সোমবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিনেমায় নজর নেই কারও

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমায় নজর নেই কারও

চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং সিনেমা হলের সংখ্যা হ্রাসের ধারাবাহিকতা থামছেই না। এর কারণ হিসেবে চলচ্চিত্রকাররা বলছেন, সিনেমার প্রতি নজর নেই কারও। নির্মাতা থেকে শিল্পী, কলা-কুশলীদের বেশির ভাগই এখন দলাদলিতে ব্যস্ত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক চলচ্চিত্রকারের কথায়- কাজের চেয়ে ঈর্ষাপরায়ণতা আর কাদা ছোড়াছুড়ি বেড়ে গেলে যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য। যা হচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পের বেলায়। এ প্রসঙ্গে প্রযোজক আবদুল আজিজ বলেন, সিনেমার টিকিট থেকে প্রযোজক যদি নামমাত্র অর্থ পায়, তাও আবার অনিয়মিত। এতে লোকসান গুনে কেন নির্মাণে আসবে প্রযোজক? এ অবস্থায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করে লাভ কী? এমন উৎকণ্ঠা সব প্রযোজকের। সিনেমা হল মালিকরাও ব্যবসা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, বছরে হুট করে দু- একটি ছবি ব্যবসা করলে তা দিয়ে তো একটি সিনেমা হল চালানোর মতো সারা বছরের খরচ উঠে আসে না। বিদেশি ছবি আমদানিও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় সিনেমা হল টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সংগঠন প্রযোজক সমিতির নির্বাচন বন্ধ প্রায় এক দশক ধরে। ফলে স্থানীয় ও যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্র আমদানিসহ চলচ্চিত্রকারদের স্বার্থ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এই শিল্পে চলছে চরম অনিশ্চয়তা। শতকরা ৯৫ জন প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী ও কলা-কুশলী এখন বেকার।

এর সঙ্গে বর্তমানে যোগ হয়েছে তারকাদের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনমুখী হওয়া। চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, একটি প্রবাদ আছে, ‘যার কাজ তাকে সাজে, অন্য লোকের লাঠি বাজে’। শিল্পী যদি সিনেমা হলের অভাবের কথা বলে আর রাজনীতিতে যেতে চায় তাহলে তার যে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাই নেই সে সেই দায়িত্ব পালন করবে কীভাবে? এমন অনেক কারণেই শিল্পটি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এর ফলে হাতে গোনা যে কটি ছবির নির্মাণ কাজ চলছে সেগুলো শিডিউল জটিলতায় পড়ায় প্রযোজক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এফডিসি এখন কর্মশূন্য হয়ে পড়েছে। এখানে ছবির নির্মাণ কাজ চলে কালেভদ্রে। এ নিয়ে প্রখ্যাত অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন তো চলচ্চিত্র নির্মাণ তেমনভাবে আর হয় না। ছবি নির্মাণ উদ্বেগজনক হারে কমে গেছে বলে শিল্পীদের অভিনয়ের সুযোগও কমে গেছে। এফডিসিতে চলচ্চিত্রের কাজ আর নেই। কেউ মারা গেলে তার জানাজা পড়তেই আসা হয় এফডিসিতে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ইস্পাহানি বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থ ও এর ফিডব্যাক আগে দেখা দরকার। এই অবস্থা নেই বলে শিল্পটির অবস্থা এখন নাজুক। ভালো ছবি পেলে দর্শক যে সিনেমা হলমুখী হয় তার প্রমাণ গত বছরেই কয়েকবার পাওয়া গেছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ৬৪ জেলায় সরকারি উদ্যোগে সিনেমা হল নির্মাণ ও আধুনিকায়নের কথা শোনা গেলেও চলচ্চিত্রকারদের কথায় তা আজও বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই ব্যবসা নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছি। তাছাড়া সরকারি অনুদানের অর্থ নিয়ে সব সময়ই নয়ছয় চলে। এতে সরকারি অর্থের অপচয়ই শুধু হয়। মুভি মুঘল-খ্যাত প্রযোজক এ কে এম জাহাঙ্গীর খান বলেন, বর্তমানে চলচ্চিত্রের ব্যবসা খুবই মন্দা। এখন টিমওয়ার্ক নেই, কেউ গল্পের গভীরে যেতে চান না। আশির দশক পর্যন্ত গল্পপ্রধান ছবি নির্মাণ হতো বলে দর্শক বার বার তা দেখত। মানে চলচ্চিত্র নির্মাণে কেউই এখন আর আন্তরিক না থাকায় শিল্পটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

শীর্ষ নায়ক শাকিব খান বলেন, যোগ্য নির্মাতা আর গল্পকার নিয়ে কাজ করতে হবে। চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। সম্মিলিতভাবে যে কোনো সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। সিনেমা হল আধুনিক করতে হবে। সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ছবি নির্মাণ করতে হবে। আগে চলচ্চিত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলচ্চিত্রকাররা পরে অন্য কাজ করলে আর কোনো সমস্য থাকার কথা নয়। চিত্রনায়ক বাপ্পী বলেন, জাজ মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে এসেছিলাম। পরে চলচ্চিত্রের একটি পক্ষ এই সংস্থা ও যৌথ প্রযোজনার নির্মাণের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামে। তাদের কথা ছিল দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরিয়ে আনা হবে। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাণ করা হবে। বাস্তবে কিছুই হয়নি। তারা নিজেরাও কিছু করেনি জাজের কাজেও বাধা দিয়েছে। এ অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরে আমি জাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের সৃষ্টিশীল কাজকে সমর্থন করছি। সিনেমার প্রতি যাদের নজর আছে তাদের সঙ্গেই থাকতে হবে। তবেই এই শিল্পের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর