বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংকটে চলচ্চিত্র : উত্তরণ কোন পথে?

সংকটে চলচ্চিত্র : উত্তরণ কোন পথে?

দীর্ঘদিন ধরে সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্প। নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত এখন এই শিল্পটি। এ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে কীভাবে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে চলচ্চিত্রকারদের মতামত তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

 

আমজাদ হোসেন

চলচ্চিত্রের দৈন্যদশা দেখে বড় দুঃখ হয়। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস শুধু এফডিসিকেন্দ্রিক কেন হবে। দেশব্যাপী শহীদ মিনার, শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, সব সিনেমা হলসহ সর্বত্র জাঁকজমকভাবে দিনটি উদযাপন হওয়া উচিত। সিনেমা হলগুলোতে কালজয়ী সিনেমা প্রদর্শন করা দরকার। তা তো হচ্ছে না। পরিবর্তে এই দিবসটি নিয়েও এখন বিভক্তি চলছে। এটি দুঃখ ও লজ্জাজনক। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশি চলচ্চিত্রকে রক্ষা করতে হবে।

 

আনোয়ারা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিনটিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে আজ আমরা নিজস্ব চলচ্চিত্র পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনটিকে চলচ্চিত্র দিবসের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি যেভাবে চলচ্চিত্র আর শিল্পীদের নিয়ে ভাবেন তা আগে কারও মধ্যে দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী হলেন চলচ্চিত্র শিল্প আর শিল্পীদের মমতাময়ী মা। তার স্বপ্নের চলচ্চিত্রকে রক্ষা করতে ভালো নির্মাতা, গল্প আর শিল্পীর বিকল্প নেই। এখন অনেকে শিল্প নয়, টাকার পেছনে ছুটেন। তাই মানসম্মত কাজ হয় না। ভারতের সঙ্গে যৌথ আয়োজনের ছবি ও বিনিময় সঠিক নিয়মে হতে হবে আর এসব ছবিতে আমাদের শিল্পীদের গুরুত্ব দিয়ে কাস্টিং দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজস্ব সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং নিজ দেশের প্রতিটি জিনিসের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তাহলে সংকট বলে আর কিছু থাকবে না।

 

আজিজুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই চলচ্চিত্র শিল্প কোনো অশুভ শক্তির অপতৎপরতায় ধ্বংস হয়ে যাক তা চাই না।  সমস্যা আসতেই পারে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা ভালো। অহেতুক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পথে গেলে কোনো গোপন অশুভ শক্তি সুযোগ নিতে পারে। এ শিল্পের উন্নয়নে কোনো অনিয়ম কখনো মেনে নিইনি নেবও না। ঐক্যবদ্ধভাবে শিল্পটিকে রক্ষা করতে হবে।

 

সুজাতা

আগে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে গল্প, গান, অভিনয়, সংলাপ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলত। কীভাবে জীবনধর্মী ছবি নির্মাণ করা যায় সেই চেষ্টা করা হতো। এখন সবাই তা করে না বলেই এখনকার বেশির ভাগ চলচ্চিত্র দর্শক মনে রেখাপাত করে না। নির্মাতা সালাউদ্দীন সাহেব তৎকালে উর্দু ছবি ঠেকাতে ‘রূপবান’ ছবিটি নির্মাণ করে রীতিমতো রেভ্যুলেশনের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই দেশপ্রেম, একতা, নির্মাতা আর শিল্পী এখন কোথায়? এফডিসি আজ জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই জঞ্জাল আমাদের সাফ করতে হবে। অশ্লীলতার বিরুদ্ধে তখন যদি সিনিয়র শিল্পীরা রুখে দাঁড়াতেন তা হলে একের পর এক অবক্ষয় আজ চলচ্চিত্রকে গ্রাস করত না। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই এফডিসি ও চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করতে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আর এজন্য সবাইকে সব ভেদাভেদ ভুলে এক প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াতে হবে। এই শিল্পকে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করতে হবে।

 

সিবি জামান

অনেকদিন ধরেই চলচ্চিত্রের দুঃসময় চলছে। একটি গ্রুপ দেশি চলচ্চিত্রকে উপেক্ষা করে ভারতীয় ছবিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আর তথ্যমন্ত্রীর প্রশ্রয়ে এটি হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশি চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এই শিল্পকে ধ্বংসে কোনো নীলনকশা তৈরি হতে দেওয়া যাবে না।

 

ছটকু আহমেদ

টাকার জোরে নিয়ম ভাঙার খেলা এখন চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। নিজস্ব চলচ্চিত্র নির্মাণ, আমদানি-রপ্তানি, যৌথ আয়োজন এক কথায় সব ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চললে সংকট বলে চলচ্চিত্র শিল্পে আর কিছু থাকার কথা নয়। এজন্য সবাইকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ রক্ষার মতো দেশের এই প্রধান গণমাধ্যমকেও বাঁচাতে হবে।

 

নরেশ ভূঁইয়া

মূল সমস্যা হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম একাত্ম হতে পারছে না। এখন চলচ্চিত্র ব্যবসা চলে গেছে সিনেমা হলের পাশাপাশি ইউটিউব, নেট, মোবাইল, পাওয়ার্ড বাই এসবে। আমরা আধুনিক এসব পদ্ধতির দিকে নজর না দিয়ে ব্যবসা নিয়ে শুধু ঝগড়া করছি। এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বরং শিল্পটি ধ্বংসের শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তাই সবকিছু বাদ দিয়ে সবাইকে নতুনত্বের পথে হাঁটতে হবে।

 

অনুপম হায়াৎ

চলচ্চিত্রের সংকট অভ্যন্তরীণ, আর্থিক, প্রযুক্তিগত, ঐক্য, সৃজনশীলতাসহ অনেক। উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহের ফলে দর্শক এখন সিনেমা হলে নয়, মোবাইলে ছবি দেখে। সিনেমা হলের উন্নত পরিবেশ, ভালো নির্মাণ, গল্প, অভিনয়, অনুদানের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখাতে পৃষ্ঠপোষকতা— সর্বোপরি সহনশীলতা চলচ্চিত্রের সব সংকট মোচন করতে পারে।

সর্বশেষ খবর