মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এখনো জনপ্রিয় গম্ভীরা

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

এখনো জনপ্রিয় গম্ভীরা

নানা চিৎকার করে খুঁজছেন নাতিকে। লাফাতে লাফাতে হাজির নাতি। এরপর ব্যঙ্গাত্মক সুরে নানা-নাতির কথোপকথন। মাঝে মাঝে বার্তা দেওয়া। সেই বার্তা হতে পারে যেকোনো বিষয়ে। আর এটিই হলো গম্ভীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ এলাকার অতি জনপ্রিয় লোকসংগীত হলো গম্ভীরা গান। নাচ, গান এবং নানা-নাতির কৌতুকাভিনয়ের মাধ্যমে গম্ভীরা গানে সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলী পর্যালোচনা করা হয় এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাধ্যমে দোষ-ত্রুটি তুলে ধরতে দেখা যায়। এ গানের মূল উদ্দেশ্য হলো—সত্য ভাষণ বা গোমর ফাঁস করা।

কালীনাথ চৌধুরী রচিত রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং রাজশাহীর পরিচিতি বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে—গম্ভীরা গানের ওস্তাদ বা প্রবর্তনকারী শেখ সফিউর রহমান। তিনি সুফি মাস্টার নামে খ্যাত। তিনি ১৮৮৭ বা ১৮৮৮ সালে ভারতের মালাদহ জেলায় ফুলবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ বিসারত। শৈশবকালে তিনি পিতৃহারা এবং মাতৃহারা হয়ে লেখাপড়া বেশি দূর করতে পারেননি। ১৯০৭ সালে ডাক বিভাগে প্যাকারের চাকরির মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয় এবং গানের জন্য শেষ পর্যন্ত খুলনায় পোস্ট মাস্টার পদে উন্নীত হন। ১৯৫১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

সুফি মাস্টার শুধু গান রচনাই করতেন না, তিনি তার সুর নাচের ছন্দ ভঙ্গিও অন্যদের শেখাতেন। এক সময় গম্ভীরা গান এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, ব্রিটিশ সরকার তখন শঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং তাকে নজরবন্দি করে রাখে। গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৭ বা ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে শেখ সফিউর রহমান ওরফে সুফি মাস্টারকে একটি সোনার মেডেল উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি রাজশাহী থেকে মাদার বখশ সাহিত্য-সংস্কৃতি পুরস্কার লাভ করেন। রাজশাহীর ‘উত্তরা সাহিত্য মজলিস’ থেকেও গম্ভীরা গানের উদ্ভাবক হিসেবে সুফি মাস্টার পুরস্কৃত হন ১৯৭৭ সালে। গম্ভীরা গানের বিকাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুতুবুল আলম এবং রকিবুদ্দিনের যথেষ্ট অবদান আছে। বর্তমান যুগেও গম্ভীরা গানের ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনার জন্য গম্ভীরা তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।

গম্ভীরা শিল্পী মনোয়ারুল ইসলাম বকুল জানান, দেবীর আরাধনার জন্যই মূলত গম্ভীরার প্রচলন হয়েছিল। সে সময় শিবের গাঁজন হিসেবে গম্ভীরা পরিবেশন করা হতো। এখন সেই গম্ভীরা মানুষকে তার বোধগম্য করে বার্তা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনে দিনে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তিনি জানান, গম্ভীরা বাংলাদেশের লোকসংগীতের অন্যতম একটি ধারা। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন আছে। গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়।

গম্ভীরা শিল্পী বলেন, এখন অনেকে নানাভাবে গম্ভীরা করে থাকেন। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের শুদ্ধ ভাষা ছাড়া গম্ভীরার সঠিক চিত্র ফুটে ওঠে না। তিনি বলেন, ‘রংপুরের ভাওয়াইয়া গান অন্য সুরে গাইলে যেমন ভালো লাগবে না, তেমনি গম্ভীরার একটা নিজস্ব ভাষা আছে।’ নাতির ভূমিকায় অভিনয় করা সায়েদুর রহমান জানান, বাঙালি সমাজে নানা রকমের সম্পর্ক আছে। কিন্তু নানা-নাতির সম্পর্কে সব ধরনের আলোচনা করার সুযোগ থাকে। দর্শকও এটা ভালোভাবে নেয়।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর