বাক্য একটি সুসংহত সংসার। পদগুলো হলো বাক্য সংসারের সদস্যবৃন্দ। সমাপিকা ক্রিয়াই বাক্যের প্রাণ। তাকে ঘিরেই পরিবারের অন্যান্য সদস্য (পদগুলো) আবর্তিত হয়। সমাপিকা ক্রিয়া বাক্য সংসারে উপস্থিত বা কখনো অনুপস্থিত (ওই) থেকেই পরিবার নিয়ন্ত্রণ করে। তার সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের এক একটি সম্পর্ক বা সংযোগ সূত্র আছে। যা দিয়ে বাক্য পরিবার, সুশৃঙ্খল সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত অন্যান্য পদের (নাম পদের বিশেষ) সর্বনাম, বিশেষণ যে সম্পর্ক একেই বলে কারক।

সংস্কৃত ভাষায় বলে ক্রিয়ান্বয়ী কারকসম। ক্রিয়ার সঙ্গে যার অন্বয় বা সম্বন্ধ আছে তাই কারক। যার সঙ্গে অন্বয় নেই সে কারক নয়। তাই সম্বন্ধ পদও বিভক্তি। বিভক্তি হলো যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ নাম পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্দেশ করে বিভক্তি কারকের জ্ঞান জন্মায়।

বাক্যের সঙ্গে কারকের সম্বন্ধ : বাংলা বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য পদের ৬ প্রকারের সম্বন্ধ বা অন্বয় হতে পারে। যেমন- পণ্ডিত সামছুল হক নিজ হাতে এতদিন নিজ তহবিল হতে দরিদ্রকে অর্থ দান করতেন। এখানে ‘দান করতেন’ পদটি ক্রিয়া। তাছাড়া ক্রিয়াকে সরাসরি প্রশ্ন করেও সহজভাবে কারক নির্ণয় করা যায়। যেমন- ‘কে’ প্রশ্নের উত্তরে কর্তৃকারক। ‘কি’ প্রশ্নের উত্তরে কর্মকারক, ‘কি দ্বারা’ প্রশ্নের উত্তরে করণ কারক, ‘কাকে’ (স্বত্ব, ত্যাগ করে দান) প্রশ্নের উত্তরে সম্প্রদান কারক, ‘কোথা থেকে’ প্রশ্নের উত্তরে অপাদান কারক এবং ‘কোথায়’ উত্তরে অধিকরণ কারকের পরিচয় পাওয়া যায়।

কারক চেনার উপায় : কে, কারা কর্তৃ; কি, কাকে কর্ম; দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক করণের ধর্ম, বিনা স্বার্থে যাকে দান সে-ই হয় সম্প্রদান। হতে থেকে অপাদান আরম্ভ থেকে বিরত আনন্দে সে ভীত। (অপাদান) অধিকরণে রক্ষিত স্থান ভেদে কাল বিষয়ে গোলমাল।

কারকের প্রয়োজনীয়তা : কারক শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে। সংস্কৃত ভাষায় বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ্যের বা সর্বনামের বিশেষ বিশেষ সম্বন্ধ বুঝানোর জন্য বিশেষ বিশেষ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাংলায় একই বিভক্তি ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কও প্রকাশ করে। ফলে এ সম্পর্কটা বোঝার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে আমাদের কারক শিখতে হয়।

প্রকৃতপক্ষে বাংলা ভাষায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারক অপরিহার্য নয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যখন বাক্যে ক্রিয়া থাকে, তখন সেখানে কারক সম্পর্কে জ্ঞান থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে সন্ধি, সমাস ইত্যাদির মতো ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা সবক্ষেত্রে কারকে নেই। বাংলা ভাষা বিশ্লেষণের জন্য কারক অপরিহার্য।

সর্বশেষ খবর