বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঈদে কেমন নাটক চাই

ছোট পর্দায় ঈদের আনন্দ অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নাটক। একসময় ঈদের নাটক দেখতে দর্শক মুখিয়ে থাকত। নাটকের আবেদন মনে দীর্ঘস্থায়ী হতো। দুই হাজার সালের শুরু থেকে এ অবস্থার পরির্তন হয়েছে। ঈদে নাটক দেখার প্রবণতা কমে গেছে। কিন্তু কেন? প্রশ্ন জেগেছে ঈদে তাহলে কেমন নাটক চাই। সে কথা বলেছেন কয়েকজন নাট্যব্যক্তিত্ব। তাদের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আমজাদ হোসেন

একটা সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদ আয়োজনই ছিল সর্বেসর্বা। সেই বিটিভি যুগে ঈদের অনুষ্ঠানের যে তৃপ্তি দর্শক পেত তার সিংহভাগই এখন হারিয়ে গেছে। নিত্যনতুন টিভি চ্যানেল আসছে, আর আসছে অনুষ্ঠানের ভিন্নতা। হাজারো অনুষ্ঠান হচ্ছে। হারিয়েও যাচ্ছে। যতক্ষণ দেখা হচ্ছে, ততক্ষণই। পরে আর কেউ মনে রাখছে না। এখনকার ঈদে টিভি অনুষ্ঠান এবং নাটক দর্শকের কথায় মনে রাখার মতো হচ্ছে না। এতে নির্মাতার দোষ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসাবান্ধব হয়ে পড়েছে নাটক। এর পেছনে অসুস্থ প্রতিযোগিতাও দায়ী। টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে এখন একটা প্রতিযোগিতা জোরেশোরেই চলছে, কার আয়োজন কত দিনব্যাপী হয়। পাঁচ দিন, সাত দিন ছাড়িয়ে ঈদ অনুষ্ঠান চলে দশ দিনে। বাধ্য হয়ে নির্মাতারা অনুষ্ঠান বানিয়েই যান। এত কাহিনী তারা কোথায় খুঁজে পাবেন? এমন হয়, একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখে তা দ্বিতীয়বার পড়ার সময়ও অনেকে পান না। আবার শোনা যায়, কোনো কোনো নাটকের স্ক্রিপ্ট থাকে না। মানসম্মত নাটক যে একেবারেই নির্মাণ হয় না তা কিন্তু নয়। পরিমাণ কম। শুধু ঈদ নয়, সবসময়ই মানসম্মত গল্প, নির্মাণ আর অভিনয়ের নাটক দেখতে চায় দর্শক। এই অবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

 

গিয়াসউদ্দীন সেলিম

ঈদে এককথায় ভালো নাটক চাই। সেই ভালোর সংজ্ঞা হচ্ছে মানসম্মত গল্প, দক্ষ নির্দেশনা, মানানসই অভিনয় থেকে শুরু করে আদ্যোপান্ত। দুঃখের বিষয় হলো ভালো নাটক নির্মাণ করা মুশকিল। মেধাবী নাট্যকার এবং নির্মাতা থাকলেও উপযুক্ত বাজেট নেই। পাশাপাশি উন্নত স্ক্রিপ্ট রাইটারেরও অভাব রয়েছে। আগে ছিল ১টি টিভি চ্যানেল। এখন হয়েছে ১০০। তাই নাটকও বেড়েছে। দর্শকও ভাগ হয়েছে। পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। বাড়েনি বাজেট। তাই গল্পকে দর্শকের সামনে জীবন্ত করে তুলে ধরা যাচ্ছে না। দর্শক তাতে প্রাণের অভাব বোধ করছে। নাটকে প্রাণের সঞ্চার করতে হলে টিভি চ্যানেলগুলোর যথাযথ বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে টিভি চ্যানেলগুলো এখনো বিজ্ঞাপন নির্ভর। যতক্ষণ এগুলোকে পে চ্যানেলে রূপান্তর করা না যাবে ততক্ষণ তারা যৌক্তিক বাজেট দিতে পারবে না। তাই এ  বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। একসময় শুধু একটি টিভি চ্যানেল ছিল।  এতে কাজের মান বিচার করা সম্ভব ছিল না। এখন চ্যানেল বেড়ে যাওয়ায় সহজেই তুলনা করা যাচ্ছে। এতে ভুলত্রুটি বের করা সহজ হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলেই ভালো নাটকের অভাব আর থাকবে না।

 

অমিতাভ রেজা

শুধু ঈদে নয়, সবসময় সবাই ভালো নাটক চায়। নির্মাতা ভালো হলে মানসম্মত নাটক পাওয়া অসম্ভব নয়। এখন ভালো নাটক নির্মাণের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে বাজেট স্বল্পতা। দুঃখের বিষয় হলো বাজেট অসম্ভব রকমভাবে কমে গেছে। কম বাজেট দিয়ে উন্নত নির্মাণ কীভাবে সম্ভব। ভাবতেও কষ্ট হয় যে নাটক নির্মাণের জন্য টিভি চ্যানেলগুলো মিনিমাম বাজেটও দেয় না। এই বাজেট দিয়ে আমার পক্ষে নির্মাণ সম্ভব নয়। যারা বলেন আগে ভালো নাটক নির্মাণ হতো তারা আসলে ২০১০ সালের আগের কথা বলছেন। ওই সময়ের নির্মাতারা এখন আর নির্মাণে নেই। কারণ একটিই— বাজেট স্বল্পতা। অনেকে বলেন গল্পের অভাবে ভালো নাটক হয় না। একথার সঙ্গে আমি একমত নই। বাংলাদেশে গল্পের কোনো অভাব নেই। আছে গল্প নির্বাচনের মেধার অভাব। কেউ আবার বলেন স্ক্রিপ্ট রাইটারের অভাবের কথা।

আমি বলব তাদের যদি উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয় তাহলে মানের ক্ষেত্রে তাদের আর কোনো অবহেলা থাকবে না। মানে দায়সারা গোছের কাজ তারা এমনিতেই করবে না।

তাই ভালো নাটক পেতে হলে আগে যথাযথ বাজেট নিশ্চিত করতে হবে।

এর কোনো বিকল্প আছে বলে মনে করি না।

 

শিহাব শাহীন

ঈদে অবশ্যই ভালো লাগার মতো নাটক চায় সবাই। যে নাটক হবে ব্যতিক্রমী। যাতে থাকবে বিনোদন। এ জন্য অবশ্যই গল্প, নির্মাণ, অভিনয় থেকে শুরু করে সবই হতে হবে মানসম্পন্ন। তবে এখন ভালো নাটক নির্মাণ হচ্ছে না একথার সঙ্গে আমি একমত নই। যারা একসময় বিটিভির নাটক দেখতেন এবং তখন যারা নির্মাণ ও অভিনয় করেছেন তারা হয়তো এখনকার  নাটককে মান হীন আখ্যা দিয়ে হাপিত্যেশ করেন। আমার কথা হচ্ছে আগে একটি মাত্র চ্যানেল ছিল। বিটিভি। তাতে দর্শক ছিল হয়তো ২০ লাখ। এখন চ্যানেল বেড়েছে। একইসঙ্গে দর্শকের সংখ্যা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি। মানে দর্শক ও নাটক দুই-ই বৃদ্ধি পেয়েছে।

একই সঙ্গে মানও উন্নত হয়েছে।

হ্যাঁ, একটা বিষয় হচ্ছে আগে অনেক তারকা শিল্পী ছিলেন। এখন কমে গেছে। সেই তারকাদের ভক্তরা এখনো সেসব শিল্পীদের খুঁজেন। না পেয়ে নাটক বিমুখ হন। বাজেট কম থাকাসহ নানা কারণে কিছু মানহীন কাজ যে একেবারে হচ্ছে না তা নয়।

আসলে দর্শক কী চায় তা গবেষণা,  যথাযথ টিআরপি ও রেটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে মানের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর