শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আঞ্চলিক গান নিয়ে ৪২ বছরে বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

আঞ্চলিক গান নিয়ে ৪২ বছরে বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার

‘হামরা বোগর‌্যার ছোল, পুঁটি মাচ মারবার য্যাইয়া ম্যারা আনি বোল, হামরা বোগর‌্যার ছোল’— আশির দশকের খুবই পরিচিত একটি গান। এ গান গেয়ে বগুড়াবাসীকে বিশ্বে নতুন করে চিনিয়ে দিয়েছেন বগুড়ার তৌফিকুল আলম টিপু, আতিকুর রহমান মিঠুসহ বগুড়া ইয়ুথ কয়্যারের একঝাঁক শিল্পী। বগুড়ার জানা-অজানাকে যেমন করে তুলে ধরেছে, ঠিক তেমনি বগুড়ার শিল্প-সাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার। ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও ইয়ুথ কয়্যার এখনো জেলার সাংস্কৃতিক চেতনাকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত      ৯টা পর্যন্ত সংগঠনে এখনো নিয়মিত চলে সাংস্কৃতিক চর্চা।

একটি জেলাকে পরিচিত করতে একটি গানই যথেষ্ট। তেমনি বগুড়ার পরিচিতি তুলে ধরতে ‘হামরা বোগর‌্যার ছোল এই গানটি দেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত। আর এ গানটি করে বগুড়ার ইয়ুথ কয়্যার সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। গানের মধ্যে দিয়ে বগুড়া জেলাকে তুলে ধরেন বর্তমান ইয়ুথ কয়্যারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল আলম টিপু। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক বিশাল জায়গা সৃষ্টি করে নেন গানটি গেয়ে।

সমৃদ্ধ সংস্কৃতিই দেশ ও জাতির উন্নতির সোপন। সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধকে শাণিত, সামাজিক অবক্ষয় রোধ করে। সৎ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধকরণসহ সুস্থ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সংস্কৃতিকে মানব কল্যাণসহ দেশ ও জাতির সেবার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত পেশাভিত্তিক সংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা অপরিহার্য করার জন্য তৌফিকুল আলম টিপু ১৯৭৬ সালে ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় সভানেত্রী ছিলেন আয়েশা আশরাফ। ওই সময় স্থানীয় মঞ্চে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠান করেন। যা সহজেই পরিচিত হয়ে ওঠে বগুড়ায়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গতানুগতিক ধারার বাইরে ‘কোরিয়গ্রাফট অ্যাক্রোবেটিক’ নামে নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। যা সারা দেশে আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়। ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার’ পরিবেশিত অনুষ্ঠানগুলোর গান, গীতিনাট্য, নৃত্যের ধারাবর্ণনা, নাটক ইত্যাদি আঞ্চলিক ভাষায় রচিত বলে অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুগুলো সাধারণ ও নিরক্ষর মানুষসহ দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে সহজ বোধগম্য এবং গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে।

১৯৮০ সালে ‘হামরা বোগর‌্যার ছোল, পুঁটিমাচ মারবার য্যাইয়া ম্যারা আনি বোল’ গানটির রচনা করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হয় ১৯৮৩ সালে। গানটি প্রচার হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিপুর ডাক পড়তে থাকে। ওই সময়ের একমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) বেড়ে যায় তার কর্মব্যস্ততাও। একের পর এক আঞ্চলিক ভাষায় অনুষ্ঠান করে সারা দেশে বগুড়ার একটি আলাদা পরিচিতি তুলে ধরেন। অসংখ্য আঞ্চলিক গানসহ লোকগীতি, দেশাত্ববোধক, আধুনিক এবং বিষয়ভিত্তিক অনেক গানের রচয়িতা, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। নারী জাগরণ, নারী অধিকার, নারীশিক্ষা, নারী কল্যাণসহ শিশু অধিকার, শিশু নির্যাতন রোধ, শিশুশ্রম বন্ধকরণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, যুব জাগরণ, যাবতীয় যুব কল্যাণ, ভিক্ষাবৃত্তিরোধ, সন্ত্রাস, ড্রাগস এবং এইডসমুক্ত সমাজ গঠন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, পরিবার পরিকল্পনা, যৌতুক প্রথা রোধকরণ, বৃক্ষরোপণ, অধিক খাদ্য ফলাও, দেশাত্ববোধসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মেষ, মৌলবাদসহ সব ধরনের নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে গণসচেতনতা বৃদ্ধিকরণ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয় সংবলিত উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান, মঞ্চ, টিভি ভিডিও ইত্যাদি সাংস্কৃতিক মিডিয়াগুলোর মাধ্যমে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেছে বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার। ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গাসহ সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য স্থানীয় এবং জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। বগুড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শক্তিশালী এই সংগঠনটি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫৫/৬০টি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের স্থান পাকা করে নেয়।

বর্তমানে ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার’-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আতিকুর রহমান মিঠু ও প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৌফিকুল আলম টিপু। এই সংগঠনের রয়েছে অর্ধ-শতাধিক শিল্পী।

বগুড়া ইয়ুথ কয়্যারের সভাপতি আতিকুর রহমান মিঠু জানান, সমৃদ্ধ সংস্কৃতির লক্ষ্যে দেশে নৃত্য-গীত ও নাট্যকলার নিয়মিত চর্চা এবং পরিবেশনের ব্যবস্থা, দুস্থ শিল্পীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, দুর্গত মানুষের পাশে নিজেদের সর্বদা নিয়োজিত রাখা, হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করে সমসাময়িক সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় সাধন, আঞ্চলিক ভাষা এবং সংস্কৃতির উন্নয়ন সাধন, দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও লালন করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

সর্বশেষ খবর