মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

যুদ্ধের বীভৎসতা কাছ থেকে দেখেছি

যুদ্ধের বীভৎসতা কাছ থেকে দেখেছি

মঞ্চকুসুম শিমুল ইউসুফ। এই গুণী শিল্পী একাধারে একজন অভিনয়শিল্পী, সংগীতপরিচালক, কোরিওগ্রাফার, পোশাক পরিকল্পক। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জীবনের এই প্রান্তে এসে পার করে এসেছেন বাষট্টিটি বসন্ত। এই গুণী ব্যক্তিত্বের স্মরণীয় কিছু ঘটনা এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলো কেমন ছিল?

যুদ্ধ শুরুর সময় আমার বয়স ছিল মাত্র চৌদ্দ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেই বীভৎস স্মৃতি এখনো আমাকে নাড়া দেয়। এটা ছিল আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। কারণ, যুদ্ধের সেই বীভৎসতা একদম কাছ থেকে দেখেছি। সেই সময় আমরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনের একদম উল্টোদিকে থাকতাম। আমি পিতৃহারা ছিলাম। শহীদ আলতাফ মাহমুদ ছায়া হয়ে ছিলেন আমাদের সঙ্গে। রাতের পর রাত নিরীহ মা-বোনদের ওপর যে পরিমাণ অত্যাচার চালানো হতো সব আমরা শুনতে পেতাম। ভয়ে গুটিসুটি মেরে থাকতাম। আমরা ঘরে কোনোরকম আলো জ্বালাতে পারতাম না। ছোট ছোট বাতি জ্বালালেও চারপাশে কাগজের আবরণ দিয়ে রাখতে হতো যেন আলো ছড়িয়ে না পড়ে। আলো দেখলেই হানাদার বাহিনী গুলি চালানো শুরু করত। একদম কারফিউর মতো অবস্থা ছিল। সত্যি কথা বলতে ওই সময়টা যারা দেখেননি তাদের পক্ষে এই বিষয়টি চিন্তা করা দুরূহ ব্যাপার।

 

থিয়েটারের শুরু কীভাবে?

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে আমি ঢাকা থিয়েটারে যোগদান করি। ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সংগীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার এবং পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক ও পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছি।

 

অভিনীত প্রিয় নাটক কোনটি?

অভিনীত সব নাটকই আমার প্রিয়। তবে উল্লেখযোগ্য ও প্রিয় নাটকের মধ্যে রয়েছে মুনতাসীর, কসাই, চর কাঁকড়া, শকুন্তলা, ফণীমনসা, কিত্তনখোলা, কেরামত মঙ্গল, হাত হদাই, চাকা, একাত্তরের পালা, যৈবতী কন্যার মন, মার্চেন্ট অব ভেনিস, বনপাংশুল, প্রাচ্য, ধাবমান, নষ্ট নীড়, দ্য টেম্পেস্ট সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। একক অভিনীত নাটক ‘বিনোদিনী’ বিশ্বনাট্য অলিম্পিকস ও আন্তর্জাতিক মনোড্রামা উৎসবে মঞ্চস্থ হয়।

 

গানের জগতে পদার্পণের দিনগুলোর কথা জানতে চাই...

গান শুরু করি পাঁচ বছর বয়স থেকে। তখন থেকেই রেডিও এবং টেলিভিশনে গান গাইতাম। সেই সময় আমি ‘কচি-কাঁচার মেলা’ সংগঠনে গানের অনুষ্ঠানে গান করি। ১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অভিনয় ও সংগীতজীবন শুরু করি। এরপরের বছর তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে শিশুশিল্পী হিসেবে আমার আত্মপ্রকাশ। তবে ১৯৬৪ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করেছিলাম সেই সময়কার পাকিস্তান টেলিভিশনের সম্প্রচারের প্রথম দিনেই।

 

গানের তালিম নিয়েছেন কার কার কাছ থেকে?

আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ওস্তাদ হেলাল উদ্দিন, পিসি গোমেজ, আলতাফ মাহমুদ এবং আবদুল লতিফের কাছ থেকে শাস্ত্রীয় এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত গানের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলাম।

 

অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কিসে?

শিল্প হিসেবে মঞ্চনাটক ও গান দুটো ব্যাপারই আমার আত্মার খুব নিকটবর্তী। আমি রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চের শিল্পী বলেই নিজেকে আখ্যা দিই। আমি আসলে পুরোপুরিভাবে নিজেকে মঞ্চে নিয়োজিত করেছি। পাশাপাশি শুদ্ধ সংগীতচর্চা অব্যাহত আছে এখনো।

 

অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। সম্মাননা পেতে কেমন লাগে?

আমার কাছে যেটি সবচেয়ে বেশি মূল্যবান, সেটি হলো মানুষের ভালোবাসা। বাংলা অভিনয়রীতি বিকাশে এবং শুদ্ধ সংগীতচর্চায় অবদানের জন্য আমি কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন কর্তৃক ‘মঞ্চকুসুম’ উপাধিতেও ভূষিত হই।

 

সর্বশেষ খবর