শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেরদৌসের পর গাজী নূরকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ফেরদৌসের পর গাজী নূরকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ

অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের পর বাংলাদেশের আরেক অভিনেতা গাজী আবদুন নূরকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফেরদৌসের মতো তিনিও ভারতের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিতর্কের মুখে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও গুরুতর। কারণ ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিনি ভারতে আছেন অবৈধভাবে। ‘ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন’র তরফে এই সম্পর্কিত রিপোর্ট পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশি অভিনেতা গাজী আবদুন নূর, যিনি পশ্চিমবঙ্গের দমদমে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন, তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে। তার ভিসা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও এ দেশে থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ।’

উল্লেখ্য, কলকাতা সংলগ্ন ‘দমদম’ লোকসভা কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সৌগত রায়ের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যায় বাংলাদেশি অভিনেতা গাজী আবদুন নূরকে। কয়েকদিন আগেই কামারহাটি এলাকায় সৌগত রায়ের হয়ে একটি রোড শোতে দেখা যায় টিভি ধারাবাহিক ‘রানী রাসমণি’ খ্যাত অভিনেতা নূরকে। নূরের সঙ্গেই ছিলেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। রোড শো থেকেই বারবার নূরের নাম নিয়ে মদন মিত্রকে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতে শোনা যায়। নূরকে সঙ্গে নিয়ে সেই প্রচারণার ভিডিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন মদন মিত্র। বিষয়টি সামনে আসতেই গাজী নূরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায় বিজেপি। বুধবার রাজ্যের নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে এই অভিযোগ করেন বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। বাংলাদেশি অভিনেতাকে প্রচারে ব্যবহার করার জন্য সৌগত রায়ের প্রার্থী পদও বাতিল করার দাবি জানায় বিজেপি। এরপরই বিজেপির অভিযোগ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই নূরের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ কেন্দ্রের। যদিও দমদম কেন্দ্রের লোকসভা প্রার্থী সৌগত রায়ের হয়ে প্রচারণায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি নিজেই জানান, ‘আমি দেখেছি যে গাজী নূর প্রচারণায় ছিলেন কিন্তু আমি তাকে আনিনি, যা বলার মদন মিত্র বলবেন।’ আর মদন মিত্র সাফাই দিয়ে বলেন, ‘নূর তৃণমূলের পক্ষে একটা কথাও প্রচার করেনি। সে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমার কাছে আসার পর আমি তাকে আমার ফ্ল্যাক্স থেকে এক কাপ চা দিই ও এক গ্লাস পানি দিই। এরপর আমার সঙ্গে কথা বলে সে চলে যায়। তাছাড়াও আমি নিজে প্রার্থী নই এবং প্রচারণা নিয়ে নূর একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি।’ বিষয়টি সামনে আসতেই কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনারের তরফেই নূরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে সতর্ক করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয় যে বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে ভারতের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া উচিত হয়নি। বুধবার উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান নিজেই এই বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

যদিও নূরের বিরুদ্ধে এই ধরনের বিতর্ক ওঠার পর তিনি অস্বীকার করেন। তার অভিমত ‘মদন দা লোকসভার প্রার্থী নন। তবে মানুষ কীভাবে এভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে? এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। আমি বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন থেকেও ফোন পেয়েছি, তারাও আমার কাছে জানতে চেয়েছিলন আমি কেন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি কেবল মদন দার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলাম, এর বেশি কিছু নয়। আমি একজন অভিনেতা, রাজনীতিতে আমার কোনো উৎসাহ নেই।’ এর আগে বিদেশি নাগরিক হয়ে অন্য দেশের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে মঙ্গলবার বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌসকে কালো তালিকাভুক্ত করে তার বিজনেস ভিসা বাতিল করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তাকে দ্রুত ভারত ছাড়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বিতর্ক মাথাচাড়া দিতেই কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের তরফেও ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে ভারত ছাড়ার কথা বলে। এরপর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি দেশে ফিরে যান। ১৪ এপ্রিল রাজ্যটির উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের সমর্থনে ইসলামপুরে একটি প্রচারণায় অংশ নেন ফেরদৌস। একটি হুডখোলা গাড়িতে করে টালিগঞ্জের অভিনেতা অঙ্কুশ ও অভিনেত্রী পায়েল সরকারের সঙ্গে ‘রোড শো’তে দেখা যায় ফেরদৌসকে। রোড শোর পর একটি জনসভায় অংশ নিয়ে ফেরদৌসকে বলতে শোনা যায়, ‘সকলকেই তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া উচিত। সকলেরই দিদি (মমতা)-কে ভোট দেওয়া উচিত।’

সর্বশেষ খবর