রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবার বিতর্কে সেন্সর বোর্ড

আলাউদ্দীন মাজিদ

‘মেন্টাল’ চলচ্চিত্রের নতুন নাম ‘রানা পাগলা’ নিয়ে চলচ্চিত্রসহ সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ ধরনের নামকরণকে আবারও অবক্ষয়ের শুরু বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। সেন্সর বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত শাকিব খান ও তিশা অভিনীত ‘মেন্টাল’ ছবিটি  ‘রানা পাগলা’ নামে সেন্সর ছাড় পায়। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, এ ধরনের নাম মার্জিত নয়। এমন নামে একবার যদি কোনো ছবি ছাড় পেয়ে যায় তাহলে অনেকে উৎসাহিত হয়ে কুরুচীপূর্ণ, বিকৃত, অশোভন নামে আবার ছবির নামকরণ করা শুরু করবে। যেটা হয়েছিল নব্বই দশকের শেষভাগে অশ্লীল চলচ্চিত্রের সময়ে। তখন ‘খাইছি তোরে’ জাতীয় নামে চলচ্চিত্রের নামকরণে মারাত্মক অবক্ষয় নেমে আসে এবং সিংহ ভাগ দর্শক দেশীয় চলচ্চিত্রবিমুখ হয়। ‘রানা পাগলা’ নামকরণের ঘোর আপত্তি জানিয়ে ছবির অভিনেতা শাকিব খান তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সেন্সর বোর্ডে এ নাম পাল্টানোর আবেদন করলেও কেউ তাতে সাড়া দেয়নি। তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ বলেন, আসলে প্রযোজক যে নাম দেবে তাই থাকবে। নাম পাল্টানোর জন্য কেউ আমাদের কাছে আবেদন করেনি। করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেত। শাকিব খানের দাবি বৃহস্পতিবার সকালে আবেদন করেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, নামটি  মোটেও আপত্তিকর মনে হয়নি। কুিসতও নয়। আদর করে পাগলা বলে যে কাউকে ডাকা যায়। এতে মন্দ কিছু দেখছি না। তাই সমিতি নামটি নিবন্ধনের অনুমতি দিয়েছে।  চলচ্চিত্র যেহেতু দেশের সবচেয়ে বড় ও জাতীয় গণমাধ্যম তাই নাম নির্বাচনসহ সবক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হতে হবে, বলছেন চলচ্চিত্রকাররা। সেন্সর বোর্ড নীতিমালার এসআরও ১৯৮৫-এর ধারা ১-এর উপধারা ‘এ’-তে বর্ণিত আছে— ‘বাংলাদেশ বা এর জনগণের সমসাময়িক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও পোশাকের পরিপন্থী কোনো বিষয় চলচ্চিত্রে থাকতে পারবে না। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, ‘রানা পাগলা’ জাতীয় নাম সুস্থ সংস্কৃতির পরিপন্থী। চলচ্চিত্রকার ও সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য নায়ক রাজ রাজ্জাক উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, জাতি হিসেবে এই দৈন্যতা ও ব্যর্থতা আমাদের। সেন্সর নীতিমালায় এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ও কঠোর ব্যবস্থা থাকা দরকার ছিল। আমাদের দেশে সুন্দর নামের অভাব নেই। অবুঝ মন, অনন্ত প্রেম, অশ্রু দিয়ে লেখা, সারেং বউ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সীমানা পেরিয়ে, ছুটির ঘণ্টার মতো সুন্দর নামে অনেক ছবি নির্মাণ হয়েছে। এমন মার্জিত নাম বাদ দিয়ে কেন কার স্বার্থে বিকৃত নাম রাখতে হবে জানি না। চলচ্চিত্র হচ্ছে জাতীয় গণমাধ্যম। তাই দেশ ও জাতির ক্ষতি হয় এমন নাম চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা উচিত কিংবা কাম্য নয়। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন বলেন, এই দৈন্যতা লজ্জার। পৃথিবীর বুকে ভাষার জন্য জাতি হিসেবে একমাত্র বাঙালিই ত্যাগ স্বীকার করেছে। সংস্কৃতির মধ্যে চলচ্চিত্র হচ্ছে অন্যতম শক্তিশালী প্রধান গণমাধ্যম। তাই এর নাম রুচিসম্মত ও মার্জিত হওয়া উচিত। শাকিব খান বলেন, এটি আমার অভিনীত ছবি বলে আমি এই নামের বিরোধিতা করছি না। এমন রুচিহীন নাম ব্যবহারের অনুমতি যদি একবার দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এটি নিয়মে পরিণত হবে। আগের মতো চলচ্চিত্র জগতে আবার অস্থিরতা দেখা দেবে। তাই একজন নায়ক ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি এবং সর্বোপরি একজন নাগরিক হিসেবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে মনে হয়েছে এর প্রতিবাদ করা উচিত। নাহলে চলচ্চিত্র শিল্প আবার ধ্বংসের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রের উন্নয়নে যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরতরা নানাভাবে এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছে বলে উন্নয়নের বদলে অধঃপতনই হচ্ছে। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, সেন্সর বোর্ডে অতীতেও নানা অব্যবস্থাপনা ছিল। যার কারণে চলচ্চিত্রকারদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এটি এখনো আধুনিক হয়নি। অশ্লীল চলচ্চিত্র ছাড় দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিল। এখনো বোর্ড যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।

সর্বশেষ খবর