শিরোনাম
রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইত্যাদির ম্যাজিক হচ্ছে আমাদের পরিশ্রম ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা

শোবিজ প্রতিবেদক

ইত্যাদির ম্যাজিক হচ্ছে আমাদের পরিশ্রম ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা
আজ ইত্যাদির পুনঃপ্রচার। এটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর প্রচার হবে। সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট এলাকার একটি দুর্গম অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের ইত্যাদি। ইত্যাদি অনুষ্ঠান ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজ তার সাক্ষাৎকার। 

 

ইত্যাদির এবারের অনুষ্ঠানস্থল সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটের দুর্গম অঞ্চলে। পর্দার পেছনের গল্পটা শুনতে চাচ্ছি।

অক্টোবর মাসের ১২ তারিখ আমি প্রথম টাঙ্গুয়ার হাওর হয়ে টেকেরঘাট গিয়েছিলাম। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। আশ্বাস পেয়ে আমরা যাত্রা শুরু করি। প্রথমে আমরা বেশ কটি বিদ্যুৎ খুঁটি স্থাপন করে আলাদা ট্রান্সফরমার বসিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করি। ১৭ নভেম্বর আমরা ইত্যাদির বিশাল বহর নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ যাই। তারপর তাহেরপুর উপজেলা হয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা নৌপথে টেকেরঘাটে পৌঁছি। সাধারণত আমরা পাঁচ টনি ট্রাকে সেটের এবং লাইটের জিনিসপত্র পরিবহন করি, কিন্তু এখানে তাহেরপুরের রাস্তায় পাঁচ টনি ট্রাক যাবে না বলে তিন টনি ট্রাকে মালামাল পাঠাতে হয়েছে। এসব জিনিস ট্রাক থেকে নামিয়ে নৌকায় তুলে আবার হাওর পেরিয়ে নৌকা থেকে নামিয়ে কয়লা বহনকারী ট্রাকে তুলে লোকেশনে নিতে হয়েছে। তবে এবার দর্শকদের দোয়ায় এবং ভালোবাসায় আমাদের কলাকুশলীরা একটি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন। সেটের মালবাহী একটি ট্রাক উল্টাতে গিয়েও উল্টায়নি।

 

দেশের বিভিন্ন স্থানে ইত্যাদি প্রচারের পর ওই স্থানের দর্শনার্থী বেড়ে যায়। দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে কী কী করা উচিত?

আসলে আমাদের দেশে এমন সব চিত্তাকর্ষক, মনোমুগ্ধকর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান রয়েছে যা দেখলে কেউই আর অবসর কাটাতে বিদেশে যেতে চাইবে না। ইত্যাদিতে টেকেরঘাটের অপরূপ সৌন্দর্য যারা দেখেছেন, তারাও নিশ্চয়ই অনুধাবন করেছেন। সঠিক প্রচার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ এসব এলাকাকে যদি পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হয়, তবে এই টেকেরঘাটও হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান একটি পর্যটন কেন্দ্র।

 

 

অনেকেই ইত্যাদিতে প্রচারিত অনেক প্রতিবেদন নিজেদের মতো করে তাদের বলে চালিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে আপনারা কোনো পদক্ষেপ নেন না কেন?

কারণ আমরা এতে আনন্দ পাই। আমরা নিজেদের প্রচার চাই না, কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানে যারা আসেন তাদের প্রচার চাই। কারণ তারা দেশের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করেন।  আর আমরা যাদের দেখাই তাদের কাজটা দায়বোধ থেকে। আর দর্শকরাই জানেন এসব মানুষের কারা মূল্যায়ন করেন। তখনই ইত্যাদির নামটি চলে আসে। যেমন এবারের অনুষ্ঠানে দেখানো কিছু তরুণের মানবিক কাজ অনেকেরই হৃদয় স্পর্শ করেছে। যারা নিজেদের উদ্যোগে এ পর্যন্ত ২৪০টি শিশুকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। তাদের সততা এবং কাজ সবাইকে মুগ্ধ করেছে। আসলে এ তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ শক্তি। যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

দীর্ঘ তিন দশক ধরে সব বয়সের মানুষের কাছে প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এর রহস্যটা জানতে চাই।

এই রহস্যটা হচ্ছে ভালোবাসার আকর্ষণ, ভালো লাগার আকর্ষণ। এ ছাড়া কোনো ম্যাজিক বা জাদু নেই। ম্যাজিক হচ্ছে আমাদের পরিশ্রম, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, টেলিভিশন মিডিয়ার যথার্থ ব্যবহার। তাই আমাদের অনুষ্ঠানের আগে লেখা হয়, ‘তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান’। আর এটিই হচ্ছে টিভির মূলমন্ত্র। আর একটি অনুষ্ঠান প্রচারের পর বিভিন্ন মাধ্যমে দর্শকদের কাছ থেকে যে সাড়া পাই, তখন মনে হয় আমাদের শ্রম সার্থক হয়েছে।

 

এবারের অনুষ্ঠানে কেমন সাড়া পেয়েছেন?

দেখুন আমাদের গর্ব বাঙালিদের মধ্যে প্রথম পর পর দুবার পৃথিবীর সর্বোচ্চশৃঙ্গ এভারেস্টজয়ী এম এ মুহিত ও বাংলাদেশের প্রথম মহিলা এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার ইত্যাদি লেখা লোগো নিয়ে এভারেস্টে উঠেছিলেন। এবারও তেমনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট ১০০টি আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নেওয়া জার্মান প্রবাসী শিবশঙ্কর পাল বুকে ইত্যাদি লেখা নিয়ে ১০০তম ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। এসবই ইত্যাদির প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং মূল্যায়ন। আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে এ মাসেই প্রথমবারের মতো সুনামগঞ্জের তাহেরপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়েছে এবং এখানে লাউড়ের গড় রাজ্যের রাজধানীর সন্ধান পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমাদের ইউটিউব, ফেসবুক ফ্যান পেজে গেলেই দেখা যাবে দর্শকদের কেমন সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই ইত্যাদি দেখে টেকেরঘাট ভ্রমণ করার পরিকল্পনা করেছে।

সর্বশেষ খবর