সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

অষ্টম শ্রেণির চারু ও কারুকলা

মো. আমিনুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষক

অষ্টম শ্রেণির চারু ও কারুকলা

[পূর্বে প্রকাশের পর]

 

দ্বিতীয় অধ্যায়

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে চারুশিল্প ও শিল্পীরা

 

৩. আমাদের সংস্কৃতির গৌরবময় দিকগুলো সম্পর্কে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

উত্তর : আমাদের সংস্কৃতির গৌরবময় দিকগুলো আবহমান কাল ধরে এ দেশের মানুষের মনে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চায় ১৯৪৮ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত চারুকলা প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ছবি আঁকা, ভাস্কর্য ও অন্যান্য শিল্পকর্মের মাধ্যমে নানা রকম সংস্কৃতি বিকশিত হয়, বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ মিনার এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু সংগঠন খেলাঘর ও কচি-কাঁচার মেলার মাধ্যমে চিত্রশিল্পীরা শিশু চিত্রকলা ও অন্যান্য সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকার আদায় এবং নিজেদের শিল্প, সাহিত্য ও ঐতিহ্য বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। বর্তমানে আলপনার ব্যবহার বাঙালি সংস্কৃতির একটি অত্যাবশকীয় অনুষঙ্গ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে বা যেকোনো শুভ কাজে আলপনার ব্যবহার এখন স্বাভাবিক সংস্কৃতি। তা ছাড়া নবান্ন উৎসব ও বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের মানুষকে নিজের দেশ, নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী করতে, গর্ববোধ করতে উদ্বুদ্ধ করছে।

৪. বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পীদের ভূমিকা সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর : ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৩ বছর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে বারবার আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে। এর মধ্যে ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের মার্শাল‘ল বিরোধী আন্দোলন, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে বিশাল গণ-আন্দোলনসহ নানা আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠনের সঙ্গে চিত্রশিল্পীরাও জড়িত ছিলেন। সব রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক দল, সংগঠনের আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে চিত্রশিল্পীরা তাঁদের প্রচারে পোস্টার আঁকা, কার্টুন আঁকা, ফেস্টুন, ব্যানার, মঞ্চসজ্জা-সব কিছুতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকতেন।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে পটুয়া কামরুল হাসানসহ সেই সময়ের অনেক চারুশিল্পীর ছাত্ররা ভাষা আন্দোলন ও শাসকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ড্রইং ও কাঠ খোদাই, লিনোকাট মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী কাজী আবুল কাশেম দোপেঁয়াজা ছদ্ম নামে ভাষা আন্দোলনবিষয়ক কার্টুন আঁকেন। এসব ছবি অধিকার আদায়ে জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিহাসের অংশ। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চিত্রশিল্পীরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ওপর পাকিস্তানি

শাসকগোষ্ঠীর নানা নির্যাতনের ছবি এঁকে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ সালে বিদ্রোহী স্বরবর্ণ নামের একটি প্রদর্শনী জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া তুলেছিল, যা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এ ধরনের প্রদর্শনী ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল।

৫. অসহযোগ আন্দোলনে চিত্রশিল্পীরা যেসব ছবি এঁকেছিলেন, সেগুলোর বিষয়বস্তু উল্লেখ কর।

উত্তর : ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পরও তাকে সরকার গঠনের অধিকার দেওয়া হয়নি। তাই ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চিত্রশিল্পীরা একজোট হয়ে আলোচনায় বসলেন। ছবি এঁকে, পোস্টার ও বড় বড় ব্যানার লিখে বাঙালির এই অসহযোগ আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও মর্তুজা বশীরকে যুগ্ম আহ্বাক করে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১০ দিন ধরে কয়েক শ ছবি ও পোস্টার এঁকে চিত্রশিল্পীরা ১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর জš§দিনে শহীদ মিনার থেকে বিপ্লবী চিত্রের মিছিল বের করেন। এসব চিত্রের বিষয় ছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের তথা বাঙালিদের বঞ্চনার ছবি, নির্যাতনের ছবি, বাঙালিদের সম্পদ লুট করে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের প্রতিবাদ ও ছবি, বাংলার ভাষা, সংস্কৃতির প্রতি আক্রমণ ও অবহেলার ছবি, সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতিবাদ ও সংগ্রামের ছবি।

সর্বশেষ খবর