সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
বাজেট কমাতে দেশের বাইরে একসঙ্গে অধিক শুটিং

নাটকে ঘুরেফিরে একই মুখ

পান্থ আফজাল

নাটকে ঘুরেফিরে একই মুখ

এক সময় প্যাকেজ নাটক নির্মাণ বৃদ্ধি পেতে থাকলে পর্যায়ক্রমে রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং হাউসের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। নাটক নির্মাণের জন্য সেসব হাউস নাট্যনির্মাতাদের নির্ভরতার জায়গায় পরিণত হতে থাকে। কিন্তু ইদানীং প্রায় প্রযোজক-নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী একগাদা নাটক ও ইউনিট নিয়ে ছুটছেন বিদেশবিভুঁইয়ে। ফলে দেশের শুটিং হাউস-সংশ্লিষ্টরা বেকার হয়ে পড়ছেন। নাটকপাড়ায় আগের মতো সেই ব্যস্ততা তেমন নেই। গত কয়েক বছর ধরে শুটিংয়ের অজুহাতে নাটকের কলাকুশলীদের একটি বড় অংশ ছুটছে বিদেশে। দেশে এত দর্শনীয় স্থান থাকা সত্ত্বেও কেন এই দলবেঁধে বিদেশযাত্রা? একটা সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের টিভি নাটকের শুটিং হতো। কিন্তু এখন তা তেমন চোখে পড়ে না। তবে মজার বিষয় হলো, চেনা কিছু দেশে নাটকের শুটিং হচ্ছে। গল্পের জন্য নাকি নাটকের বাজেট নেই অথবা  বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে? কিছুদিন আগে তানজিন তিশা ও আফরান নিশোকে জুটি করে নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ এক ঘণ্টার পাঁচটি নাটক নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় শুটিং করলেন। এদিকে প্রায়ই দেশের বাইরে শুটিং করছেন অভিনেতা অপূর্ব। তিনি এর আগে সৈয়দ শাকিল ও সোহেল আরমানের পরিচালনায় ৮টি নাটকের শুটিং করতে নেপাল গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তৌসিফ মাহবুব, এফ এস নাঈম, জাকিয়া বারী মম, সারিকা ও তানজিন তিশা। ১৬ দিনে ৮টি নাটক, সত্যিই অবাক করা ব্যাপার! এভাবে শুটিং করলে নাটকের মান নিয়ে তো প্রশ্ন থাকবেই। বলে আর কী লাভ! দেশের বাইরে একগাদা নাটক নিয়ে কাজ এখন সব নির্মাতা, প্রযোজক আর অভিনয়শিল্পী হরহামেশাই করে থাকেন। এমনও নজির আছে, বাজেট অজুহাত দেখিয়ে বিশাল একটি বহর নিয়ে কিছু নির্মাতা-প্রযোজক একসঙ্গে ২২টি, ১২টি কিংবা ৭টি  প্রোডাকশন নিয়ে বিদেশে ভিড়েছেন। গৎবাঁধা সেই রোমান্টিক গল্প, নতুন অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কিছু পরিচিত চেনামুখ দিয়ে করছেন শুটিং! এখন তো দেশেই শুটিং হয় কম। শুটিং হাউসেও তেমন করে নেই কর্মতৎপরতা। ১২ মাসের মধ্যে ১০ মাসই কিছু নির্দিষ্ট নির্মাতা আসা-যাওয়া করেন বিদেশবিভুঁইয়ে। সঙ্গে থাকে কিছু নবাগত মুখ। যারা শিল্পী হিসেবে যতটা না, ততটা নির্মাতা-প্রযোজক ডিমান্ডে যুক্ত থাকেন। ইদানীং জনপ্রিয় তারকারাও এই অনিয়মের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ছেন। নিয়মিত হরহামেশাই বাইরে শুটিং করছেন। তবে নির্মাতা বান্নাহ তার কাজ প্রসঙ্গে দিয়েছেন ভিন্নমত। বলেন, লোকেশন বৈচিত্র্য ও গল্পের কারণে দেশের বাইরে শুটিং করা হয়েছে। যদিও দেশের বাইরের করা কাজগুলো খুব একটা ভালো হয় না। খুব তাড়াহুড়ো করে শুটিং হয়। তবে আমি সেটা কখনই করি না।’ টেলিভিশন নাটকের কলাকুশলীরা প্রায়ই রসিকতা করে বলেন, নেপাল এখন বাংলাদেশের পুবাইলের মতো। হয়েছেও তাই; এখন দেশের বাইরে শুটিং বেড়েছে বহুগুণ। এখন প্রায়ই তারকারা যাচ্ছেন নির্দিষ্ট কিছু দেশে। সেখানে নির্মিত হচ্ছে নাটক। সেই নাটক প্রচারিত হচ্ছে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলে। শুধু নেপাল নয়, দেশের পরিচালক, প্রযোজক ও তারকাদের শুটিংয়ের নিরাপদ স্পট হিসেবে এখন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মাল্টা ও মালয়েশিয়া রয়েছে। গত কয়েক বছর কমন কিছু দেশে হরহামেশাই বেড়েছে ওয়েব সিরিজের শুটিং। ব্যতিক্রমও আছে। দু-একজন নির্মাতা গল্প বা লোকেশনের প্রয়োজনে শুটিং করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে এক থেকে দুই ডজন নাটক আর একঝাঁক শিল্পীকে সঙ্গী করে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। তবে এই ভিনদেশে শুটিংয়ের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষতে চান না অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু নির্মাতা-প্রযোজক তা কড়ায়-গণ্ডায় কষেন। তাদের মন্তব্য, ‘দেশের বাইরে শিল্পীদের সঠিক সময়ে স্পটে পাওয়া যায়; কিন্তু দেশে এটি সম্ভব হয় না।’ প্রায়ই একঝাঁক নবীন শিল্পী উড়াল দেন বাইরের বিভিন্ন দেশে। টিমের সঙ্গে সর্বদা থাকেন ৪-৫ জন অখ্যাত মডেল নামধারী অভিনেত্রী। টিভি চ্যানেলের জন্য শুধু নয়, ইউটিউবকে কেন্দ্র করেও এই নাটক ও ওয়েব সিরিজ নির্মাণ বেড়েছে। নবীনদের পাশাপাশি বড় বড় তারকারা ঝুঁকছেন। তবে দেশের বাইরে মূলত একক নাটকেরই শুটিং বেশি হচ্ছে। দেখা গেছে, একজন নির্মাতা বা নির্দেশক একসঙ্গে তিনটি এক ঘণ্টার নাটক অথবা ধারাবাহিকের ৭-৮ পর্বের কাজ করতে ৬-৭ দিনের জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। ইউনিটে সদস্য থাকছেন কমপক্ষে ১৪-১৫ জন। বিমান ভাড়া যদি জনপ্রতি কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকাও হয়, তাহলে প্রয়োজন পৌনে চার লাখ টাকা। থাকার জন্য যদি হোটেলের ১০ রুমও ভাড়া হয়, তাহলে রুমপ্রতি প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হলে ১০ রুমে ৫০ হাজার আর সাত দিনে হয় সাড়ে তিন লাখ টাকা। খাওয়া খরচ প্রতিদিন তিন বেলা গড়ে ৯-১০ হাজার টাকা করে সাত দিনে ৭০ হাজার টাকা। রয়েছে বিভিন্ন লোকেশনে যাতায়াত এবং লোকেশন ভাড়া, তাও লাখ টাকা! এরপর রয়েছে অভিনয়শিল্পী আর কুশলীদের সম্মানী। সর্বশেষ এডিটিং আর মিউজিকের কাজ। সব মিলিয়ে প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার বাজেট। টিভি চ্যানেলগুলোতে এই তিনটি নাটক বিক্রি করে আপনি সর্বোচ্চ পেতে পারেন ছয়-আট লাখ টাকা। তাহলে নিশ্চিত লোকসান জেনেও কেন প্রতিনিয়ত বিদেশে শুটিংয়ে যাওয়ার জন্য খাবি খাচ্ছেন নির্মাতা-প্রযোজক আর শিল্পী-কুশলী?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর