সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভালো-মন্দের এফডিসি...

আলাউদ্দীন মাজিদ ও পান্থ আফজাল

ভালো-মন্দের এফডিসি...

বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে গড়া এফডিসিতে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে এই মহান নেতার স্মৃতিফলক। মূল ফটক দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন এ ফলকটি। ভগ্নদশায় পতিত সংস্থার শ্রী অনেকটা বৃদ্ধি করেছে এই ফলক।

এফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ এখন কমেছে। এই অভিযোগ নির্মাতা আর প্রদর্শকদের। এখানেও তারকাদের সরব উপস্থিতি আর লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন-কাট শব্দ প্রায় নেই বললেই চলে। এফডিসির এই চিত্র এখন চিরচেনা হলেও গতকাল সকালে তা আরেকবার স্ব-চোখে দেখার জন্য রওনা হলাম চলচ্চিত্র নির্মাণের এই সূতিকাগারের দিকে। আগে তারার মেলা দেখতে এফডিসির গেটে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাত। প্রহরীরা সেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতেন। লাঠিপেটাও চলত নিয়মিত। এখন সেই চিত্র আর নেই। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এফডিসিতে প্রবেশ করতেই আমরা দেখি তিনজন গার্ড অনেকটা অলস ভঙ্গিতে বসে আছেন। তারা কেমন আছেন, জানতে চাইলে অনেকটা বিরক্তির সুরে বলে ওঠেন, ‘স্যার ছবির কাজকাম নাই। এইভাবে বইসা থাকতে ভালো লাগে না।

চলচ্চিত্রের মানুষ জনগো আমরাই দেখি না, বাইরের মানুষ দেখতে আইবো কোথা থাইকা।’ গার্ডের মুখে হতাশার কথা শুনে নিজেরাও অনেকটা বিব্রত হয়ে এগোতে লাগলাম ভিতরের দিকে। চারদিকে জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। এদিক-সেদিক ময়লা-আবর্জনা। কয়েকটা কুকুর আর বেড়াল জনশূন্য আঙিনা পেয়ে কেউ ঘুমুচ্ছে কেউবা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভালো লাগল গেট থেকে সোজা ঢুকে ডানে শুটিং ফ্লোরের দিকে যেতেই সামনাসামনি স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ফলকটি। খুব পরিপাটি করে সাজিয়ে জাতির জনকের প্রতি সম্মান জানানোর বিষয়টি ভালো লাগল। পরিচালক সমিতিতে যেতেই নির্মাতা শাহ আলম কিরণ আর সাঈদুর রহমান সাঈদের সঙ্গে দেখা। কিরণ বললেন, সিনেমা হল কমে যাচ্ছে বলে প্রযোজকের অভাব। তাই পরিচালকদের বেশির ভাগই বেকার। এ অবস্থা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টের। সাঈদুর রহমান সাঈদ বললেন, এ মাসেই মধুর ক্যান্টিন ছবিটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ১৮ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শুটিং করা যাবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাই মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ছবির কাজ শুরু করতে হবে। ইতিমধ্যে ছবির শুটিংয়ে অংশ নিতে কলকাতা থেকে উড়ে এসেছিলেন অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। কাজ শুরু করতে বিলম্ব হবে জেনে তিনি ফিরে গেছেন। পরিচালক সমিতির পাশেই শিল্পী সমিতির অফিস। সেখানে বসে আছেন অফিস সহকারী জাকির। তিনি জানালেন, কোনো কর্মকর্তাই এখনো আসেননি। এবার প্রশাসনিক ভবন মানে জহির রায়হান কালার ল্যাবের দিকে যেতেই দেখা গেল একটি ছবির শটিং চলছে। ছবির নাম ‘প্রেম চোর’। নির্মাতা উত্তম আকাশ জানালেন, একজন নতুন নায়ক আর কলকাতার নায়িকা নেহাকে নিয়ে রোম্যান্টিক গল্পের এই ছবির শুটিং আজই শুরু করেছেন তিনি। প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে এমডির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়–য়া জানান, এমডি লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ এখন কলকাতা। তথ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গেছেন তিনি। অন্য কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া গেল না।

হিমাদ্রি বড়ুয়া জানালেন, সবাই সরকারি ট্রেনিংয়ে গেছেন। মান্না ডিজিটাল কালার ল্যাবের অপটিকাল বিভাগে গেলে সেখানে কর্মরত নজরুল জানালেন, অপটিক্যাল মেশিনটি এনালগ হওয়ায় এটি দিয়ে ডিজিটাল ছবির কাজ করা যাচ্ছে না। এডিটিং ভবনে ৫টি ডিজিটাল মেশিন স্থাপন হলেও কোনো কাজ নেই। সংশ্লিষ্টরা বেকার বসে আছেন। বেরিয়ে যাওয়ার পথে এফডিসির ক্যান্টিনে লাঞ্চ করতে চাইলাম। এটি বন্ধ দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রযোজক শ্রাবণের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ আর লোকজন নেই, তাই এফডিসির মতো এটিও লোকসানের কবলে পড়েছে। এফডিসি লোকসানের ভার বইতে পারলেও এটি পারেনি। তাই বন্ধ হয়ে গেছে। পাশে অপরিচিত একজন সাংবাদিক জেনে আমাদের কাছে ছুটে এসে জানতে চাইলেন, আচ্ছা পরিচালক সমিতির সভাপতি গুলজার সাহেব নাকি এফডিসির এমডি হচ্ছেন? কিছু জানেন নাকি? তার কথার উত্তরে বললাম, শুনেছি, তবে কতটুকু সত্যি এখনো জানি না। তিনি বলে চললেন, চলচ্চিত্রের মানুষকে এমডি করলে তিনি হয়তো সংস্থাটির দিকে সুনজর দেবেন। আবার তার প্রশ্ন, কি, ঠিক বলেছি না? হ্যাঁ, সূচক মাথা নেড়ে জনশূন্য এফডিসি ছেড়ে রাজপথের যানজটে নামলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর