বুধবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

যেমন চলচ্চিত্রাঙ্গন চাই

যেমন চলচ্চিত্রাঙ্গন চাই
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্র নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দর্শক আর সিনেমা হলের স্বল্পতা, স্থানীয় ছবি নির্মাণ হ্রাস, আমদানি ও যৌথ প্রযোজনায় নানা অন্তরায়- এমন অনেক কারণে কোনোভাবেই প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না চলচ্চিত্রাঙ্গন। নতুন বছরে নতুন সরকারের কাছে এই জগতের উন্নয়নে চলচ্চিত্রকারদের চাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

ইফতেখার নওশাদ

[সভাপতি, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি]

সরকার ইতিপূর্বে ৬৪টি জেলায় মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের যে ঘোষণা দিয়েছিল তার বাস্তবায়ন ও সিনেমা হলে  ডিজিটাল প্রজেক্টর স্থাপন ও সংস্কারের যে উদ্যোগ গত টার্মে নিয়েছিল তা যেন কার্যকর হয়। চলচ্চিত্রের অভাব দূর করতে হবে। ছবির অভাব পূরণে বিদেশি চলচ্চিত্র আমদানি ও যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণে নীতিমালা সহনশীল করতে হবে, যাতে দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে আমদানিকৃত ছবির ম্যারিট নষ্ট হয়ে না যায়।

 

ববিতা

[চলচ্চিত্রকার]

বর্তমান সরকার এফডিসির আধুনিকায়ন, বঙ্গবন্ধু ফিল্মসিটির উন্নয়ন, ফিল্ম আর্কাইভের নিজস্ব ভবন নির্মাণ, চলচ্চিত্রকে শিল্প এবং চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণা- সর্বোপরি অসহায় শিল্পীদের পাশে পরম মমতায় এগিয়ে এসেছে। এসবের কৃতিত্ব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি চলচ্চিত্রবান্ধব মানুষ। তার কাছে প্রত্যাশা, বর্তমানে এই অঙ্গনে যেসব প্রতিকূলতা রয়েছে অচিরেই তা দূর করে দেবেন। জেলা শহরে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ, চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদানের অর্থ বৃদ্ধিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেবেন বলে আমি আশা করছি।

 

খোরশেদ আলম খসরু

[প্রযোজক সমিতির সাবেক কর্মকর্তা]

বর্তমান সরকার নিঃসন্দেহে চলচ্চিত্রবান্ধব। গত টার্মে যিনি তথ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি শুধু মুখে চলচ্চিত্রের উন্নয়নের কথা বলেছেন, বাস্তবে কিছুই করেননি। বর্তমানে হাছান মাহমুদ তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি কর্মঠ এবং উন্নয়নে আন্তরিক ব্যক্তিত্ব। তিনি চলচ্চিত্র জগতের সব মানুষকে নিয়ে একসঙ্গে এই শিল্পের উন্নয়নে যা প্রয়োজন সবই করবেন। প্রতি জেলায় মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ ও সিনেমা হল আধুনিকায়নে জোরালো ভূমিকা রাখবেন।

 

শাবনূর

[অভিনেত্রী]

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে ঐক্য প্রয়োজন। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের কাছে এই শিল্পের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে বর্তমান চলচ্চিত্রবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এ শিল্পটিকে দৈন্যদশার কবল থেকে উদ্ধার করবেনই। অতীতে দ্বিধাবিভক্তির কারণে শিল্পটির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান তথ্যমন্ত্রীর কাছে সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই শিল্পের দৈন্যদশার কথা তুলে ধরেন তাহলে এর বন্ধ্যত্ব কাটতে বাধ্য।

 

শাকিব খান

[অভিনেতা]

প্রযোজকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন ঐক্য আর সরকারের সহযোগিতা। নিজেদের মধ্যে একতা না থাকলে সরকার এ শিল্পের অভাব-অভিযোগ পূরণ কীভাবে করবে? ৬৪টি জেলায় মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ ও সিনেমা হল আধুনিকায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এই শিল্পে বিনিয়োগে প্রযোজকরা আগ্রহ দেখাবে। মানসম্মত ছবি নির্মাণের বিকল্প নেই।

 

আবদুল আজিজ

[চলচ্চিত্র প্রযোজক]

প্রতি জেলায় সরকারি উদ্যোগে কমপক্ষে একটি করে মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। বিদেশের সঙ্গে চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানিতে সমতা আনতে হবে। আমাদের ছবি ভারতে রপ্তানি করলে সেটি মুম্বাইয়ে পাঠানো হয় সেন্সর করতে। এতে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়। ফলে ওই ছবির বিপরীতে আমদানিকৃত ছবিটি এখানে প্রদর্শনে অপেক্ষা করতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে নানাভাবে ছবিটির ম্যারিট নষ্ট হয়ে যায় বলে দর্শক তা না দেখার কারণে আমদানিকারক ও সিনেমা হল মালিক চরম ক্ষতির মুখে পড়ে। যৌথ প্রযোজনার নতুন নীতিমালাও বাংলাদেশের জন্য প্রতিকূল। এই ধারার ছবি করতে গেলে আগে সরকারের কাছ থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করা যেত। আর এখন স্পেশাল ব্রাঞ্চেরও অনুমতি নিতে হয়। এভাবে ছবি নির্মাণে প্রতি পদে হয়রানির শিকার হতে হলে কীভাবে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরবে।

 

ডি এ তায়েব

[অভিনেতা]

চলচ্চিত্র নিয়ে বাঙালির লালিত স্বপ্ন একসময় নানা প্রতিকূলতায় কোমায় চলে যায়। বর্তমান সরকার নিঃসন্দেহে চলচ্চিত্র ও শিল্প-সংস্কৃতিবান্ধব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পের উন্নয়নে এবং অসহায় শিল্পী-নির্মাতার দুর্দশা লাঘবে যে নিরলস ভূমিকা রেখে গেছেন তা অতুলনীয়। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী অতীতে তার দক্ষ কর্মপরায়ণতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবার চলচ্চিত্র জগতের সব প্রতিকূলতা কেটে যাবে বলে আমার প্রত্যাশা। সরকার প্রতিটি থানায় মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করে দিলে চলচ্চিত্রকারদের কাজ দর্শকের কাছে পৌঁছবে এবং চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।

 

বদিউল আলম খোকন

[মহাসচিব, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি]

আগের তথ্যমন্ত্রী কেবলই আশ্বাস দিয়ে গেছেন। এই শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজই করেননি। চলচ্চিত্রকাররা তার কাছে কিছুই পাননি। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম। এই মাধ্যমের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখলেই যথেষ্ট। এর উন্নয়ন নিয়ে আর কোনো অন্তরায় থাকবে না। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী একজন দেশপ্রেমিক ও দক্ষ বিবেচক। তিনি নিশ্চয়ই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন এবং এই শিল্পের সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর