মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুন শিল্পীরা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন না কেন

চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট দীর্ঘদিনের। শিল্পী সংকটের কারণে ছবি নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন শিল্পী প্রচুর আসছেন। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন না। তাই শিল্পী সংকটও কাটছে না। কেন তারা প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে বেশ কজন চলচ্চিত্রকারের মন্তব্য তুলে ধরেছেন—আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রাজ্জাক

চলচ্চিত্রে অনেক ছেলে মেয়ে আসছে। অভিনয় করছে। শুরুতে অনেকে ঝরে যাচ্ছে। এ জন্য মূলত দুটি বিষয় দায়ী। এখন যারা অভিনয়ে আসছে তারা সহজেই তারকা ও অল্প পরিশ্রমে অর্থবিত্তের মালিক হতে চায়। অভিনয় শেখার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। আমরা যখন অভিনয়ে আসি তখন আমাদের কাছে টাকা পয়সা মুখ্য ছিল না।  সত্যিকারের অভিনয় করার চেষ্টাই করতাম। আউটডোরে  কখনো পাঁচ তারকা বা বিলাসবহুল হোটেল খুঁজিনি।

শুটিং স্পটে মাটিতে পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করিনি। সময়মতো সেটে পৌঁছতাম। এখন এই অবস্থা নেই বলেই নতুন যারা আসছে তারা নিজেরাও দাঁড়াতে পারছে না এই শিল্পকেও কিছু দিতে পারছে না। নতুন নির্মাতা যারা আসছে তাদেরও অভিজ্ঞতা তেমন নেই। তারা শিখিয়ে পড়িয়ে অভিনয় আদায় করে নিতে পারছে না। এ অবস্থার অবসান প্রয়োজন।

 

সুচন্দা

অভিনয় হচ্ছে ধ্যানের মতো। তাই একাগ্রচিত্তে অভিনয় করতাম। অভিনয় শেখার চেষ্টা করতাম। আসলে যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে সিনসিয়ারিটি না থাকলে তা সফল হয় না। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে একাগ্রতার অভাব আছে। অভিনয় শিল্পী হওয়ার চেয়ে কীভাবে সহজে ধনী হওয়া যায় সেই চেষ্টাই তাদের বেশি। অভিনয় খুব সহজ বিষয় নয়।

এর জন্য প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এই বিষয়টিই এখনকার শিল্পীরা বোঝে না। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস আরিফিন শুভ আর মাহির পর দর্শক গ্রহণযোগ্যতা আর কেউ অর্জন করতে পারেনি। কারণ অভিনয়ের প্রতি তাদের একনিষ্ঠতা নেই। নতুন নির্মাতারও জ্ঞানের অভাবে নতুন শিল্পীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে পারছে না। এতে এই শিল্প পড়ছে গভীর সংকটে। এই অবস্থার উত্তরণে নিজ অবস্থান নিয়ে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।

 

আমজাদ হোসেন

শিল্পী সংকটের কারণে সিনিয়র নির্মাতারা এখন আর ছবি নির্মাণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে শিল্পীর নামেই ছবি চলত। যেমন রাজ্জাক, শাবানা, ফারুক, ববিতা, আলমগীর, মৌসুমী, ফেরদৌস, শাবনূর, ওমর সানি, সালমান শাহসহ অনেকে। এখন সেই অবস্থা নেই। নতুনরা অভিনয়ে এসেই বড় লোক হওয়া এবং তারকা খ্যাতির জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। অভিনয় শেখার ধারে কাছেও যায় না। ফলে তাদের ছবি কেউ দেখে না এবং অকালেই ঝরে যায়।

এখনো অনেক ভালো নির্মাতা আসছে। কিন্তু শিল্পীর অভাবে তারা ভালো নির্মাণ করতে পারছে না। অনেক নির্মাতার আবার অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তারা শিল্পী তৈরিতেও ব্যর্থ হচ্ছে। শিল্পীর কাছ থেকে শতভাগ কাজ আদায় করে নেওয়ার দায়িত্ব নির্মাতার। আর শিল্পীকে সত্যিকারের শিল্পী হতে আসতে হবে।

 

নারগিস আকতার

চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট আছে এই কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। প্রচুর নতুন ছেলেমেয়ে অভিনয়ে আসছে। অনেক নির্মাতা নতুনদের ক্যারেক্টার অনুযায়ী প্রমোট করছে না। তারা শুধু কাস্ট ভেল্যুর পেছনে ছুটছে। এতে নতুন শিল্পীরা সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। একজন শিল্পী যখন উপযুক্ত চরিত্র পায় না তখন অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ আর বাড়ে না। এর জন্য নির্মাতাকেই দায়ী করব।

একজন নির্মাতার কাজ হচ্ছে প্রপার ক্যারেক্টর দিয়ে প্রপার আর্টিস্ট তৈরি করা। কাজ আদায় করে নেওয়া। তারা এটি পারছে না বলে ছবি ব্যবসা করে না নতুন মুখরা তারকা হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পায় না। তাই শিল্পী সংকট সমাধানে আগে নির্মাতাকে সচেতন হতে হবে। আমার ক্ষেত্রে বলব চরিত্র অনুযায়ী কাস্ট করেছি বলে আমার ছবি ও শিল্পী সফল হয়েছে।

 

বদিউল আলম খোকন

নতুনদের অভিনয়ে পেশাদারিত্বের যথেষ্ট অভাব। তারা অভিনয় নয়, টাকার পেছনেই ছুটছে। ফলে তাদের আর শিল্পী হয়ে ওঠা হয় না। সর্বশেষ মাহি আর পরীমণি ছাড়া বাকিদের অভিনয়ের প্রতি মমতা নেই। জীবন চালাতে টাকার প্রয়োজন সত্যি। কিন্তু তার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। চলচ্চিত্র ব্যবসার বর্তমান অবস্থা বুঝতে হবে। বাপ্পী ছবি প্রতি ৮/১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দাবি করে। কিন্তু তার ছবি থেকে আয় ৪০/৫০ লাখ টাকার বেশি নয়।

তাকে যদি ৮/১০ লাখ টাকা দিয়ে ছবি বানাতে হয় তা হলে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াবে ১ কোটি টাকার মতো। মানে প্রায় ৫০ লাখ টাকা লোকসান। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে নির্মাতা। পরীমণিকে সিনসিয়ারিটি আরও বাড়াতে হবে। এক কথায় নতুনদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ, চেষ্টা আর সময়জ্ঞান থাকতে হবে। না হলে চলচ্চিত্র শিল্প মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

সর্বশেষ খবর