শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিনেমা হলে দর্শক ফিরবে যেভাবে

প্রদর্শকদের অভিযোগ মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবির অভাবে সিনেমা হল দর্শকশূন্য। সিনেপ্লেক্সে সব শ্রেণির দর্শক যায় না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী? এ বিষয়ে কয়েকজন প্রদর্শক ও পরিবেশকের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

সাইফুল ইসলাম

[চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি]

চলতি সপ্তাহে দুটি ভালো মানের ছবি মুক্তি পাওয়া সত্ত্বেও সিনেমা হলে তেমন দর্শক নেই। আসলে মানসম্মত ছবির অভাবে দর্শক সিনেমা হলে যেতে ভুলে গেছে। এখন ভালো ছবি প্রদর্শন হলেও তারা আর ফেরে না। ফলে সিনেমা হল আর টিকিয়ে রাখা কতটা সম্ভব তা এখন প্রশ্নের মুখে। এর জন্য সরকারও দায়ী। সরকার সময়মতো এফডিসিতে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ৭/৮ বছর আগে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন শুরু হয়। আর এফডিসি এখনো এক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। সারা দেশের শপিংমলে সিনেপ্লেক্স নির্মাণে বাধ্য করতে পারেনি সরকার। সরকারকে বলব যখন আমাদের এখানে মানসম্মত ছবি নেই তখন সীমিত আকারে ভারতীয় ছবি একসঙ্গে মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে হয়তো অবস্থার অনেকটা উন্নতি হবে।

 

কাজী ফিরোজ রশীদ

[চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি]

সিনেমা হলে দর্শক ফেরাতে হলে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি দরকার। ভালো ছবির অভাবে দর্শক অনেক আগেই বিদেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলবন্দী হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়ার রেওয়াজ অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। কারণ উন্নতমানের ছবির অভাব। অনেকে বলছে সিনেপ্লেক্স বাড়লে দর্শক বাড়বে। আমি এই কথার সঙ্গে একমত নই। সিনেপ্লেক্সের দর্শক সীমিত। টিকিটের দাম বেশি। তাই সব শ্রেণির দর্শক সেখানে যেতে পারে না। এখনো যদি সারেং বৌ, নয়নমণি, রূপবান, ময়নামতি, অবুঝমন কিংবা নীল আকাশের নিচের মতো ছবি নির্মাণ হয় তাহলে অবশ্যই দর্শক আবার সপরিবারে সিনেমা হলে ফিরবে। পর্যাপ্ত দর্শক রয়েছে গ্রামগঞ্জে। তারা এ ধরনের ছবি দেখতে চায়। এ কথায় গল্প, গান, নির্মাণ আর অভিনয় মানসম্মত হলে সিনেমা হলে দর্শক ফিরবে।

 

ইফতেখার নওশাদ

[কর্ণধার, মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহ]

মানসম্মত ছবি, শিল্পী, নির্মাতা নেই। দর্শক কেন সিনেমা হলে আসবে। সিনেমা হল কীভাবে বাঁচবে। এ অবস্থার উন্নয়নে ভারতীয় বাংলা এবং হিন্দি ছবি একইসঙ্গে দুই দেশে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে হিন্দি ছবি বাংলায় ডাব করে নেওয়া হবে। দর্শক তো ছোট পর্দায় সেন্সরবিহীন হিন্দি ছবি দেখছেই। এতে যখন দেশীয় সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে না তাহলে সেন্সর করা ভারতীয় ছবি সিনেমা হলে চালালে সমস্যা কোথায়। যৌথ প্রযোজনার ছবি দর্শক সাড়া পাচ্ছে। দর্শক ভ্যারিয়েশন চায়। এক নায়ক বা একই নির্মাণ আর কত দেখবে। ভারতীয় ছবি চালালে প্রতিযোগিতায় গিয়ে এখানেও মানসম্মত ছবি নির্মাণ হবে। শুধু সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করে তো লাভ হবে না। পর্যাপ্ত ছবি দরকার। যেভাবেই হোক আগে চাহিদামতো দর্শক পছন্দের ছবি  দিতে হবে। না হলে সিনেমার ব্যবসা শেষ হয়ে যাবে।

 

মিয়া আলাউদ্দীন

[সাধারণ সম্পাদক, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি]

ছবির অভাবে সাধারণ সিনেমা হল বন্ধ হতে হতে এখন প্রায় নিঃশেষের পথে। যেখানে ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা যাচ্ছে না সেখানে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হবে কোন ভরসায়। সিনেপ্লেক্স নির্মাণ ব্যয়বহুল। ছবি না থাকলে ব্যয়বহুল সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ঝুঁকি নেবে কে? আর লোকসান গুনে অবশিষ্ট সিনেমা হল কতদিন টিকিয়ে রাখা যাবে। সোজা কথা হচ্ছে সিনেমা হল বাঁচাতে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে ভারতীয় বাংলা ছবি দুই দেশে একসঙ্গে মুক্তির অনুমতি দিতে হবে। একই সঙ্গে সার্ভারের মাধ্যমে ছবি মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে পাইরেসি রোধ করা যাবে। পাইরেসি রোধ করা না গেলে যত ভালো ছবিই হোক তা চালানো যাবে না। দর্শক হলবিমুখ থেকে যাবে। সরকারকে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর