রবিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে সিনেপ্লেক্স

চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে সিনেপ্লেক্স

গতকাল ধানমন্ডির সীমান্ত স্কোয়ারে চালু হলো ‘স্টার সিনেপ্লেক্স। সিনেমা দেখার মাধ্যম এখন বদলে গেছে। জমে উঠেছে সিনেপ্লেক্স কালচার। সিনেমা হল নয়, সিনেপ্লেক্সে ছবি দেখতেই এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে দর্শক। সিনেপ্লেক্সকে সিনেমা দেখার আধুনিক ব্যবস্থা বলা হয়। ২০০৪ সালে ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’ নামে প্রথম সিনেপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হয় পান্থপথে বসুন্ধরা শপিংমলে। এরপর প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কে ব্লকবাস্টারস এবং শ্যামলী শপিংমলে শ্যামলী সিনেপ্লেক্স। আরও অনেক সিনেপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ চলছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ রয়েছে। এ নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

সিনেপ্লেক্সে কেন আগ্রহ

শপিংমলকেন্দ্রিক সিনেমাপ্লেক্সে ফুড কর্নারসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা ও উন্নত পরিবেশ থাকায় দর্শক এতে ছবি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একই সঙ্গে শপিং করা, খাওয়া-দাওয়া, বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকা এবং উন্নত প্রযুক্তি ও মানসম্মত পরিবেশই হচ্ছে সিনেপ্লেক্সের দর্শক আকর্ষণের মূলমন্ত্র।

 

সিনেমা হল মালিকদের কথা

বন্ধ হওয়া লায়ন সিনেমার কর্ণধার মির্জা আবদুল খালেক বলেন, ছবি ও দর্শকের অভাবে আমার সিনেমা হলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। মাঝে-মধ্যে চলার মতো দু-একটি ছবি পেলেও দেখার মতো ছবির অভাবে দর্শক আর সিনেমা হলে আসছে না। এখন সিনেপ্লেক্স কালচারের যুগ। তাই কেরানীগঞ্জে লায়ন সিনেপ্লেক্স চালু করতে যাচ্ছি। মানসম্মত দেশি-বিদেশি ছবি পেলে দর্শক যে সিনেমা হলে আসে তা স্টার বা ব্লকবাস্টার সিনেমাস দিয়ে ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, সরকার ৬৪ জেলায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হলে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী ও প্রদর্শকদের মধ্যে প্রাণ ফিরবে। কারণ চলচ্চিত্রের এই লোকসানি অবস্থার মধ্যে ব্যাংক লোন নিয়ে বা নিজস্ব অর্থায়নে কারও পক্ষে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ সম্ভব নয়। ৬৪ জেলায় সরকারি সিনেপ্লেক্স চালু হওয়ার পর চলচ্চিত্র ব্যবসায় জোয়ার এলেই ভরসা পেয়ে সিনেপ্লেক্স নির্মাণে আগ্রহ দেখা দেবে।

 

চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মন্তব্য

চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান, সোহানুর রহমান সোহান, বজলুর রাশেদ, চলচ্চিত্র প্রযোজক ইফতেখার নওশাদ, আবদুল আজিজসহ প্রায় সবারই অভিন্ন মত হলো- এখন কোনো দর্শক আর যানজট ঠেলে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করে ছবি দেখতে যেতে চায় না। দর্শকের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে। তারা সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশে একই সঙ্গে শপিং, খাওয়া-দাওয়া, বাচ্চাদের খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শপিংমলে অবস্থিত সিনেপ্লক্সে ছবি দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ফলে এখন ছবির ব্যবসার জন্য সিনেপ্লেক্স নির্মাণই একমাত্র পথ।

 

সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

স্টার সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহউদ্দীন বলেন, মানসম্মত ছবি এবং উন্নত পরিবেশের কারণে সিনেপ্লেক্স কালচার দ্রুত দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি হচ্ছে সিনেমা দেখার আধুনিক ব্যবস্থা। বিশ্বে অনেক আগেই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আমার মতে, দেশে যদি বেশি পরিমাণে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হয় তাহলে দর্শক আবার সিনেমা হলে এসে ছবি দেখতে আগ্রহী হবে। তবে ভালো ছবি অবশ্যই নির্মাণ হতে হবে। দেশি ছবি পেলেই আমরা তা প্রদর্শন করি। দেশীয় ভালো ছবি নিয়মিত পাওয়া যায় না বলে বিদেশি ছবি বেশি প্রদর্শন করতে হয়। আমাদের প্রত্যাশা স্থানীয় নির্মাতারা ভালো ছবি নির্মাণ করবেন আর আমরাও সব শ্রেণির দর্শক পেয়ে সিনেপ্লেক্সের ব্যবসা চাঙ্গা করতে পারব। এতে ঢাকার সিনেমা হলের সমৃদ্ধি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস আবার ফিরে আসবে।

সর্বশেষ খবর