শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাতে ‘ভূত’ আসত কৃষ্ণপক্ষের সেটে

শামছুল হক রাসেল

রাতে ‘ভূত’ আসত কৃষ্ণপক্ষের সেটে

মেহের আফরোজ শাওন

‘এটি একটি চমত্কার গল্প। এ ছাড়া আমার খুব প্রিয় একটি উপন্যাসও বটে। বহুল পঠিত উপন্যাসের চলচ্চিত্র রূপ দিয়ে পাঠকদের সেই কল্পনাকে স্পর্শ করা খুব কঠিন’— নিজের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এমনটাই বললেন মেহের আফরোজ শাওন। এ ছাড়া জানালেন ক্যামেরার পেছনের কিছু গল্পও। ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের গল্পে এর আগে শাওন অনেকগুলো নাটক পরিচালনা করেছেন। এবারই প্রথম সিনেমা পরিচালনা করলেন। আর এতে তার পরিচালনায় প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন

 

জনপ্রিয় নায়িকা মাহি। এতে তার বিপরীতে রয়েছেন রিয়াজ। সুতরাং এই জুটির মাধ্যমে পর্দায় অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশেল হচ্ছে। বড় পর্দার প্লাটফর্ম অনেকটাই ভিন্ন ছোট পর্দা থেকে। এ প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘সিনেমা অনেক বিশাল একটা মাধ্যম। শতাধিক কলাকুশলী মিলে একটি টিম। যেখানে প্রত্যেকে ইমপরটেন্ট। একজন দায়িত্বে একটু অবহেলা করলে পুরো টিমকে এর মাশুল দিতে হয়। টিমের সবার কাছেই ফিল্মটা অনেক কাছের। কাজ ভালো হলে সবার মধ্যেই একটা উত্সব উত্সব ভাব চলে আসে। আর কোনো একটা দৃশ্য একটু মনমতো না হলে সবারই মন খারাপ হয়ে যায়। তাই টিম বাছাই ঠিকমতো হলে কাজটা অনেক সহজ আর আনন্দময় হয়ে যায়।’ ছবি নির্মাণের এ ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন, আশা এবং চেষ্টা তো থাকবেই যেন আরও ছবি বানাতে পারি। বাকিটা সময়ের হাতে।’ এ ছাড়া এ ছবিতে রিয়াজ-মাহির রসায়ন নিয়ে জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘রিয়াজ ভাই খুব ভালো অভিনেতা। হুমায়ূন আহমেদের আগের সিনেমাগুলোতে তিনি পরীক্ষিত। মাহি এই সময়ের একজন সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রী। ওর মধ্যে ভালো কাজ করার চেষ্টা লক্ষণীয়। তাদের দুজনকে একসঙ্গে বেশ মানিয়েছে। আমার ধারণা ওদের রসায়ন দর্শকদের ভালো লাগবে।’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছবি তৈরি ও এর বাজার অর্থাৎ দর্শকদের প্রত্যাশা এবং সফলতার মধ্যে প্রায়ই ফারাক দেখা যাচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও বেগবান করতে কি করা উচিত— ‘দেখুন, ছবির বাজার তৈরিতেও আমাদের টিম হয়ে কাজ করতে হবে। হলগুলোকে বাঁচাতে হবে। প্রযোজক, পরিচালক সর্বোপরি দর্শকদেরও কাজ করতে হবে। প্রযোজকদের ভালো ছবি, মৌলিক গল্প নিয়ে ছবিতে লগ্নি বাড়াতে হবে, পরিচালকদের গল্প, শিল্পী এবং কলাকুশলী বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে। সব কলাকুশলীকে ছবির জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে হবে। সর্বোপরি দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখতে হবে। দেখেন একটা ছবি তৈরি করতে একজন প্রযোজক অনেক বড় রিস্ক নেন। দর্শকরা যদি হলে গিয়ে ছবি না দেখেন, প্রযোজকদের লগ্নি করা টাকা যদি উঠে না আসে, তাহলে তারা পরবর্তীতে ছবিতে লগ্নি করা হয় কমিয়ে দেবে নয় বন্ধই করে দেবে। হলগুলো এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে বানানো ছবিগুলোকে দর্শকরা যদি উত্সাহ না দেন তাহলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প টিকে থাকবে কি করে?’

‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিতে মাহি ও তানিয়া আহমেদ

শুটিংয়ের কোনো মজার স্মৃতি বা ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা খুবই অল্প সময়ে ছবিটির শুটিং করেছি। দিন-রাত এক করে কাজটি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে শুটিংয়ের প্রতিটি দিন-রাত ৮টার পর কোনো না কোনো অঘটন ঘটত আমাদের সেটে। হয় জেনারেটর নষ্ট হয়ে যেত, নয় ক্যামেরা হ্যাং হয়ে যেত। কোনো দিন দেখা গেল লাইট ফেটে আরেকটু হলেই কারও মাথায় পড়ত। রিয়াজ ভাই তো হার্ট অ্যাটাকই করলেন রাত ৮টায়। ইউনিটের লোকজন বলাবলি করত ‘রাত ৮টায় ভূতের আবির্ভাব হয় কৃষ্ণপক্ষের সেটে।’

আগামী শুক্রবার দেশব্যাপী মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ছবিটি। দর্শকদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হবে বলে মনে করেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের একটি চমত্কার ভালোবাসার গল্প ‘কৃষ্ণপক্ষ’। আমি খুব সহজ ভঙ্গিতে এই চমত্কার গল্পটি দেখাতে চেয়েছি তার ভক্ত, পাঠক ও দর্শকদের। আশা করি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। খুব জনপ্রিয় উপন্যাস পড়ার সময় সব পাঠকই কিন্তু তাদের নিজেদের মতো করে চরিত্রগুলো এবং দৃশ্যগুলো কল্পনা করে নেয়। বহুল পঠিত উপন্যাসের চলচ্চিত্র রূপ দিয়ে পাঠকদের সেই কল্পনাকে ছুঁতে পারা খুব কঠিন। সেই কঠিন কাজটির ফলাফল দর্শকদের হাতে। ফলাফল যাই হোক আশা থাকবে দর্শক যেন হলে গিয়ে ছবি দেখে তার ফলাফল দেন। তাদের ফলাফল মাথা পেতে নেব।

সর্বশেষ খবর