শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

অষ্টম শ্রেণির বাংলা

মেহেরুন্নেসা খাতুন : সিনিয়র শিক্ষিকা

আমাদের লোকশিল্প : কামরুল হাসান

সৃজনশীল প্রশ্ন

কামাল স্থানীয় কারিগর দ্বারা একটি পিতলের কলস তৈরি করাল। বন্ধুর বিয়েতে কলসটি উপহার দিলে কেউ কেউ উপহাস করল; আবার প্রশংসাও পেল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বললেন, স্থানীয় কারিগরদের এরূপ লোকশিল্প নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত।

ক) কামরুল হাসানের লেখা একটি বইয়ের নাম কী?

খ) খাদি কাপড়ের বিশেষত্ব কী? ব্যাখ্যা করো।

গ) কামালের দেওয়া উপহারটি কোন শিল্পকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) উদ্দীপকের কামালের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যটি কি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশাকে সমর্থন করে? ব্যাখ্যা করো।

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক) কামরুল হাসানের লেখা একটি বইয়ের নাম হলো-‘বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা।’

খ) খাদি কাপড়ের বিশেষত্ব হলো, এর সবটাই হাতে প্রস্তুত।

কামরুল হাসান রচিত ‘আমাদের লোকশিল্প’ রচনায় বলা হয়েছে যে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে প্রস্তুত খাদি বা খদ্দরের সমাদর শুধু গ্রামজীবনেই নয়, শহরের আধুনিক সমাজেও যথেষ্ট রয়েছে। তুলা থেকে হাতে সুতা কাটা হয়। গ্রামবাসী অবসর সময়ে এই সুতা কাটে। এদের বলা হয় কাটুনি। তুলা দিয়ে সুতা কাটা ও হস্তচালিত তাঁতে এসব সুতায় যে কাপড় প্রস্তুত করা হয়, সেই কাপড়ই প্রকৃত খাদি বা খদ্দর। স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বিদেশি কাপড় বর্জন করে দেশি কাপড় ব্যবহারের যে আদর্শ প্রবর্তিত হয়েছিল, তারই সাফল্যের স্বাক্ষর এই খাদি।

গ) উদ্দীপকের দেওয়া উপহারটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লোকশিল্পের কাঁসা ও পিতলের সামগ্রীকে নির্দেশ করে।

‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে কাঁসা ও পিতলের বাসনপত্র এককালে বেশ জনপ্রিয় ছিল। আজও শত শত গ্রাম্য কারিগর তৈরি করে বিচিত্র ধরনের তৈজসপত্র। প্রথমে মাটির ছাঁচ তৈরি করে তার মধ্যে ঢেলে দেয় গলিত কাঁসা। ধীরে ধীরে এ গলিত কাঁসা ঠান্ডা হয়ে আসে। তখন ওপর থেকে মাটির ছাঁচ ভেঙে ফেললেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে বদনা, বাটি, গ্লাস, থালা ইত্যাদি। তারপর এগুলো পলিশ করা হয়। এ ধরনের বাসনে নানা রকম ফুলপাতার নকশা বা ফরমাশকারীর নাম খোদাই করা থাকে; এমনকি আজকাল অতি আধুনিক গৃহসজ্জার সামগ্রী হিসেবে তামা-পিতলের থালা, ফুলদানি, ঘড়া ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। উদ্দীপকের কামাল স্থানীয় কারিগর দিয়ে পিতলের কলস তৈরি করিয়ে বন্ধুর বিয়েতে উপহার দেয়। কামালের দেওয়া উপহারটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের কাঁসা ও পিতলের সামগ্রীবিষয়ক উপর্যুক্ত বক্তব্যকে নির্দেশ করে।

ঘ) ‘আমাদের দেশের লোকশিল্পের প্রতি আমরা সবাই আগ্রহী ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে তা সংরক্ষণে সচেষ্ট হব।’-প্রধান শিক্ষকের এই মনোভাবে ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে লেখক বিলুপ্ত লোকশিল্প মসলিনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন, যার স্থান বর্তমানে জামদানি শাড়ি দখল করেছে। নকশিকাঁথার মতো শিল্পও আজ কোনো রকমে টিকে আছে। আমাদের দেশীয় কাপড় খাদি, ক্ষুুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজের হাতে বোনা মোটা পরিধেয় বস্ত্রও আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য। এ ছাড়া কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র, পোড়ামাটির কাজের ঐতিহ্য এ দেশে বহু যুগের। কাঠের কাজ, মাদুর, শীতলপাটি, এমনকি গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি শিকা, হাতপাখা, ফুলপিঠাও অবহেলার বস্তু নয়। বিচিত্র রং, নকশাই শুধু নয়, সৌন্দর্যের দিক থেকেও এগুলোর স্থান বহু উচ্চে। কাপড়ের তৈরি পুতুলগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই এসব লোকশিল্প আমাদের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। এতে দেশের বেকার সমস্যার যেমন সমাধান হবে, তেমনি সুরুচিপূর্ণ লোকশিল্প বিদেশিদের হৃদয়ে সাড়া জাগাবে বলে লেখক বিশ্বাস করেন। উদ্দীপকের কামালের স্কুলের প্রধান শিক্ষকও মনে করেন-স্থানীয় কারিগর দ্বারা যারা পিতলের তৈজসপত্র বানায়, তাদের তৈরি এরূপ লোকশিল্প নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত।  উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের কামালের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশাকেই সমর্থন করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর