বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ছোটবেলার পূজা, বড়বেলার পূজা

ছোটবেলার পূজা, বড়বেলার পূজা

ছোটবেলার পূজার আনন্দটাই আলাদা। শুধু মজা আর মজা করা। এখনো সেই স্মৃতি মনে করে খুশি হই। বড়বেলা কাটে ব্যস্ততায়। তাই আনন্দস্নাত হওয়ার সময় কোথায়। পূজাকে ঘিরে এমনই অনুভূতি তারকাদের। তাদের কথা নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

বিদ্যা সিনহা মিম

ছোটবেলায় আমার পূজার বিশেষ আকর্ষণ ছিল নতুন পোশাক। বলতে গেলে সারা বছরই এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করতাম। কারণ অন্য সময়ের চেয়ে পূজার পোশাক মানে অন্যরকম বিশেষ কিছু। নতুন পোশাক পরে বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে গিয়ে হৈহুল্লোড় করতাম। আমার দাদা ও নানাবাড়ি রাজশাহী। সেখানে সব আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম। সেই মজার তুলনা নেই। বড় হওয়ার বিশেষ করে শোবিজে আসার পর ব্যস্ততার কারণে রাজশাহী যাওয়া হয় না বললেই চলে। তাই পূজা এলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। ঢাকাতেই সময় করে বিভিন্ন মণ্ডপে যাওয়া হয়।

অপু বিশ্বাস

ছোটবেলায় মহালয়ার দিন থেকে শুরু হতো আমার উৎসব। ভোরে রেডিওতে মহালয়া শোনার পর চলে যেতাম মন্দিরে। ভাস্কর তখনো প্রতিমায় রং করায় ব্যস্ত। দেখতে খুব ভালো লাগত। পূজায় প্রতিবার কম করে হলেও চারটি ড্রেস কিনতাম। প্রতিদিন এক একটি ড্রেস পরতাম। পরার আগে কেউ যদি আমার ড্রেস দেখে ফেলত তাহলে সেই ড্রেস আর পরতাম না। নতুন আরেকটা কিনে আনতাম। নতুন ড্রেসের সুবাস ছিল আমার খুব প্রিয়। আর এখন ব্যস্ততার কারণে কখন পূজা আসে আর কখন যায় টেরই পাই না। নতুন ড্রেস পরার ছোটবেলার সেই ভালো লাগা এখন আর নেই।

চঞ্চল চৌধুরী

ছোট বেলায় ঢাকের তালে তালে প্রতিমা বিসর্জন দিতে নৌকায় উঠতাম। আহা সে কী আনন্দ। ঢাকের তাল হচ্ছে দুর্গাপূজার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঢাক ছাড়া দুর্গাপূজার কথা কল্পনাই করা যায় না। কী যে ভালো লাগত  তা বলে বোঝাতে পারব না। নতুন জামা কাপড় পরে মণ্ডপ আর আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের বাসায় ঘুরে বেড়াতাম। সেই মজা আর আনন্দ আজ হারিয়ে গেছে। ছোটবেলার কথা মনে পড়লে মনটা কষ্টে ভরে যায়। ব্যস্ততার কারণে এখন পূজার আনন্দ কী তা আর বুঝতে পারি না। আমার গ্রামের বাড়ি পাবনা। সময় সুযোগ পেলে এখনো পূজায় বাড়ি চলে যাই। কিন্তু হারানো দিনকে আর ফিরে পাই না।

মৌটুসী বিশ্বাস

ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে পূজার আনন্দে ভাসতাম। সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। মণ্ডপ আর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে বেড়াতে সুন্দর দিন আর নির্ঘুম রাত কেটে যেত। পূজার বিশেষ খাবার আর পোশাক ছিল আমার কাছে আনন্দের প্রধান উপাদান। কত সুন্দর করে মণ্ডপ আর প্রতিমা সাজানো হতো। ছোট বেলায় অবাক হয়ে তা দেখতাম। প্রতিমা বিসর্জনের সময় কখনো কখনো পতেঙ্গা চলে যেতাম। সেই দিনগুলো এখন কেবলই স্মৃতি। এখন ব্যস্ততার কারণে গ্রামের বাড়ি আর যাওয়া হয় না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় সুযোগ মতো মণ্ডপে ঘুরে বেড়াই।

অপর্ণা ঘোষ

আমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম। দামপাড়ায় বাসা। ছোট বেলায় শহরের কালীবাড়ি, জেএমসেন হল, প্রবর্তক, শিববাড়িসহ সব বড় ছোট মণ্ডপে দিনরাত আনন্দ করে ঘুরে বেড়াতাম। সঙ্গে অবশ্যই বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন থাকত। প্রতিমা বিসর্জনের দিন পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকতে চলে যেতাম। নতুন কাপড় পরে এই ঘুরে বেড়ানোর মজা কেমন ছিল তা এখন আর বলে বোঝাতে পারব না। আমার কাছে পূজা মানেই হলো পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সঙ্গে পূজায় সুস্বাদু খাবার খাওয়া ও আনন্দে মেতে ওঠার তুলনা নেই। পূজার সময় যত কাজ থাকুক না কেন এখনো চট্টগ্রাম চলে যাই।

জ্যোতিকা জ্যোতি

আমার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ। এই শহরকে পূজার শহর বলা হয়। তাই ছোট বেলা এখানে পূজার সময় কেমন মজা করতাম তা বলে বোঝানো অসম্ভব। পূজার সময় কখনো বাড়ির বাইরে থাকিনি। পরিবারের সঙ্গে পূজার আনন্দ উদযাপন করেই মজা পেতাম। সবাই মিলে মণ্ডপ আর আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়ার মজাটা এখনো দারূণভাবে উপভোগ করি। তবে ছোট বেলার সেই আনন্দ আর এখনকার আনন্দের মধ্যে অবশ্যই একটা তফাত আছে। যেমন ছোট বেলায় প্রতিমা আর মণ্ডপের ঝলমলে সাজ সজ্জা দেখলে অবাক হতাম। অন্যরকম খুশি লাগত। এখনো লাগে। তবে তখনকার মতো নয়। ব্যস্ততা আর আনন্দ, দুটি একসঙ্গে হয় না।

সর্বশেষ খবর