বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নায়িকা নেই ঢাকাই ছবিতে

আলাউদ্দীন মাজিদ

নায়িকা নেই ঢাকাই ছবিতে

অনেকদিন ধরেই ঢাকাই ছবিতে নায়িকা নেই। মানে নায়িকার সংকট চলছে। এতে মানসম্মত ছবি নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর দর্শকও ভালো মানের ছবি না পেয়ে সিনেমা হলে যাচ্ছে না। ঢালিউডের গোড়াপত্তনেও নায়িকা নিয়ে এই অচলাবস্থা ছিল না।

১৯৩১ সালে নির্মিত প্রথম নির্বাক ছবি ‘দ্য লাস্ট কিস’ কিংবা ১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া প্রথম সবাক ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ করতে গিয়েও নায়িকা সংকটে পড়তে হয়নি নির্মাতাকে। ‘সিনেমায় ভদ্রঘরের মেয়েরা অভিনয় করতে পারবে না’— তখনকার দিনে এমন প্রতিকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও নায়িকা পেতে গলদঘর্ম হতে হয়নি নির্মাতাকে। লোলিটা, পূর্ণিমা সেন, জহরত আরা, চারুবালা, দেববালা, হরিমতি আর পিয়ারি বেগমকে সহজেই পাওয়া গিয়েছিল এই দুই ছবির নায়িকা হিসেবে। এরপর তো সুমিতা দেবী, নাসিমা খান, তৃপ্তি মিত্র, সুলতানা জামান, রোজী, শামীম, শবনম, শাবানা, সুচন্দা, সুজাতা, কবরী, ববিতা, চম্পা, দিতি, মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, পপির মতো নায়িকায় সমৃদ্ধ হয় ঢাকার ছবি।

২০০৬ সালে আসেন অপু বিশ্বাস আর ২০১২ সালে মাহিয়া মাহি। তাদের আগে ও পরে  নিপুণ, সাহারা, আঁচল, ববি প্রমুখরা আসলেও দর্শকমনকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিতে ব্যর্থ হন তারা। একসময় অপু আর মাহি নির্ভর হয়ে পড়ে ঢাকার ছবি। এতে নির্মাতারা শিডিউল সমস্যা আর দর্শকরা একঘেয়েমিতে ভুগতে থাকে। তাছাড়া সম্প্রতি অপু হঠাৎ করে নিরুদ্দেশ আর মাহি বিয়ে করে সংসারী হলে  নতুন নায়িকা খোঁজার চেষ্টা চলতেই থাকে। বেশ কয়েকজনকে পাওয়াও যায়। অভিনয় দক্ষতার অভাবে দু-একটি ছবিতে অভিনয় করে ঝরে যায় তারা। নায়িকা সংকট উত্তরণে নির্মাতারা ছোট পর্দার তারকাদেরও দ্বারস্থ হন। তিন্নি, জয়া, সাবা, মিমসহ কয়েকজনকে নিয়ে আসা হয় বড় পর্দায়। এদের মধ্যে জয়া আর মিম কোনোভাবে টিকে থাকলেও জয়া দেশীয় ছবির বদলে কলকাতার ছবিতেই বেশি সাড়া পাচ্ছেন। নতুন মুখ আইরিন আর মিষ্টি জান্নাতও সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হন।

২০১৫ সালে ছোট পর্দা থেকে আনা হয় আরেক সুশ্রী মুখ পরীমণিকে। এই নায়িকা ছবি মুক্তির আগেই সম্ভাবনার আলো জ্বেলে ব্যাপক আলোচনায় চলে আসেন। যৌথ প্রযোজনার ছবিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছবিতে অভিনয় করেন। বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তিও পায়। তার অভিনয় প্রশংসিত হলেও ঢাকাই ছবির ব্যবসায়িক অবস্থা প্রতিকূল থাকার কারণে তার চলার গতি মন্থর হয়ে আছে। নুসরাত ফারিয়া ও জোলি জাজের নায়িকা হিসেবেই ঢাকাই ছবিতে পথ চলা শুরু করেন। এই দুই নায়িকা এখনো বড় পর্দায় স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে পারিনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুচন্দা বলেন, নায়িকা সংকট অবাস্তব কিছু নয়। এখন ছবি কোথায়। নির্মাতা কারা। সিনেমা হল কি আছে? এতসব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাজ জানা মেয়ে কীভাবে চলচ্চিত্রে আসবে বা কাজ শেখানোর মতো নির্মাতা কোথায়? যতক্ষণ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের সার্বিক অবস্থার উন্নতির চিন্তা করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু নায়িকা নয় কোনো সংকটই কাটবে না। পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজারের কথায়, ‘এমনিতেই ঢাকাই ছবিতে নায়িকা সংকট চলছে।

বর্তমানে এই সংকট বেড়ে গেল। অপু বিশ্বাস ও মাহি ইন্ডাস্ট্রির নির্ভরযোগ্য দুই নায়িকা। মাহির বিয়ে হয়েছে। বিয়ে করলেই যে

সিনেমা কমে যায় তা নয়। বিয়ের পরও দিতি, চম্পা ও শাবানা, মৌসুমী কাজ করেছেন। আর অপু বিশ্বাস তো শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করত। এখন শাকিবের একজন নায়িকা কমে গেছে। এই অবস্থা আসলে চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর