বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নায়িকা নামে কারা ভিড় জমাচ্ছেন কলকাতায়

আলাউদ্দীন মাজিদ

নায়িকা নামে কারা ভিড় জমাচ্ছেন কলকাতায়

কলকাতার সিনেমায় বাংলাদেশের শিল্পীদের অভিনয় করা নতুন কিছু নয়। সত্তরের দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত অনেক শিল্পী সেখানকার সিনেমায় অভিনয় করে সাড়া জাগিয়েছেন। এই তালিকায় নায়করাজ রাজ্জাক, ববিতা, অঞ্জু ঘোষ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ফেরদৌস এবং সাম্প্রতিক সময়ে শাকিব খান, জয়া আহসানসহ অনেক প্রথম গ্রেডের শিল্পী অভিনয় করছেন এবং প্রশংসিত হচ্ছেন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে এদেশের কিছু চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেডের শিল্পী কলকাতায় গিয়ে সেখানকার ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন। এতে নিজ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে দেশীয় অনেক চলচ্চিত্রকারের ক্ষোভ রয়েছে। চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদের কথায় দুই বাংলার শিল্পীরা পরস্পরের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে এক দেশের আমন্ত্রণে অপরের দেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। এখন অনেকে প্রায় ভিক্ষাবৃত্তির মতোই কলকাতায় গিয়ে কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এটি আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই অসম্মানজনক। এটি কারও কাম্য নয়। এখানকার অনেক নিম্ন গ্রেডের শিল্পী কলকাতায় গিয়ে ছবির জন্য তদবির করছেন বলে জানা গেছে। এসব শিল্পীর মধ্যে কলকাতার ফিল্মপাড়া সূত্রে বেশ কয়েকজনের নামও শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- জলি, মেঘলা মুক্তা, সাদিয়া আন্দালিব নাবিলা, মিষ্টি জান্নাত, সিমলা, সোহানা সাবা, ফারিন, শম্পা, জ্যোতিকা জ্যোতি, মিম, পূজা। জলি চলচ্চিত্রে আসেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানের কলকাতার সঙ্গে যৌথ আয়োজনের ছবি ‘অঙ্গার’-এ প্রথম অভিনয় তার। এরপর ঢাকাই ছবি নাদের চৌধুরী পরিচালিত ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’তে অভিনয় করেন। এর একটি ছবিও দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ফলে ঢাকাই ছবিতে অবস্থান তৈরি করতে না পেরে কলকাতার ছবিতে অভিনয়ের জন্য দৌড়ঝাঁপ করলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি তার।

এরপর এসেছে মেঘলা মুক্তার নাম। কলকাতার ছবিতে সুযোগ না পেয়ে একসময় তেলেগু ছবিতে অভিনয় করেন এই নায়িকা। মুক্তা অভিনীত প্রথম তেলেগু ছবি ‘সাকালাকালা ভাল্লাভুডু’। এরপর আরও একটি তেলেগু ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। মেঘলা মুক্তা বলেন, তেলেগু ছবিতে এখন আমার একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি হয়েছে। আশা করি এ অবস্থান বেশ মজবুত হবে। তেলেগু ছবির আগে বাংলাদেশ-কলকতার যৌথ ছবি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘নবাব’ ও ‘পাষাণ’ ছবিতে সহশিল্পীর অভিনয় করেন তিনি। বাংলাদেশি বংশো™ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক সাদিয়া আন্দালিব নাবিলার যাত্রা শুরু হয় বলিউডের পারেশান পারিন্দা ছবি দিয়ে। এর আগে তিনিও কলকাতার ছবিতে অভিনয়ের চেষ্টা করেন বলে জানা যায়। তার কথায় অভিনয় আমার নেশা। এই শখ পূরণে যে কোনো দেশে চেষ্টা করতেই হবে। সফলতা পাওয়াটা পরের কথা। এদিকে প্রথম ছবি ব্ল্যাক’ ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হলেও বিদ্যা সিনহা মিম কলকাতার ‘ইয়েতি অভিযান’ ও যৌথ ছবি ‘সুলতান : দ্য সেভিয়র’ ছবিতে অভিনয় করেন। এসব ছবির একটিও সফল না হলেও মিমের কথায়- ‘কাজের প্রতি একাগ্রতা একসময় কলকাতার ছবিতে আমার সফলতা এনে দেবে।’ অভিনেত্রী সোহানা সাবাও কলকাতায় নিজের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তার অভিনীত কলকাতার প্রথম ছবি ‘ষড়রিপু’ খুব একটা সাড়া জাগাতে পারেনি। ষড়রিপু ছাড়াও বেশ কটি ছবিতে কাজ করলেও এখনো সেখানে মজবুত ভিত গড়তে পারেননি সাবা। তার কথায় ‘কলকাতার ছবিতে আমি প্রধান সব চরিত্রেই অভিনয় করছি। সফলতা-ব্যর্থতার পরিমাপ করবে দর্শক।’ এছাড়া নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরিসহ আরও কয়েকজন অভিনেত্রী রয়েছেন এ তালিকায়। এদের মধ্যে ফারিয়ার ‘বাদশা’ ছাড়া আর কোনো ছবি সফলতার মুখ দেখেনি। এসব নায়িকার কথায় ‘আমরাই বোধহয় ছোট একটা জায়গায় পড়ে আছি, অন্যদের কিন্তু এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমাদের বোঝা উচিত পৃথিবীর সীমানাটা অনেক বড়। সফলতা পেতে ধৈর্য ধরতে হয়। রাতারাতি আকাশ ছোঁয়া যায় না। সিমলা বেশ কবছর আগে কলকাতার একটি ছবিতে বলিউড অভিনেতা গোবিন্দের সঙ্গে অভিনয় করলেও ছবিটি আজও আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকাই চলচ্চিত্রে কাজ না পেয়ে একসময় সিমলা কলকাতামুখী হন। সেখানকার এক নির্মাতার সহযোগিতায় মুম্বাইর মিরা রোডে একটি বাসা ভাড়া করে থাকছেন এবং ছোট মাপের কিছু ছবিতে টুকটাক অভিনয় করছেন। তার কথায় ‘দেশে কাজ নেই। আমি যদি এখানে এসে কাজের চেষ্টা না করি তাহলে আমাকে তো না খেয়ে মরতে হবে।’

সর্বশেষ খবর