শুক্রবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
লোকেশন বৈচিত্র্য, গল্প ও বাজেট অজুহাত

দেশের বাইরে বাড়ছে নাটকের শুটিং

পান্থ আফজাল

দেশের বাইরে বাড়ছে নাটকের শুটিং

বিটিভিযুগীয় সময় থেকে এ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, টেলিছবি ও ধারাবাহিক। সেই সাদা-কালো সময়ে নাটক নির্মাণ ঘরোয়া পরিবেশে সীমিত লোকেশনে শুরু হলেও পরবর্তীতে নাটক নির্মাণের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠতে শুরু করে শুটিং হাউস। এরপর প্যাকেজ নাটক নির্মাণ বৃদ্ধি পেতে থাকলে পর্যায়ক্রমে রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং হাউসের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। খণ্ড ও ধারাবাহিক নাটক নির্মাণের জন্য এ হাউসগুলো নাট্যনির্মাতাদের নির্ভরতার জায়গায় পরিণত হতে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি প্রায় প্রযোজক-নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা একগুচ্ছ নাটক ও ইউনিট নিয়ে ছুটছে বিদেশে-বিভূঁইয়ে। ফলে দেশের শুটিং হাউস সংশ্লিষ্টরা বেকার হয়ে পড়ছেন। শুটিং হাউসে কাজ কমে গেছে। নাটকপাড়ায় আগের মতো ব্যস্ততা তেমন নেই। গত কয়েক বছর ধরে শুটিংয়ের অজুহাতে নাটকের কলাকুশলীদের একটি বড় অংশ ছুটছে বিদেশে। দেশে এত দর্শনীয় স্থান থাকা সত্ত্বেও কেন এই দলবেঁধে বিদেশ যাত্রা? একটা সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের টিভি নাটকের শুটিং হতো। কিন্তু এখন তা তেমন চোখে পড়ে না। তবে মজার বিষয় হলো, চেনা কিছু দেশে নাটকের শুটিং হচ্ছে। গল্পের জন্য নাকি নাটকের বাজেট নেই অথবা বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে? এ প্রসঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘গল্পের প্রয়োজনে বিদেশে শুটিং হতেই পারে। তবে শিল্পীদের সচেষ্ট হতে হবে প্রথমে। শুধু বাইরে নাটকের শুটিং করা কিন্তু ঝামেলার। এ নিয়ে নতুন কিছুই বলার নেই। তবে বিদেশে শুটিংয়ের ক্ষেত্রে নির্মাতা, প্রযোজক ও শিল্পীদের উচিত জেনে-বুঝে যাওয়া।’ গত কয়েক বছর কমন কিছু দেশে যেমন- নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত বা মাল্টায় হরহামেশাই চলেছে একক, খণ্ডনাটক, ধারাবাহিক ও ওয়েব সিরিজের শুটিং। ব্যতিক্রমও আছে। দুই-একজন নির্মাতা গল্প বা লোকেশনের প্রয়োজনে শুটিং করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে কয়েকটি নাটক আর একঝাঁক শিল্পীকে সঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। তবে এই ভিনদেশে শুটিংয়ের লাভ-ক্ষতির অংক কষতে চান না অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু নির্মাতা-প্রযোজকরা তা কড়ায়-গণ্ডায় কষেন। তাদের মন্তব্য, ‘দেশের বাইরে শিল্পীদের সঠিক সময়ে স্পটে পাওয়া যায়; কিন্তু দেশে এটি সম্ভব হয় না।’ গত দুই বছরে একঝাঁক নবীন শিল্পী উড়াল দেন বাইরের বিভিন্ন দেশে। এসব টিমের সঙ্গে সর্বদা ৩-৪ জন অখ্যাত মডেল নামধারী অভিনেত্রীও থাকেন। টিভি চ্যানেলের জন্য শুধু নয়, ইউটিউবকে কেন্দ্র করেও এই নাটক ও ওয়েব সিরিজ নির্মাণ বেড়েছে। নবীনদের পাশাপাশি বড় বড় তারকারা ঝুঁকেছেন বিদেশে নাটকে শুটিংয়ে। তবে দেশের বাইরে মূলত একক নাটকেরই শুটিং বেশি হচ্ছে। দেশের বাইরের শুটিং নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘কেন কি কারণে দেশের বাইরে নির্মাতারা শুটিং করছেন এটি বলা সম্ভব নয়। দেশে তো অনেক সুন্দর সুন্দর লোকেশন রয়েছে।’ দেখা গেছে, একজন নির্মাতা বা নির্দেশক একসঙ্গে তিনটি এক ঘণ্টার নাটক অথবা ধারাবাহিকের ৭-৮ পর্বের কাজ করার জন্য ৬-৭ দিনের জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। ইউনিটে সদস্য থাকছেন কমপক্ষে ১৪-১৫ জন।

তাদের বিমান ভাড়া যদি জনপ্রতি কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকাও হয়, তাহলে প্রয়োজন পৌনে চার লাখ টাকা। থাকার জন্য যদি হোটেলের ১০ রুমও ভাড়া হয়, তাহলে রুমপ্রতি প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হলে ১০ রুমে ৫০ হাজার আর সাত দিনে হয় সাড়ে তিন লাখ টাকায়। খাওয়া খরচ প্রতিদিন তিন বেলা গড়ে ৯-১০ হাজার টাকা করে সাত দিনে ৭০ হাজার টাকা। এরপর রয়েছে বিভিন্ন লোকেশনে যাতায়াত এবং লোকেশন ভাড়া। তাও লাখ টাকার কম নয়। রয়েছে অভিনয়শিল্পী আর কুশলীদের সম্মানী। সবশেষে এডিটিং আর মিউজিকের কাজ তো আছেই। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার বাজেট। টিভি চ্যানেলগুলোতে এই তিনটি নাটক বিক্রি করে আপনি সর্বোচ্চ পেতে পারেন ছয় থেকে আট লাখ টাকা। তাহলে নিশ্চিত লোকসান জেনেও কেন প্রতিনিয়ত বিদেশে শুটিংয়ে যাওয়ার জন্য খাবি খাচ্ছেন নির্মাতা আর শিল্পী-কুশলীরা? এখন যত নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়, তার অর্ধেক দেশের বাইরে শুটিং করা। হাতে গোনা দুই- তিনজন তারকা ছাড়া সবাই দেশের বাইরে       নিয়মিত শুটিং করেন।

সর্বশেষ খবর