শিরোনাম
সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রোজিনা হতাশ

আলাউদ্দীন মাজিদ

রোজিনা হতাশ

বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্র নিয়ে হতাশ জনপ্রিয় নায়িকা রোজিনা। তার কথায়, ষাট থেকে নব্বই দশকের মতো মানসম্মত চলচ্চিত্র এখন আর নির্মাণ হয় না। রোজিনার চোখে বর্তমান সময়ে শাকিব খানই একমাত্র দক্ষ নায়ক। ১৯৯৩ সাল থেকে এই অভিনেত্রী লন্ডনে প্রবাস জীবন-যাপন করছেন। প্রতি বছরই দু-একবার দেশে আসেন তিনি। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, নিজ গ্রাম রাজবাড়ীতে যান আর টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণ বা তাতে অংশ নেন। এবার দেশে ঈদ করতে ৯ জুন ঢাকা আসেন। দেশে ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অংশ নেন টিভি  প্রোগ্রাম ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সময় বের করে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। অভিনয় আর চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে অনেক না বলা কথা বলেছেন তিনি।

রোজিনা আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে অনেক নতুন প্রযোজক চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করছেন। কিন্তু তারা ব্যবসা বোঝেন না। শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কেও বেশির ভাগ নির্মাতার কোনো জ্ঞান নেই। ফলে যা হওয়া স্বাভাবিক তাই হচ্ছে। সিংহভাগ ছবি মানের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে। তিনি বলেন, নব্বই দশক পর্যন্ত এই অবস্থা ছিল না। দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ছিল। তারপর অশ্লীলতা এই শিল্পকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। গুণী নির্মাতা আর শিল্পীরা চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরেছেন। মানসম্মত ছবির অভাবে দর্শক সিনেমা হলবিমুখ হয়েছেন। রোজিনার কথায়, এখনকার শিল্পীদের মধ্যে অভিনয় দক্ষতার বড়ই অভাব। একমাত্র শাকিব খান এর ব্যতিক্রম। সত্যিকার অর্থে অভিনয় জানেন তিনি। রোজিনা জানান, ২০১২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটির জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে তখন বেশ কিছু ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিল তার। তিনি বলেন, আমি অবাক হলাম এই দেখে যে, এখন চরিত্র অনুযায়ী কোনো শিল্পী গেটাপ নেয় না। এর জন্য নির্মাতাই একমাত্র দায়ী। তার কথায়, নিম্নবিত্তের চরিত্র রূপায়ণ করা এক নায়িকাকে দেখা গেল তিনি পোশাক পরেছেন বেশ রংচঙে। এই ব্যর্থতা কার? একমাত্র নির্মাতার। কারণ তিনিই তো শিল্পীকে বলবেন এই চরিত্রের জন্য কেমন কস্টিউম হবে। যখন যে চরিত্র করব তখন তা নিজের মধ্যে ধারণ করে তার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে তখন আমি আর রোজিনা বা অমুক নই। এখন এমন মেধার বড়ই অভাব। এখনকার অভিনয়শিল্পীরা গ্ল্যামারের পেছনেই বেশি ছুটছে। অভিনয়ের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এখনকার অভিনয়শিল্পীরা নাকি একটি ছবি করেই বাড়ি-গাড়ি করে ফেলে। এটি কী করে সম্ভব হয় তা আমি বুঝি না।

রোজিনা জানান, তার প্রথম ছবির আয় ছিল মাত্র ১০ টাকা। ১৯৭৬ সালে কালিদাস পরিচালিত ‘জানোয়ার’ ছবিতে নায়িকা হন তিনি। শুরুর দিকে স্কুটারে করে এফডিসিতে আসতে হতো তাকে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান সময়ের শিল্পীদের শিল্পী না হয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম কারণ অভিনয় শুরু করার আগেই তারা পত্রিকায় পাবলিসিটি পেয়ে যায়। এতে করে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার অবস্থা হয় তাদের। ফলে নিজেদের মধ্যে আর ভারসাম্য রাখতে পারে না তারা। এতে শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। মানে আঁতুড় ঘরে মৃত্যু হয় তাদের।

রোজিনা জানান, এখন অভিনয় করার মতো ছবির বড়ই অভাব। তাই চলচ্চিত্রে ফেরা সম্পর্কে তেমন আশাবাদী নন তিনি। অভিনয়ের চেয়ে পরিচালনাতেই আগ্রহ বেশি তার। চলচ্চিত্র জগতের পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে এলে নির্মাণে আসবেন তিনি।

রোজিনা আশির দশকে বিয়ে করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ফজলুর রশিদ ঢালীকে। ঢালীর অকাল মৃত্যুর পর নব্বই দশকের শুরুর দিকে বিয়ে করেন লন্ডন প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে। ১৯৯৩ সালে স্থায়ীভাবে লন্ডন চলে যান তিনি। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। ভারত ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ একাধিকবার পাকিস্তানের নিগার, দেশের বাচসাস-সহ অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন রোজিনা। এই অভিনেত্রীর প্রকৃত নাম রেণু।

সর্বশেষ খবর