শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

প্রথম অধ্যায় : ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

মো. আমিনুল ইসলাম : সিনিয়র শিক্ষক

 

নিচের উদ্দীপকের আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি ছিলেন কে?

খ) ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কী? ব্যাখ্যা কর।

গ. ছক ১-এ উল্লিখিত বিষয়টি বাংলার ইতিহাসে কোন ঘটনাকে প্রতিফলিত করেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘ছক ২-এ উল্লিখিত নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে।’ তুমি কি এর সঙ্গে একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

উত্তর

ক. মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি ছিলেন মানসিংহ।

খ. ইংরেজরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত কর এবং টানা তিন বছর অনাবৃষ্টির কারণে যে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, সেটাই ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।

১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের পর ইংরেজরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত কর আদায়ে প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া ইংরেজি ১৭৬৮ সাল থেকে টানা তিন বছর অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। মূলত এ দুটি কারণেই বাংলা ১১৭৬ সালে দেশে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এতে প্রায় বাংলার এক-তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়, সেটাই ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত।

গ. ছক ১-এ উল্লিখিত বিষয়টি বাংলার ইতিহাসে যে ঘটনাকে প্রতিফলিত করেছে তা হলো বাংলায় নবজাগরণ।

সমাজ সংস্কার, শিক্ষা, সাহিত্য ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনার সমষ্টিই হচ্ছে নবজাগরণ। ওয়ারেন হেস্টিংস, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও প্রমুখ ব্যক্তি বাংলার নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ছক ১-এ কলকাতা মাদরাসা, সংস্কৃত কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে, যা বাংলায় নবজাগরণের বিষয়কে নির্দেশ করে। ইংরেজরা তাদের শাসন পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেশীয়দের মধ্য থেকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত একটি অনুগত শ্রেণি তৈরিতে মনোযোগ দেয়। এ উদ্দেশ্যে ১৭৮১ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হিন্দুদের জন্য ১৭৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সংস্কৃত কলেজ। তবে ইংরেজদের উদ্দেশ্য সাধনের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সংস্পর্শে এসে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার স্ফুরণ ঘটতে থাকে। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও প্রমুখ অবাধে মুক্তমনে জ্ঞানচর্চার ধারা তৈরি করেন। বাঙালির এই নবজাগরণ কলকাতা মহানগরীতে ঘটলেও এর পরোক্ষ প্রভাব সারা বাংলায়ই পড়ে।

ঘ. ‘ছক ২-এ উল্লিখিত নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলেই ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে।’ এ বিষয়টির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করি। কারণ এর মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত বীজ রোপিত হয়েছিল এবং ভারতবর্ষ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৭৫৭ সালে বাংলা তথা ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। এ সময় ইংরেজ কোম্পানির শাসনে বৃহত্তর বাঙালি সমাজ প্রকৃতপক্ষে শোষিত হয়েছে। তাদের এই শোষণের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে ইংরেজ অধ্যুষিত ভারতের বিভিন্ন ব্যারাকে সিপাহিদের মধ্যে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সিপাহিদের এই বিদ্রোহে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের স্বাধীনচেতা শাসকরাও যোগ দেন। কিন্তু উন্নত অস্ত্র ও দক্ষ সেনাবাহিনীর সঙ্গে চাতুর্য ও নিষ্ঠুরতার যোগ ঘটিয়ে ইংরেজরা এ বিদ্রোহ দমন করে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়।

ছক ২-এ উল্লিখিত নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিক ১৮৫৭ সালের সিপাহী

 

বিদ্রোহ ও ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং এর মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত বীজ রোপিত হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার পর থেকে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাঙালি হিন্দু নেতারা ভারতবর্ষে বিভিন্ন আন্দোলন শুরু করে। অবশেষে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ইংরেজদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।

সর্বশেষ খবর