রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যেমন ছিল ঈদ অনুষ্ঠান...

ঈদকে ঘিরে টিভি চ্যানেলগুলো বরাবরের মতো এবারও আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠানমালার। কিন্তু মান আর বিজ্ঞাপন যন্ত্রণায় ভুগছে দর্শকরা। এবারের ঈদের অনুষ্ঠান কি এসব যন্ত্রণামুক্ত ছিল। এ বিষয়ে কথা বলেছেন কয়েকজন মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব। তাদের মন্তব্য এখানে তুলে ধরেছে—

শোবিজ প্রতিবেদক

যেমন ছিল ঈদ অনুষ্ঠান...

আমজাদ হোসেন

চলতি বছর কয়েকটি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাত্রা কিছুটা কম ছিল। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, টেলিভিশন চালাতে গেলে বিজ্ঞাপন দরকার। আর সাধারণ দর্শক হিসেবে বলতে হয়, বিজ্ঞাপন কী সীমিত আকারে চালানো যায় না। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপনের রেট বাড়িয়ে দিয়ে প্রচারের পরিমাণ কমানো হোক। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মান। মান ভালো হলে কষ্ট করে দর্শক অনুষ্ঠান দেখে। এখন তো মানের অভাবে অনুষ্ঠান দেখাই ছেড়ে দিয়েছে দর্শক। আগে কোনো অনুষ্ঠান নির্মাণ বা তাতে পারফর্ম করলে সঙ্গে সঙ্গে দর্শক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত। সাধারণ মানুষ বলত, কাল অমুক অনুষ্ঠান বা অমুক নাটকে আপনাকে দেখেছি। আর এখন অনেক কাজ করলেও দর্শক বলে আপনাকে আগের মতো আর ছোট পর্দায় দেখি না। মানে বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা আর মান না থাকায় দর্শক ছোট পর্দাবিমুখ হয়ে পড়েছে। এখন যে একেবারেই ভালো অনুষ্ঠান হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। সংখ্যা খুব কম। এর জন্য দায়ী বাজেট। টিভি চ্যানেলগুলো থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে মানসম্মত অনুষ্ঠান নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই বলব, বিজ্ঞাপননির্ভরতা কমিয়ে কীভাবে মানসম্মত অনুষ্ঠান প্রচার করা যায় সেই চিন্তা আগে করা দরকার।

 

আলী যাকের

ঈদ আয়োজনে এবার মোটামুটি জৌলুস ছিল। ঈদে যেরকম আয়োজন থাকা দরকার সেরকমই অনুষ্ঠান প্রচার করেছে চ্যানেলওয়ালারা। ঈদ ধারাবাহিকগুলো ভালোই হয়েছে। নাটকের মাঝে যদি বিজ্ঞাপন কম প্রচার হতো তাহলে আরও ভালো হতো। ঈদে নতুন অনেক নির্মাতাই ভালো ভালো নাটক উপহার দিয়েছেন। তারা সিরিয়াসলি কাজ করেন। আগে বিটিভির কাজ চাকরি করার মতো করে করা হতো। এখন সেরকম নয়। অনেক প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। নির্মাতাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। চিন্তাভাবনা ও কমপ্রোমাইজ করতে হয়। নতুন কিছুর সাক্ষর রাখতে গেলেই ভালো কাজ করতে হয়। যদি তারা ভালো কাজে ব্যর্থ হয় ভবিষ্যতে আর কাজ পাবে না। এসব বিষয় মাথায় রাখা হয় বলেই ঈদে নতুন নির্মাতাদের নাটক ভালো হয়। অনেক চ্যানেল ঈদ এলেই সাত দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। আমার মনে হয় চার দিনের অনুষ্ঠান করলেই ভালো হয়। ভালো কিছু করলে চার দিনেই করা যায়। আমাদের দেশে অনেক চ্যানেল হয়ে গেছে। প্রায় চ্যানেলই মান ধরে রাখতে পারছে না। আমরা যা পাই তা উচ্ছিষ্ট জিনিস।

 

আতাউর রহমান

ঈদের কোনো নাটক আমার ভালো লাগেনি। গত বছর যেমন ছিল তারই পুনরাবৃত্তি হয়েছে এবার। বিশেষ কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি। সাত দিন ঈদের অনুষ্ঠানের আয়োজন অতিরিক্ত। এটাকে তিন দিন করলেই দর্শকদের আকর্ষণ থাকে। বিশেষ করে ঈদের ধারাবাহিকগুলো তুলনামূলকভাবে বেড়েই চলছে। মানুষের হাতে এত সময় নেই যে নিয়ম করে এই ধারাবাহিক দেখবে। অভিনেতা, অভিনেত্রী ও নির্মাতারা কোয়ালিটির দিকে খেয়াল না রেখে সবাই টাকার পেছনে ছুটলে কেমন করে ঈদের নাটক ভালো হবে। আর বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা তো আছেই। এর চেয়ে দিনব্যাপী বিজ্ঞাপন দেখালেই ভালো হয়। বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক ভাষায় নাটক নির্মাণ হতে পারে। এবারের নাটকের মধ্যে বেশির ভাগেরই গল্পের মধ্যে তেমন কিছু ছিল না যা দর্শকদের বসিয়ে রাখবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ঈদের নাটক দেখে খুব হতাশ।

 

তারিক আনাম খান

আমি ঈদের নাটক খুব বেশি দেখতে পারিনি। আমার কাছে কাজগুলো খারাপ লাগেনি। কাজ করবে টাকা পাবে এই দৃষ্টিকোণ থেকে অভিনয় শিল্পীরা বেরিয়ে এসেছে। সবার মাঝে ভালো কাজের চেষ্টা ছিল। হয়তোবা অনেকেই অনেক বিষয় সম্পর্কে জানে না। তারপরও চেষ্টার কমতি ছিল না কারও মাঝে। কিছু সমস্যা তো থাকবেই। এত বেশি নাটক নির্মিত হলে সব যে ভালো কাজ হবে এমনটি ভাবলে হবে না। মানের দিক দিয়ে কিছু খারাপ কাজ হয়েছে। বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চ্যানেলগুলোকে বুঝতে হবে বিজ্ঞাপনের কারণে দর্শক ছুটে যাচ্ছে। তাদের আরও বেশি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

 

অমিতাভ রেজা

ধারাবাহিক নাটকগুলো ভালো ছিল। টেলিভিশনে ধারাবাহিকটাই বেশি চলে। দর্শকদের ফলো করতে সুবিধা হয়। ফরমেটটি টেলিভিশনের জন্য অনেক ভালো। এ কারণেই বছর বছর ঈদ ধারাবাহিকের সংখ্যা বাড়ছে। ঈদে বিশেষ কোনো আয়োজনই ভালো ছিল না। বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় এবারও অতিষ্ঠ ছিল দর্শক। এ নিয়ে অনেকবারই কথা বলেছি। চ্যানেলওয়ালারা কথা শুনছে না। তবে অনেক চ্যানেলই কম বিজ্ঞাপন দিয়ে নাটক প্রচার করছে। এটা ভালো লেগেছে। কম বিজ্ঞাপন দিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করলে ছোটপর্দার দর্শক সংখ্যা আরও বাড়ত বলে আমি মনে করি।

 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

কিছু কিছু টেলিভিশন চ্যানেল অল্প বিরতি বা বিরতিহীন অনুষ্ঠান চালাচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ অনুষ্ঠান বিজ্ঞাপনের চাপে জর্জরিত। টিভি চ্যানেলগুলোর ভাবার সময় হয়েছে কী করে কম রেটে বেশি বিজ্ঞাপনের পরিবর্তে বেশি রেটে কম বিজ্ঞাপন দিয়ে লাভবান হওয়া যায়। এর একটিই সূত্র আছে। আর তা হচ্ছে— আপনাকে আপনার কাজ ইউনিকলি তৈরি করতে হবে। এর পেছনে প্রয়োজনে বেশি অর্থ ও ভাবনা ব্যয় করুন এবং নিশ্চিত করুন, অনুষ্ঠানটি যেন অন্য ২০টি অনুষ্ঠানের চেয়ে আলাদা করা যায়। এটি টেলিফিল্ম, আড্ডা কিংবা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠান হোক। এবারের ঈদের অনুষ্ঠান দেখে যেটা আমার উপলব্ধি, তা হচ্ছে— আমরা ক্রমেই চিন্তার দৈন্যতার চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমরা হারিয়ে যাব টিভি অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য থেকে। বলা যায়, এখন আমরা মুমূর্ষু অবস্থায় আছি।  বোধ হয় বেঁচে উঠাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে চাই না। শুধু বলব, টিভি ইন্ডাস্ট্রি বাঁচান সবাই মিলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর