বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

তারকা সংকটে ঢাকাই ছবি

শাকিব-অপুর পরে কে...

আলাউদ্দীন মাজিদ

তারকা সংকটে ঢাকাই ছবি

ঢাকাই ছবিতে তারকা সংকট এখন প্রকট। শিল্পীর অভাব নেই। নতুন শিল্পীদের অভিষেক চলছেই। কিন্তু দর্শক গ্রহণযোগ্যতা আর তারকা খ্যাতি পাচ্ছেন না কেউ। সর্বশেষ নায়ক শাকিব খান আর নায়িকা অপু বিশ্বাস তারকাখ্যাতি পেলেও তাদের স্থান দখল করতে পারেননি বা তাদের বিকল্প হিসেবে তারকাখ্যাতি পাননি কেউ। কেন এখন তারকা গড়ে উঠছে না। এমন প্রশ্নে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান বলেন, এখন যারা অভিনয়ে আসছে তারা শুরুতেই এবং সহজেই অর্থবিত্ত আর খ্যাতি পেতে চায়। কেউ অভিনয় শিখেও আসছে না বা শেখার প্রতিও কারও আগ্রহ নেই। মূলত এই কারণে শিল্পী প্রচুর পাওয়া গেলেও তারকার অভাব থেকেই যাচ্ছে। আরেক খ্যাতিমান নির্মাতা মতিন রহমানের কথায়Ñ আগে কাজের প্রতি শিল্পীদের যে ডেডিকেশন ছিল তা এখন কোথায়? এর জন্য নির্মাতারাও দায়ী। তারা দায়সারা গোছের কাজ করেন বলে নতুন যারা অভিনয়ে আসছে তারা ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আরেক প্রখ্যাত নির্মাতা ও তারকা তৈরির কারিগর সোহানুর রহমান সোহানের কথায়, এখন যারা এই অঙ্গনে আসছে তাদের মধ্যে অভিনয়ে পূর্ব প্রস্তুতি কিংবা নায়কোচিত চেহারা ও আচরণ নেই। ফলে দর্শক গ্রহণযোগ্যতার অভাবে এক-দুটি সিনেমার পরই হারিয়ে যায় তারা। তাই দিন শেষে শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসেই নির্ভরতা খুঁজে  ফেরেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। দিন শেষে অমোঘ সত্য হলো শাকিব-অপুর বাইরে এই মুহূর্তে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নির্ভরশীল কোনো তারকা আর নেই। প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাতা মালেক আফসারী বলেন, শাকিব-অপুর পর তারকা হিসেবে আর কাউকে তেমন পাওয়া যায়নি। নায়িকাদের মধ্যে মাহী অনেকটা পথ এগোলেও বাছবিচারহীন ছবি হাতে নেওয়ার কারণে উত্থান-পতনের মধ্যেই আছে, পরীমণির মধ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও দক্ষ নির্মাতার অভাবে এই নায়িকা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারছে না। জয়ার দর্শকপ্রিয়তা দুই বাংলায় যথেষ্ট থাকলেও এই অভিনেত্রী ভিন্ন ধারার ছবির প্রতি বেশি ঝুঁকে থাকায় সবশ্রেণির দর্শকের তারকা হয়ে উঠতে পারছে না। দেশ স্বাধীনের আগে কিংবা পরে ঢাকার চলচ্চিত্র  ধারাবাহিকভাবে কবরী, শাবানা, সুচন্দা, ববিতা, সুচরিতা, অঞ্জনা কিংবা চম্পাদের নিয়ে যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছিল, নব্বই দশকের পর সেটা ধরে রেখেছিলেন দিতি, শাবনাজ, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমারা। পরবর্তী সময়ে নির্ভর করার মতো অভিনেত্রী আসেনি আর। বর্তমান নায়কদের নিয়েও রয়েছে আস্থার সংকট। রাজ্জাক, সোহেল রানা, আলমগীর, ফারুক, জসিম, জাফর ইকবাল, নাঈম, ইলিয়াস কাঞ্চন পরবর্তীতে সালমান শাহ ছিলেন একজন আপাদমস্তক তারকা। তার অকাল মৃত্যুর পর মান্না, আমিন খান, ওমর সানী, রিয়াজ,  ফেরদৌস, শাকিব খানের ওপরও নির্মাতাদের আস্থা ছিল। তাদের নামেই বড় অঙ্কের টেবিল কালেকশন পাওয়া যেত। এরপর ২০০৬ সাল থেকে ঢাকাই চলচ্চিত্রকে একাই টেনে নিয়ে চলেছেন শাকিব খান। চলচ্চিত্রে শিল্পী সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন মুখ খোঁজার অভিযানে নামা হয়েছে বহুবার। অনেক সময় ব্যক্তিগতভাবেও প্রযোজক-পরিচালকরা নতুন মুখের আগমন ঘটিয়েছেন। কিন্তু এ কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাবে কোনো ইতিবাচক ফল দেয়নি ঢাকাই চলচ্চিত্রকে। শিল্পী সংকট কাটাতে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ নামে একটি প্রতিভা খোঁজার কার্যক্রমের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে এটি একটি কর্মশক্তিহীন প্রকল্প। প্রায় এক যুগ আগে ‘সুপার হিরো-সুপার হিরোইন’ নামে একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখান থেকেও নির্ভরশীল কোনো শিল্পী বের হয়ে আসেনি। চলচ্চিত্রের শিল্পী সংকট কাটাতে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল। সুষ্ঠু সমন্বয় না থাকায় এ প্রকল্পও চলচ্চিত্রের জন্য ফলপ্রসূ হয়নি। কেন তারকা সংকটে পড়েছে ঢাকার চলচ্চিত্র। কারণ হিসেবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করছেন, ভালো পরিচালকের অনুপস্থিতি, প্রসিদ্ধ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিগ বাজেটে ছবি নির্মাণ না হওয়া, মৌলিক গল্পের অভাব প্রভৃতি। এতে ভালো মানের ছবি তৈরি হচ্ছে না। বেরিয়ে আসছেন না নির্ভরশীল তারকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর