বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বজয়ের যাত্রায় ওয়ালটন

মাত্র এক যুগে ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি পণ্য ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানকে গর্বের উচ্চ মহিমায় নিয়ে গেছে। বর্তমানে সব শ্রেণির ক্রেতার কাছেই প্রিয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন...

রকমারি ডেস্ক

বিশ্বজয়ের যাত্রায় ওয়ালটন

হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য বা ফ্রিজ, এসি, টিভি কিংবা অন্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনতে গেলে সবার আগে যে ব্র্র্যান্ডের নামটি আসে তার নাম সবাই একবাক্যে বলবেন ওয়ালটনের কথা। দেশের ফ্রিজ বাজারের প্রায় ৭৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ার এখন ওয়ালটনের। মাত্র এক যুগের মধ্যে ওয়ালটন ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানকে গর্বের উচ্চ মহিমায় নিয়ে গেছে। বর্তমানে সব শ্রেণির ক্রেতার কাছেই প্রিয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে জাহাজ ভর্তি করে বিলাসদ্রব্য হিসেবে বাংলাদেশে আসত ফ্রিজ, টিভি, এসির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো। কিন্তু এক যুগের ব্যবধানে সেই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন দেশে তৈরি পণ্য দিয়েই মিটছে স্থানীয় চাহিদা। জাহাজ ভর্তি করে রপ্তানি হচ্ছে সেসব দেশে, যেখান থেকে আগে বাংলাদেশে পণ্য আসত। ওয়ালটনের উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশেই বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনের হাব হিসেবে পরিণত করা। ফ্রিজ, টিভি, এসির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং এ শিল্পে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার ফলে বাংলাদেশে আজ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। যার নেতৃত্বে রয়েছে ওয়ালটন। এ শিল্পে বাংলাদেশ আমদানিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে এখন রপ্তানিমুখী দেশে পরিণত হয়েছে। ৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে ওয়ালটনের তৈরি বিভিন্ন পণ্য।

দেশের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল শিল্পের পথিকৃৎ, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক প্রয়াত আলহাজ এসএম নজরুল ইসলাম ছিলেন ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৭ সালে ৫ ছেলেকে নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স বা আরবি গ্রুপ। পরবর্তীতে যা ওয়ালটন গ্রুপ নামে পরিচিতি পায়। দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে তা পৌঁছে দিতেই ওয়ালটনের জন্ম। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার অবস্থিত। আয়তন ৭৫০ একরের বেশি। এখানে আছে ফ্রিজ, এসি, টিভি, কম্প্রেসার, লিফট, ওয়াশিং মেশিন, কম্পিউটার, মোবাইল, হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পণ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট। ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্য ওয়ালটনে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে ৯০টি প্রোডাকশন বেইজে ১০৫টিরও বেশি ক্যাটাগরির পণ্য তৈরি হচ্ছে। আর মডেল সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে ওয়ালটনের রয়েছে দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞ ও মেধাবী প্রকৌশলীদের নিয়ে শক্তিশালী রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরঅ্যান্ডআই) বিভাগ। ফলে ওয়ালটনের প্রোডাক্ট লাইনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সব পণ্য ও টেকনোলজি যুক্ত হচ্ছে। ইউরোপের জনপ্রিয় এই ব্র্যান্ডগুলো সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইনভার্টার এবং ফিক্সড স্পিড কম্প্রেসর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) মেধাসম্পদ (প্যাটেন্ট, ডিজাইন এবং সফটওয়্যার লাইসেন্স), ৫৭টি দেশে ট্রেডমার্কসহ সব স্বত্ব¡ ওয়ালটনের। খুব শিগগিরই ইউরোপীয় এই তিনটি ব্র্যান্ডের কম্প্রেসর, ফ্রিজ, টিভি, এসিসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজারজাত করবে ওয়ালটন। আন্তর্জাতিক বাজার টার্গেট করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় অপারেশনাল অফিস স্থাপন করবে ওয়ালটন। সেখান থেকে ওই ব্র্যান্ডগুলোর বৈশি^ক ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

ওয়ালটন ভবিষ্যতে উচ্চ-প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। যা ২০৪১ সালের মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। ওয়ালটনের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্যের হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই সময়ের মধ্যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত ও রপ্তানির মাধ্যমে ওয়ালটনকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত করার জন্য কাজ চলছে। যা বহির্বিশ্বে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

সর্বশেষ খবর