সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঈদের ছবি : উপচে পড়া দর্শক

তুমুল লড়াইয়ে শাকিব-জিৎ

আলাউদ্দীন মাজিদ

তুমুল লড়াইয়ে শাকিব-জিৎ

শাকিব খান, জিৎ

শীর্ষ নায়ক শাকিব খান আবারও প্রমাণ করলেন তিনিই সেরা। ঈদে এই নায়কের তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কলকাতার জিৎ। মানে এবারের ঈদে বড় পর্দায় চলছে শাকিব-জিতের তুমুল লড়াই। এই লড়াইয়ে এ পর্যন্ত শাকিব খানই বিপুলভাবে এগিয়ে আছেন। ঈদে শাকিব অভিনীত যে তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে সেগুলো হলো— শিকারী, সম্রাট ও রানা পাগলা দ্য মেন্টাল। এর মধ্যে ‘শিকারী’ ব্যবসার দিক দিয়ে এখনো শীর্ষে আছে। বাকি দুটিও আগ্রহ নিয়ে দর্শক দেখছে। শিকারীর পরেই দর্শক ক্রেজে পরিণত হয়েছে শাকিব-অপু জুটির ‘সম্রাট’ ছবিটি। অন্যদিকে জিৎ অভিনীত ছবিটি হলো ‘বাদশা’।

চলচ্চিত্র বুকিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে ‘শিকারী’ ছবির গড় ওপেনিং কালেকশন ছিল শতকরা ৯৮ ভাগ। বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই কালেকশন ধরে রেখেছে ছবিটি। শাকিবের ‘সম্রাট’ ছবির ওপেনিং কালেকশন ছিল শতকরা ৬৬ ভাগ। আর ‘মেন্টাল’ ৬০ ভাগ। বুকিং এজেন্সির তথ্যমতে জিৎ অভিনীত ‘বাদশা’ ছবির গড় ওপেনিং কালেকশন ছিল শতকরা ৮৮ ভাগ। মানে শাকিবের ‘শিকারী’র পরেই জিতের ‘বাদশা’র অবস্থান।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ঈদে চারটি ছবি মুক্তি পেলেও মূলত প্রতিযোগিতা চলছে ‘শিকারী’ ও ‘বাদশা’র মধ্যে। মানে শাকিব-জিতের লড়াই জমে উঠেছে। এ লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন শাকিব খান। সারা দেশে একই চিত্র। মিয়া আলাউদ্দীনের কথায় শাকিব খানই একমাত্র হিরো যিনি দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রচণ্ড খরায় স্বস্তির বৃষ্টি বর্ষণ করে চলেছেন। মানে শাকিব এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বী এবং সেরা।

রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলে চলছে ‘শিকারী’। এই সিনেমা হলে ঈদের দিন থেকে উপচে পড়া দর্শক। কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে দর্শকদের ব্ল্যাকে টিকিট কিনতে হচ্ছে। মধুমিতার ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, অনেক দিন পর সিনেমা হলে দর্শকের ভিড় জমেছে। ছবিটিতে শাকিবের নতুন লুক ও অন্যরকম অভিনয় দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে। তাই বারে বারে তারা ছবিটি দেখছে। তাছাড়া গল্প নির্মাণ ও কলকাতার নায়িকা শ্রাবন্তী এ ছবির বাড়তি আকর্ষণ। স্টার সিনেপ্লেক্সে চলছে বাদশা, শিকারী এবং সম্রাট। এই সিনেপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে ‘শিকারী’ ও ‘বাদশা’ দেখতে দর্শক বেশি ভিড় করছে। এর পরেই ‘সম্রাট’ ছবির অবস্থান। আনন্দ সিনেমা হলে চলছে ‘সম্রাট’। এই সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক শামসুল আলম বলেন, শাকিব-অপু জুটির এই ছবিটি বেশ দর্শক টানছে। তার কথায় ঢালিউডে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শাকিব-অপু জুটির বিকল্প নেই। এবারের ঈদে এই জুটির ‘সম্রাট’ ছবিটি আবারও তা প্রমাণ করল। অভিসার সিনেমায় চলছে ‘সম্রাট’। এ সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক খায়রুল কবির বলেন, ছবির ওপেনিং সেল সন্তোষজনক। শাকিব-অপুর প্রতি দর্শকের ভালোবাসার কথা আবারও প্রমাণ হলো। তার কথায় ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় মানুষ ফিরতে শুরু করলে সেল আরও বাড়বে। জোনাকি সিনেমা হলে চলছে শাকিব-তিশার ‘মেন্টাল’ ছবিটি। এখানকার দর্শক এই জুটির অভিনয়ে মুগ্ধ। তারা শাকিবের পাশাপাশি তিশার কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, শাকিবের সিনেমায় নায়িকা লাগে না। শাকিব শাকিবই। যত যাই বলেন ইন্ডিয়ান নায়িকা, নায়ক, অন্য দেশের শিল্পী। শাকিবের সামনে কেউ কিছুই নয়। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শাকিব তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়ে আসছেন। এবারের ঈদে তার সঙ্গে কলকাতার সুপারস্টার জিতের ছবি মুক্তি পেলেও শাকিব তার শীর্ষ আসন ধরে রেখেছেন। তিনি আবারও প্রমাণ করে দিয়েছেন ঢালিউডে তিনিই অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। তার তিনটি ছবিই ভালো চলছে। মিডিয়া কর্মী মাহমুদ আক্তার নিশা শনিবার স্টার সিনেপ্লেক্সে যান ‘শিকারী’ ছবিটি দেখতে। কিন্তু টিকিট পাননি। হতাশ হয়ে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘শাকিবের ‘শিকারী’ ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। টিকিট পেলাম না। এরপর ভাবলাম জিতের ‘বাদশা’ দেখব। তাও পারলাম না। আগামী কয়েকদিনের টিকিট নেই। অগত্যা একটি ইংরেজি ছবি দেখে ফিরতে হলো। তবে ভালো লাগল এই দেখে যে, টিকিটের জন্য শুধু লাইন নয়, দীর্ঘ লাইন। মনে হলো বাংলা ছবির সুদিন ফিরেছে। আমাদের দর্শক আবার দেশীয় ছবিমুখী হয়েছে। জয় হোক আমাদের ছবির।’ আরেক দর্শক মো. ওবায়েদ আহমেদ গতকাল হতাশা নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন—‘শিকারী দেখতে গিয়ে টানা দুই দিন সিনেমা হল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। অধিক দর্শক থাকার কারণে টিকিট পাইনি। সত্যিই শিকারী ছবিটি মানুষ এভাবে গ্রহণ করবে আগে জানা ছিল না। আজকে আবার যাব শিকারী দেখতে। যতদিন না টিকিট পাব ততদিন হলে যেতেই থাকব।’ বর্তমানে দেশের শীর্ষ চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ বলেন, মানসম্মত ছবি পেলে দর্শক সিনেমা হল মুখী হয়। এ কথা আবারও প্রমাণ হলো এবারের ঈদের ছবি দিয়ে। জঙ্গি হামলাসহ কোনো আতংকই দর্শকদের ঘরে বন্দী করে রাখতে পারেনি। ঈদের দিন থেকে প্রতিটি সিনেমা হলেই উপচে পড়া দর্শক। তারা ভালো ছবি পেয়েছে বলেই সব ভয় তুচ্ছ করে সিনেমা হলে যাচ্ছে। আমি সব সময়ই চেষ্টা করি মানসম্মত ছবি নির্মাণের মাধ্যমে দেশীয় ছবির সুদিন ফেরাতে। দর্শকদের বিনোদন দিতে। এখন মনে হচ্ছে আমার চেষ্টা সার্থক হয়েছে। দর্শক আমার নির্মিত ‘শিকারী’ ও ‘বাদশা’ ছবির মতো আগেও    আমার অন্য সব ছবি সাদরে গ্রহণ করেছে। আগামীতে আরও উন্নত ছবি সবাইকে উপহার দিয়ে যাব। দর্শকদের প্রতি ধন্যবাদ ও ঈদের শুভেচ্ছা রইল। এদিকে  গতকালও রাজধানীসহ সারা দেশের সিনেমা হলগুলোতে উপচে পড়া দর্শকের খবর পাওয়া গেছে। অনেকে     টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে আবার        অনেকে চড়া দামে ব্ল্যাকে টিকিট কিনে ঈদের ছবি দেখে পরম আনন্দে ঘরে ফিরছে। সবাই বলছে এবারের  ঈদের ছবি মনের মতো হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর