বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে : জিৎ

ঢাকায় এসে যেখানেই যাই সেখানেই মানুষের ভালোবাসা আর ভালোবাসা

ঢাকায় এসে যেখানেই যাই সেখানেই মানুষের ভালোবাসা আর ভালোবাসা

কলকাতার জনপ্রিয় নায়ক জিৎ। মানসম্মত কাজ দিয়ে বাংলাদেশের দর্শক মনও মাতিয়েছেন তিনি। যৌথ আয়োজনের ছবি ‘বাদশা’ আর ‘বস টু’-এর পর শুক্রবার এদেশে মুক্তি পাচ্ছে এই নায়ক অভিনীত ও প্রযোজিত ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ ছবিটি। এই ছবি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশে এলেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও এ দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আপনার জন্য রইল অকৃত্রিম শুভেচ্ছা—

ধন্যবাদ। যতটুকু শুনেছি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকাটি এদেশের শীর্ষ এবং জনপ্রিয় একটি পত্রিকা। ঢাকায় এলে পত্রিকাটি পড়ার চেষ্টা করি। বেশ ভালো লাগে। পত্রিকার সম্পাদক ও এতে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের জন্য আমার শুভ কামনা রইল। আমি এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।

 

ধন্যবাদ, শুক্রবার এদেশে মুক্তি প্রতীক্ষিত আপনার অভিনীত ও প্রযোজিত ইন্সপেক্টর নটি কে ছবিটির প্রচারণার জন্য এবার ঢাকায় এলেন, ছবিটি সম্পর্কে কিছু বলুন

এই ছবিটি আমার প্রডাকশন হাউস জিৎ ফিল্মস ও ঢাকার জাজ মাল্টিমিডিয়ার যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। ছবিটি সম্পর্কে বলতে গেলে এক কথায় বলতে হয়, এটি একটি পরিপূর্ণ বিনোদনের ছবি। দর্শক সিনেমা দেখতে যায় বিনোদন পেতে। তাই আমার নির্মাণ ও অভিনয়ের মূল লক্ষ্য হলো তাদের ইচ্ছা পূরণ করা। বিনোদনের পাশাপাশি অবশ্য ছোটখাটো কিছু মেসেজ দেওয়ারও চেষ্টা করেছি। তবে ছবিতে বিনোদনটাই প্রধান। আশা করি আমার অন্য ছবির মতো এটিও দর্শক মন জয় করবে।

 

এবার জানতে চাইব দুই বাংলার ছবি বিনিময় আর যৌথ প্রযোজনার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা নিয়ে

দেখুন আমি হলাম একজন পরিপূর্ণ শিল্পী। একজন শিল্পীর কাজ হলো সৃষ্টি করা। শিল্পী হিসেবে আমি ক্রিয়েটিভ বিষয় নিয়েই থাকতে আর ভাবতে চাই। যৌথ প্রযোজনা বা বিনিময়ের সমস্যা নিয়ে ভাববে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। আমি শুধু সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমেই নিজেকে ব্যাপৃত রাখতে চাই, অন্য কিছু নয়।

 

তারপরেও বলব দুই বাংলার ছবি বিনিময়ের জন্য ২০১২ সালে টালিগঞ্জের ছবির একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে আপনিও ঢাকায় এসেছিলেন, তথ্যমন্ত্রী এবং ঢাকার চলচ্চিত্রকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, পরে বিষয়টি সেভাবে প্রাণ পায়নি, কেন?

আসলে এখন উম্মুক্ত বিশ্বায়নের যুগ। এই যুগে এসে সবকিছু ওপেন করে দেওয়া দরকার। বিশেষ করে দুই বাংলার ছবি এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের ক্ষেত্রে জটিল এবং অযৌক্তিক কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। আমাদের ভাষা আর স্বপ্ন অভিন্ন। ভৌগোলিক কারণে দুই দেশের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া থাকতে পারে। ছবি আর সংস্কৃতির মধ্যে এই কাঁটাতার কখনই আমার কাম্য নয়।

 

দুই বাংলার ছবি দীর্ঘদিন ধরে খরার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ কীভাবে পাওয়া যায়?

হুম, পৃথিবীতে ভাষা হিসেবে বাংলার অবস্থান ষষ্ঠ। দুই বাংলার ছবির বিশ্বব্যাপী সাফল্যের ক্ষেত্রে সঠিক আইডিয়া আর মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। হয়তো কলকাতা আর বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা কম। কিন্তু বিশ্বে প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বৃহত্তম একটি সংখ্যা রয়েছে। আমরা যদি ছবি নির্মাণে মানের ক্ষেত্রটা আরও উন্নত করতে পারি তাহলে আজ যেমন হিন্দি ছবি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ শুধু চীন দেশে ৮ হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে পারে তাহলে বাংলা ছবি কেন পারবে না। সময় কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি। সবার সম্মিলিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টা এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।

 

বাংলা ছবির মান উন্নয়নে বাধা কোথায়?

বাজেট হলো বড় বাধা। একটি হিন্দি বা তামিল ছবি নির্মাণে কয়েকশ’ কোটি টাকা লগ্নি হয়। আর বাংলা ছবির নির্মাণ ব্যয় কয়েক কোটি টাকার মধ্যে সীমিত। কারণ দুই দেশের সিনেমা হলের সংখ্যা কম। তাই বাজেট বাড়াতে গেলে ব্যবসায়িক ঝুঁকির কবলে পড়তে হয়। আর কম বাজেটের কারণে প্রযুক্তিগত দিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় না। উভয় বাংলা মিলে যদি বড় বাজেটের ছবি নির্মাণ আর বাংলা ছবিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে ব্যবসায়িক ঝুঁকি আর থাকবে না। এর প্রমাণ ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। যৌথ আয়োজনে জাজ মাল্টিমিডিয়া আর এসকে মুভিজের ছবি ‘নবাব’ মধ্যপ্রাচ্যে মুক্তি পেয়ে সফল হয়েছে। এর আগে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলা ছবি সফলতার মুখ দেখেছে। তাই দুই বাংলার মধ্যে বাংলা ছবি নির্মাণে সব জটিলতা আর কঠোরতা দূর করে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালালে বাংলা ছবি বিশ্বে নাম্বার ওয়ান পজিশন করে নেবেই। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

কিন্তু লগ্নিকাররা তো বাংলা ছবি নির্মাণে এখন ভয় পায়

ভয়ের কিছু নেই, শুধু ছবি নির্মাণ বা ব্যবসা নয়, যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যেমন বাংলাদেশে বর্তমানে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জাজ মাল্টিমিডিয়া রীতিমতো যুদ্ধ করে যাচ্ছে।  লাভ-লোকসানের ধার ধারছে না। এভাবে যদি আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এবং করপোরেট হাউস ছবি নির্মাণে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসে তাহলে বাংলা ছবির জয়জয়কারের স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকবে না। বাস্তবতার মুখ দেখবেই। এ কথা আত্মবিশ্বাস থেকেই বলছি।

 

এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, বাংলাদেশের কোন দিকটা আপনার প্রিয়

এদেশের মানুষের ভালোবাসা আমার খুব প্রিয়। যখন ঢাকায় বিমানবন্দরে এসে নামি সেখান থেকে যেখানেই যাই আমার প্রতি শুধু এখানকার মানুষের ভালোবাসা আর ভালোবাসা। এ ভালোবাসার ঋণ কোনো দিন শোধ করার নয়। আমি তো সব সময়ই বলি এ দেশটা একেবারেই আমার নিজের। আমি চাই এখানে বেশি করে কাজ করতে আর এখানকার মানুষের ভালোবাসায় অবিরাম সিক্ত হতে। [তৃপ্তির হাসি]। আরেকটি বিষয় খুব প্রিয়। আর তা হলো— ভাই সম্বোধন। এই যে আপনারা সবাই জিৎ ভাই বলে ডাকছেন, এটা আমাকে খুব আবেগী করে তোলে। মনে হয় খুব আপন কারও সঙ্গে কথা বলছি।

 

আর এদেশের ইলিশ মাছ?

ইলিশ মাছ আমারও খুব প্রিয়। আজিজ ভাই যখনই কলকাতায় যান আমার জন্য অনেকগুলো ইলিশ মাছ নিয়ে যান। আমি খুব খুশি হই। যদিও ইলিশ মাছে কাঁটা বেশি, আর যে কোনো কাঁটা আমার কাছে দুই বাংলার সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার মতো অপ্রিয়। তাই ইলিশের কাঁটাগুলো চিবিয়ে খেয়ে ফেলি। হা...হা...হা...। ও আরেকটা কথা বলে রাখি— আমি খেতে খুব ভালোবাসি। ভোজনরসিক বলতে পারেন। এখানে যখন শুটিং করি, কেউ একজন ইলিশ মাছ দিয়ে তৈরি কাবাবের মতো খাইয়েছিল। ভোলার মতো নয় খাবারটা। আর আজকেও (সাক্ষাৎকারের দিন) দুপুরের খাবারে বিশেষ কিছু আছে শুনেছি। দেখা যাক কী থাকে।

 

বাংলাদেশের মানুষের কাছে টালিগঞ্জের নায়ক উত্তম কুমার আর রঞ্জিত মল্লিকের মতো আপনিও সমান জনপ্রিয়, বিষয়টি ভাবতে কেমন লাগে?

মনে হয় সত্যি আমার জীবন ধন্য, আবারও বলছি এদেশের মানুষের ভালোবাসার ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না। বাংলাদেশে আমার অনেক ভক্ত আছে। ফেসবুক, টুইটারে তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়মিতই পাই। বেশ ভালো লাগে।

 

সিনেমা হলে দর্শকের সঙ্গে বসে ছবি দেখেন?

অবশ্যই দেখি। যদিও জনপ্রিয়তার বিড়ম্বনা পোহাতে হয়, তারপরেও ছবি দেখে দর্শকের প্রতিক্রিয়া সরাসরি উপভোগ করতে ভালো লাগে।

 

যৌথ আয়োজনের তিনটি ছবিতেই আপনার নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, তার সম্পর্কে বলুন

ফারিয়া খুব ভালো অভিনয় করে। আমাদের রসায়নটা তো পর্দায় আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এবং আমাদের জুটিকে সাদরে গ্রহণ করেছেন।  ফারিয়ার সঙ্গে অনেক খুনসুটির সম্পর্ক। শুটিং সেটে পুরোটা সময় এভাবেই চলে আমাদের।

 

সবশেষে বাংলাদেশের মানুষ আর আপনার দর্শক ভক্তদের জন্য কী বলবেন

ভালোবাসা, ভালোবাসা আর শুধুই ভালোবাসা। সবার জন্য রইল আমার হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ভালোবাসা।  যার কোনো শেষ নেই...।

 

সর্বশেষ খবর