বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভবগানের সুরে ভাসবে বাংলাদেশ

পান্থ আফজাল

ভবগানের সুরে ভাসবে বাংলাদেশ

বাঙালির সত্যিকারের পরিচয় দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় লোকসংগীত। তাই লোকসংগীতকে বাংলা সংস্কৃতির প্রাণ বললেও ভুল বলা হবে না। এর মোহময় সুরের অপূর্ব ধারায় আত্মা হয় পরিশুদ্ধ। ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, জারি, সারি ও বাউল গানের সুরে মাতোয়ারা হননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া দায়। হাজার বছর পরও এসব গানের আবেদন এখনো ফুরায়নি। লোকধারার এসব গান বাংলা সংস্কৃতির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। শুধু দেশের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় নয়, বরং দেশের বাইরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লোকধারার সংগীত। বলা চলে, লোকগানের সুর ও কথায় বেঁচে আছি আমরা। এ দেশের কাদামাটি মাখা মানুষকে সুরের সুধায় বিমোহিত করতে এই লোকধারার সুরভাণ্ডারের তুলনা অসীম। তাই দিন শেষে আমরা ফিরে যাই লালন, হাছন রাজা, আব্বাসউদ্দিন, আবদুল আলীম আর বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের সংগীতের ইন্দ্রজালে বুঁদ হতে। একটি দেশ বা একটি সংস্কৃতির প্রকৃত পরিচয় তার লোকসংগীতের। ফোকগান বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় গভীরে ছড়িয়ে রয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশি জীবনের গল্প বলতে নয়, এটা ধর্ম, সমাজ, পরিবেশ এবং আমাদের জীবনের বিভিন্ন কথা বলে। এ গানের চাহিদা সহস্রাব্দ ধরে কেউ একটু থামাতে পারেনি। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জাপানের মতো দেশ আমাদের লোকসংগীত নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে আমাদের লোকসংগীতের বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে লোকসংগীতের আগ্রহ, অনুশীলন দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এই লোকসংগীতে আমাদের আত্মার গান আছে তা প্রমাণ হয় বিভিন্ন উৎসবের মাধ্যমে।

প্রথমবারের পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ১০ নভেম্বর থেকে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে সান ইভেন্টস আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভাল ২০১৬’-এর আসর। প্রথমবার প্রচার-প্রচারণা আর মিডিয়ার কৌতূহলী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ‘ফোক ফেস্টিভাল’ ঘিরে শহুরে মানুষের আগ্রহ ছিল দেখার মতো। কারণ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় এই আয়োজনে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল ঘরানার আধুনিক শিল্পীরা একসঙ্গে একই মঞ্চে গেয়েছিলেন! ২০১৫ সালের ফেস্টিভালে সেই সময় ৬টি দেশের প্রায় শতাধিক শিল্পী ও ব্যান্ড পারফর্ম করেছিল। তবে এবার ৭টির বেশি দেশ থেকে ১২৫ জনেরও বেশি শিল্পী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দর্শক উপভোগ করবেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেরা লোকসংগীতশিল্পীদের পরিবেশনায় শেকড় সন্ধানী গানগুলো। তবে এবার উৎসব মাতাতে মঞ্চে উঠবেন বাংলাদেশের ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ, ইসলাম উদ্দিন কিস্সাকার, বারী সিদ্দিকী, বাউল আবদুর রহমান, শফি মণ্ডল, সুনীল কর্মকার, টুন টুন বাউল, পালাকার লতিফ সরকার, ফরিদা ইয়াসমিন, বাঁশিবাদক জালাল এবং তাপসসহ আরও অনেকে। অন্যদিকে দেশের বাইরের শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করবেন ভারতীয় ফোক, পপ-রক তারকা কৈলাস খের, নুরান সিস্টার্স, জাভেদ বশির, পবন দাস বাউল, কারেন লুগো অ্যান্ড রিকার্ডো মোরো, সুশীলা রহমান অ্যান্ড স্যাম মিলস, ইন্ডিয়ান ওশেন, প্রসাদ, রাজু দাস বাউলসহ আরও অনেকে। গতবারের আসরের মতো এবারও দর্শক বিনামূল্যে শুধু অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ করতে পারবেন। ইতিমধ্যে ১ নভেম্বর থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানটির টেলিভিশন সম্প্রচারের দায়িত্বে থাকবে মাছরাঙা টেলিভিশন।

সর্বশেষ খবর