বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ষষ্ঠ শ্রেণির পড়াশোনা বাংলা প্রথমপত্র

মেহেরুন্নেসা খাতুন, সিনিয়র শিক্ষিকা

ষষ্ঠ শ্রেণির পড়াশোনা বাংলা প্রথমপত্র

আয়না : জসীমউদ্দীন

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

রিকশাচালক রমিজ মিয়া তার রিকশার সিটে একটি খামে এক কপি রঙিন ছবি পেল। ছবিতে মা তার শিশুসন্তানকে নিয়ে হাসিমুখে বসে আছে। রমিজ মিয়া ছবিটি বাড়ি এনে তার বিছানার তোশকের নিচে রেখে দিল। তার নিঃসন্তান স্ত্রী রাবেয়া তোশক উল্টিয়ে একদিন ছবিটা দেখতে পেয়ে হইচই জুড়ে দিল। তার ধারণা, সন্তান হয় না বলে তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে বউ-বাচ্চাকে অন্য বাড়িতে রেখেছে। আর মাঝে মাঝে দেখবে বলে ছবিটি এনে তোশকের নিচে লুকিয়ে রেখেছে। তার স্বামী বাড়ি ফিরলে এর একটা বিহিত করবে বলে রাবেয়া মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল।

ক. মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা আয়নাটি প্রকৃতপক্ষে কোথায় ছিল?

উত্তর :  মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা আয়নাটি প্রকৃতপক্ষে এক কাবুলিওয়ালার ঝুলিতে ছিল।

খ. আয়নাটির ভেতরের মানুষটিকে বাপজান ভেবে চাষি কী জানাল?

উত্তর : আয়নার ভেতরের মানুষটিকে বাপজান ভেবে চাষি তার অবস্থার উন্নতির কথা জানাল।

জসীমউদ্দীন রচিত ‘আয়না’ গল্পের চাষি ধানক্ষেতে একটি আয়না কুড়িয়ে পেয়েছিল। আয়না সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকায় আয়নার ভেতরের মানুষটিকে নিজের বাপজান ভেবে খুশিতে আত্মহারা হয়ে নিজের অবস্থার উন্নতির কথা তাকে জানায়। বাপজানের মৃত্যুর পর চাষি তার বাপজানের ক্ষেতভরে সোনাদিঘা ধান বুনেছে, শালি ধান বুনেছে। রোদে সেই ধানগাছ ঝলমল করে উঠেছে। বাবার মৃত্যুর পর তার একখানা ঘর থেকে চাষি তিনখানা ঘর তৈরি করেছে। তার এই সৌভাগ্যের কথা সে বাবাকে জানাতে পেরে বাজান, বাজান করতে করতে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে।

গ.  উদ্দীপকের রাবেয়ার সঙ্গে চাষি-বউয়ের কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : উদ্দীপকের রাবেয়ার সঙ্গে চাষি-বউয়ের স্বামীকে সন্দেহ করার দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে।

‘আয়না’ গল্পের চাষি একদিন ধানক্ষেতে একটি আয়না কুড়িয়ে পায়। তখনো এ দেশে আয়নার চল হয়নি বলে আয়নায় যে নিজেরই প্রতিবিম্ব পড়ে, সে সম্পর্কে কারো কোনো ধারণা ছিল না। তাই আয়নায় দেখা নিজের প্রতিবিম্বকে নিজের মৃত বাপজান ভেবে আবেগে আপ্লুত হয় এবং যত্নসহকারে পানির কলসিতে লুকিয়ে রাখে। মাঠ থেকে যখন-তখন ছুটে এসে সে আয়নাটি দেখে আর ছবির সঙ্গে কথা বলে। এসব কান্ড দেখে তার স্ত্রী একদিন কলসির ভেতর থেকে আয়নাটি বের করে তাতে নিজের চেহারা দেখে। সেও চাষির মতো মনে করে, তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করে এনে কলসির ভেতর বউকে লুকিয়ে রেখেছে। আর সে জন্যই তার স্বামী কয়েক দিন ধরে তার সঙ্গে কোনো কথা বলছে না। যখনই অবসর পায়, ওই মেয়ে- ছেলের সঙ্গে কথা বলে। তখন চাষির বউ রেগে সিদ্ধান্ত নেয়, বাড়ি ফিরলে সে তার স্বামীকে কড়া কথা শোনাবে।

উদ্দীপকের রিকশাচালক রমিজ মিয়ার কুড়িয়ে পাওয়া মা-শিশুর ছবিটি দেখে নিঃসন্তান রাবেয়া ভাবে যে তার স্বামী সন্তানের আশায় আরেকটি বিয়ে করে স্ত্রী-পুত্রকে অন্যত্র রেখে ছবিটি নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছে। তাই সে ওই বিষয়ে স্বামীকে হেস্তনেস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দীপকের এই দিকটি ‘আয়না’ গল্পের উপর্যুক্ত বক্তব্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘আয়না’ গল্পের খ্লরূপ মাত্র’ মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

উত্তর : উদ্দীপকটিতে রাবেয়ার সন্দেহের কোনো সমাধান হয়নি বলে তা ‘আয়না’ গল্পের খ্লরূপ মাত্র।

‘আয়না’ গল্পের চাষি ধানক্ষেতে আয়নাটি কুড়িয়ে পেয়ে তাতে নিজের ছায়া তার মৃত বাপজান ভেবে পরম শ্রদ্ধায় তা কলসিতে লুকিয়ে রাখে। মাঠ থেকে প্রায়ই সে ছুটে এসে আয়নাটি দেখে আর ছবির সঙ্গে কথা বলে। তার বাপজানের মৃত্যুর পর সে ক্ষেতে যে সোনাদিঘা, শালি ধান বুনেছে, একটিমাত্র ঘর থেকে তিনটি ঘর তুলেছে, সংসারের সেসব উন্নতির কথা তার বাপজানকে জানায়। তার স্ত্রী আয়নাটি খুঁজে পেয়ে তাতে নিজের ছবি দেখে স্বামী আবার বিয়ে করেছে ভেবে ক্ষেপে যায়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে পাড়া-প্রতিবেশিরাও এগিয়ে আসে। সবাই আয়নার দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন চেহারা দেখতে পায়। নিজের চেহারা কেউ বুঝতে পারে না, কিন্তু অপরের চেহারা বুঝতে পারে। তখন তারা আয়নার তেলেসমাতির কথা বুঝতে পারে এবং চাষি ও চাষির বউয়ের ঝগড়ারও মীমাংসা হয়।

উদ্দীপকের নিঃসন্তান রাবেয়া মা ও শিশুর ছবিটি দেখে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভেবে তার সঙ্গে ওই ব্যাপারে হেস্তনেস্ত করার জন্য মনে মনে তৈরি হয়, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে আসার কথা শেষ পর্যন্ত বলা হয়নি।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘আয়না’ গল্পে চাষি আর চাষির বউয়ের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে আয়নার রহস্যের উদ্ঘাটন হলেও উদ্দীপকের রাবেয়া ছবি দেখে যে সন্দেহ করেছে, সে রহস্যের উদ্ঘাটন হয়নি।

জাদুকর

উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় নুজহাত অঙ্ক ও বিজ্ঞানে অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে তাকে ছুটির পর দেখা করতে বলেন। স্কুল শেষে বাসায় ফেরার সময় শিক্ষক তাকে স্কুলগেটে দেখে কাছে ডেকে মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘তুমি প্রতিদিন ছুটির পরে আমার বাসায় পড়তে আসবে, যেখানে যা দুর্বলতা আছে, আমি দেখিয়ে দেব।’ শিক্ষকের কথায় নুজহাত কেঁদে ফেলে। শিক্ষক তাকে আদর-স্নেহ করে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।

ক. ভিনগ্রহের ব্যক্তিটির নাম কী?

উত্তর : ভিনগ্রহের ব্যক্তির নাম হইয়েত্সুন।

খ. ভিনগ্রহের লোকটি বাবলুকে টিটানে নিয়ে যেতে রাজি হলো না কেন?

উত্তর : টিটান জায়গাটা বিষাক্ত ফ্লোরিন গ্যাসে ভরপুর বলে ভিনগ্রহের লোকটি বাবলুকে টিটানে নিয়ে যেতে রাজি হলো না।

হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘জাদুকর’ গল্পের ভিনগ্রহের লোকটির সঙ্গে বাবলুর সরকারবাড়ির জামগাছের নিচে সন্ধ্যার অন্ধকারে পরিচয় হয়। বাবলুর অঙ্কে ফেল করার কাহিনি শুনে সে দুঃখ প্রকাশ করে। অন্ধকারে বাবলু জামগাছের নিচে বসে থাকবে কি না জানতে চাইলে সে ভিনগ্রহের লোকটির সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। লোকটি জানায়, তা সম্ভব নয়। তাদের চলাফেরার জন্য কোনো রকেট বা স্পেসশিপ নেই। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তারা সরাসরি বস্তু স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় যায়। বাবলুকে দিয়ে তা হবে না। তা ছাড়া ভিনদেশি লোকটি প্রথমে যাবে বৃহস্পতি গ্রহের টিটান নামের একটি চাঁদে। সেখানে অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী আছে। তবে জায়গাটি বিষাক্ত ফ্লোরিন গ্যাসে ভরপুর। তার ওপর আছে সালফার ডাই-অক্সাইড। তাতে ভিনগ্রহের হইয়েত্সুনের কিছু না হলেও বাবলু সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে।

গ. উদ্দীপকের শিক্ষকের সঙ্গে ধীরেন স্যারের বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।

উত্তর : পরীক্ষায় ফেল করায় ধীরেন স্যার সবার সামনে বাবলুকে লজ্জা দিলেও উদ্দীপকের শিক্ষক সহানুভূতি দেখান এটাই বৈসাদৃশ্য।

হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘জাদুকর’ গল্পের বাবলু হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় অঙ্কে মাত্র সাড়ে আট নম্বর পেয়েছে। অঙ্ক শিক্ষক ধীরেন স্যার বাবলুর খাতার ওপরে লাল পেনসিল দিয়ে বড় বড় করে সেই জন্য ‘গরু’ শব্দটি লিখে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্যার মেঘ-স্বরে তাকে বেঞ্চির ওপরে দাঁড়িয়ে অঙ্ক খাতায় তিনি কি লিখে দিয়েছেন, তা সবাইকে দেখাতে বলেন। বাবলু বাধ্য হয়ে মুখ কালো করে সবাইকে খাতাটা দেখায়। প্রাপ্ত নম্বরের পাশে ‘গরু’ শব্দটি লেখা দেখে ফার্স্ট বেঞ্চে কয়েকজন ছাত্র ভ্যাক ভ্যাক করে হেসে ওঠায় ধীরেন স্যার গর্জন করে ওঠেন।

অন্যদিকে উদ্দীপকের নুজহাত অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সবার সামনে তাকে কোনো তিরস্কার না করে ছুটির পরে তার সঙ্গে কথা বলে প্রতিদিন তাকে বিজ্ঞান ও অঙ্ক বুঝিয়ে দেবেন বলে আশ্বস্ত করে মাথায় হাত বুলিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। উদ্দীপকের শিক্ষকের সঙ্গে ধীরেন স্যারের আচরণের এটাই বৈসাদৃশ্য।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘জাদুকর’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করেছে মাত্রমন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

উত্তর : উদ্দীপকে শিক্ষকের সহানুভূতির দিকটিই শুধু আলোচিত হয়েছে, যা ধীরেন স্যারের আচরণের একটি দিককে ধারণ করেছে।

‘জাদুকার’ গল্পের ধীরেন স্যার বাবলুকে অঙ্ক পরীক্ষায় ফেল করার কারণে লাল পেনসিল দিয় খাতার ওপরে ‘গরু’ কথাটি লিখে ক্লাসে সবার সামনে অপমান করেছেন। এতেই বাবলুর শাস্তি শেষ হয়ে যায়নি। বাবলুর বাবাও সহজ পাত্র ছিলেন না। তাই ভয়ে, দুঃখে, অভিমানে বাবলু ছুটির পরে বাড়িতে না ফিরে একটি নির্জন স্থানে গাছের নিচে বসে থাকে। রাতের অন্ধকারে তার সামনে ভিনগ্রহের পর্যটক এসে দাঁড়ালে বাবলু তার কাছে দুঃখের কথা খুলে বলে। পর্যটকের কাছে যে কমিউনিকেটর যন্ত্র ছিল, তা দিয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীরা কী ভাবছে দূর থেকে তা টের পাওয়া যায়। যন্ত্রটির মাধ্যমে বাবলু জানতে পারে, তার বাবা ও অঙ্কের স্যার দুজনই তার জন্য খুব চিন্তিত এবং নিজেদের ব্যবহারের জন্য দুঃখবোধ করছেন। এরই মধ্যে স্যার ও তার বাবা খুঁজতে খুঁজতে বাবলুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাকে খুব বকাবকি করেন; কিন্তু বাবলুর তাতে একটুও রাগ হয় না। কারণ এরই মধ্যে যন্ত্রের মাধ্যমে সে তাঁদের মনের কথা জেনে ফেলেছে। প্রকৃতপক্ষে সব মা-বাবা তাঁদের সন্তানকে এবং শিক্ষক ছাত্রকে ভালোবাসেন।

উদ্দীপকের শিক্ষক পরীক্ষায় দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও নুজহাতকে তিরস্কার না করে সহানুভূতি দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন এই বলে যে তার ওই দুটি বিষয় তিনি প্রতিদিন পড়িয়ে দেবেন।

উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে উদ্দীপকের শিক্ষকের নুজহাতের প্রতি শুধু সহানুভূতিই প্রকাশ পেয়েছে, ‘জাদুকর’ গল্পের বর্ণিত দিকগুলো সেখানে উপস্থাপিত হয়নি। তাই উদ্দীপকটি ‘জাদুকর’ গল্পের আংশিক ভাব ধারণ করেছে।

সর্বশেষ খবর