শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

এলাকাভিত্তিক মঞ্চ কেন আবশ্যক

এলাকাভিত্তিক মঞ্চ কেন আবশ্যক

এদেশে পূর্বসূরি-উত্তরসূরিদের হাত ধরেই দেশি মঞ্চাঙ্গনে অনেক নাট্যদল গড়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে নাট্যদলের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে মঞ্চাঙ্গনে নাটক প্রদর্শনীর জন্য মিলনায়তন বা মঞ্চ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতে সেগুনবাগিচা ও বেইলি রোডকেন্দ্রিক নাটক মঞ্চায়ন হয় বেশি। নাটক মঞ্চায়নের জন্য সাধারণত এই দুই জায়গায় উপযোগী মিলনায়তন আছে; বাকি এলাকায় নেই। দর্শক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আগে প্রয়োজন  জোনভিত্তিক মঞ্চ। মঞ্চ সংকট ও তার থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

রামেন্দু মজুমদার (থিয়েটার) : মঞ্চনাটকে যে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি নেই তা বলব না, নতুন নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। তবে তুলনামূলক কম হচ্ছে। অন্যদিকে মহড়া কক্ষের সমস্যা তো আছেই। শিল্পকলায় যা আছে তা কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। মঞ্চে নাটক দেখার দর্শক কমে গেছে। এভাবে কিন্তু চলে না! আর ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে শিল্পকলায় এসে নাটক দেখা সম্ভব নয়। মিরপুর, গুলশান, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চনাটকের জন্য মঞ্চ তৈরি করতে হবে।

 

ড. ইনামুল হক (নাগরিক নাট্যাঙ্গন) :

মঞ্চনাটক এখন নিয়মিত হচ্ছে। হলগুলোও আজ আর খালি থাকছে না। হল বরাদ্দ নিয়ে রীতিমতো চলছে কাড়াকাড়ি। তবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে স্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ এখন সময়ের দাবিতে রূপ নিয়েছে। উত্তরা, গুলশান, বনানী এমনকি যাত্রাবাড়ীর মতো এলাকায় স্থায়ী মঞ্চ গড়ে উঠলে নাট্যচর্চা আরও ব্যাপ্তি পাবে।

 

মামুনুর রশীদ (আরণ্যক নাট্যদল) : নতুন মঞ্চনাটক চাই। তারচেয়ে বেশি বেশি চাই মঞ্চ। আমাদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ আছে, তা আবার ঢাকা শহরের একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে উত্তরায় কোনো মঞ্চ  নেই। মিরপুর, ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান কিংবা নারায়ণগঞ্জে তেমন মঞ্চ নেই, যেখানে কোনো দল নাটকের শো করতে পারে। মাঝে মাঝে বিমানবন্দরের রাস্তায়, মিরপুর, ধানমন্ডির জ্যামে মঞ্চপ্রিয় দর্শক আটকে থাকে। মঞ্চনাটকের দর্শক এই অবস্থায় কীভাবে এত দূরের পথ পেরিয়ে শিল্পকলায় আসবে মঞ্চনাটক দেখতে? এসব জায়গা থেকে আসতে-যেতে তো ৫ ঘণ্টার বেশি সময় চলে যায়। যদি ঢাকার বিভিন্ন গুরুপূর্ণ জায়গায় মঞ্চ থাকত তাহলে কাউকে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না। মঞ্চে অনেক ভালো ভালো নাটক নামছে, কিন্তু মঞ্চের অভাবে করতে পারছে না। প্রত্যাশা কিন্তু অনেক। তবে মঞ্চের অভাবে, ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অভাবে দলগুলো নাটক নামাতে পারছে না। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, নাটক করবেটা কোথায়?  

 

শহিদুজ্জামান সেলিম (ঢাকা থিয়েটার) : মঞ্চে বেশি বেশি কাজ হোক। কাজ হলেই ভালো ভালো নির্দেশক, নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী বাড়বে। প্রচুর ভালো নাটক চাই এ সময়ে। তবে, নাটক দেখার জন্য চাই মঞ্চ। শুধু শিল্পকলা বা বেইলি রোড কেন্দ্রিক মঞ্চ প্রদর্শনী হলে মঞ্চ দর্শক বাড়বে না; বিভিন্ন এলাকায় মঞ্চ থাকলে দর্শক বেশি বেশি নাটক দেখার সুযোগ পেত। আমার মতে এই ব্যাপারে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা মুখ্য নয়; দরকার সবার মিলিত প্রচেষ্টা।

 

আহমেদ গিয়াস (সুবচন নাট্য সংসদ) : আমরা কিন্তু বহু বছর থেকে দাবি করে আসছি, ঢাকা শহরে আরও কিছু মঞ্চনাটক প্রদর্শনের স্থান প্রয়োজন। উত্তরা, মিরপুর, গেন্ডারিয়ায় হল হলে শিল্পকলার ওপর চাপ অনেকটাই কমবে। আমাদের দাবি এ সরকার আমলেও নিয়েছে। উত্তরায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি হল হবে আর মিরপুরের গোল চত্বরে একটি স্থান তো আগেই ছিল। মহিলা সমিতিতে আরও বেশি নাটক মঞ্চস্থ করা দরকার। তাহলে চাপ কমবে। শিল্প-সাহিত্য চর্চার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জোন ভিত্তিক মঞ্চ দরকার। ঢাকা শহরে অন্তত চারটি স্পটে মঞ্চ থাকা জরুরি।

 

মুক্তনীল (বাতিঘর থিয়েটার) : শিল্পকলা, বেইলি রোডস্থ হয়ে পড়েছে মঞ্চনাটক। এটাকে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন বিভিন্ন এলাকায় মঞ্চ। মূল কথা হলো, দর্শক কীভাবে ফিরে আসতে পারে তার বিষয়ে ভাবতে হবে। তবে, জাতিসত্তার যত আগ্রাসন আছে তার আলোকে আরও নতুন নতুন মঞ্চ নাটক হওয়া উচিত-যেটি প্রথম থেকেই বাতিঘর থিয়েটার করে আসছে। মঞ্চ তো দরকার কিন্তু যেগুলো এখন আছে তার সঠিক ব্যবহার কিন্তু আমরা করছি না। তবে আমরা আশাবাদীদের দলে। রাষ্ট্র শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য অনেক কিছুই করেছে কিন্তু আমরাই সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নতুন মঞ্চ তৈরি হয়েছে। মিলনায়তনটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। তারপরেও আমাদের দর্শক বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।

 

রামিজরাজু (প্রাঙ্গণে মোর) : রাজধানীতে সবমিলে মঞ্চ রয়েছে ছয়টি। এগুলোর মধ্যে আবার অর্ধযুগ ধরে গাইড হাউস বন্ধ রয়েছে। জাতীয় নাট্যশালার তিনটি ও মহিলা সমিতি মঞ্চ কাছাকাছি। ফলে ঢাকার অপরাপর এলাকার নাট্য দর্শকদের পক্ষে প্রয়োজনমতো নাটক দেখতে আসা অনেকটা কষ্টসাধ্য। তাই বিভিন্ন জোনভিত্তিক মঞ্চ আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

 

সর্বশেষ খবর