শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবৃত্তি প্রসারে সাংগঠনিক চর্চার গুরুত্ব

আবৃত্তি প্রসারে সাংগঠনিক চর্চার গুরুত্ব

তিন দশকের অধিক বাংলাদেশে সাংগঠনিকভাবে আবৃত্তি চর্চা চলছে। সংখ্যার বিচারে অন্য শিল্পমাধ্যমের চেয়ে আবৃত্তি অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়তে এর সাংগঠনিক শক্তির যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সংগঠনগুলো মানসম্মত প্রযোজনা মঞ্চায়নের মাধ্যমে আবৃত্তির নির্দিষ্ট শ্রোতা তৈরি করতে পারছে না। এ সংকট উত্তরণে সাংগঠনিক চর্চা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পীদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন- পান্থ আফজাল

 

রফিকুল ইসলাম

আবৃত্তি চর্চার প্রসারে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন মূলত বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠনগুলো দায়িত্ব নিয়ে থাকে। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবৃত্তিকে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। ব্যক্তিগত চর্চায় অনীহা থাকে কিন্তু সাংগঠনিক চর্চায় থাকে না। হ্যাঁ, আবার দলের মধ্যে ইগো সমস্যা, নেতৃত্ব নিয়ে দলাদলি, সিনিয়র-জুনিয়র বিতর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব বা বিভিন্ন কারণে দল ভেঙে নতুন দল হয়।

 

আহকাম উল্লাহ

একটা শিল্প বিকাশের জন্য সাংগঠনিক চর্চা খুবই গুরুত্ব বহন করে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এর ইম্প্যাক্ট কতটুকু আর একক বা ব্যক্তিগতভাবে করলে এর ইম্প্যাক্ট কতটুকুÑ এটা সহজেই অনুমান করা যায়। এখন কিন্তু বাংলাদেশে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা বেড়েছে। দেশব্যাপী বছরজুড়ে নানা উৎসব হচ্ছে। বহু ছেলেমেয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আসলে যে কোনো শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে সুসংগঠিত থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুসংগঠিত থাকলে শিল্প এগিয়ে যায়।

 

শিমুল মুস্তাফা

আবৃত্তি প্রসারে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চা যথেষ্ট গুরুত্ব রেখেছে। সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার মাধ্যমেই আবৃত্তি চর্চার প্রক্রিয়াগুলো সবাই শিখতে পারে। আর ভাঙন? বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এটা একটা সাধারণ বিষয়। যে কোনো কারণেই সংগঠন ভাঙতে পারে। সাংগঠনিক দোষ, আবৃত্তিকারের দোষ, ইগো সমস্যা, যোগ্য নেতৃত্ব, ব্যক্তি স্বার্থ-নানা কারণে হতে পারে। দুজন লোক থেকে দুজন হলেই এ সমস্যা হয়। ভাঙন আসলে একটা চারিত্রিক দোষ।

 

মাহিদুল ইসলাম মাহি

প্রাথমিক পর্যায়ে আবৃত্তি শেখা বা প্রশিক্ষণের জন্য সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু একটা স্তর অতিক্রম করার পর ব্যক্তিগত চর্চা খুবই জরুরি। কারণ, তখন নিজেকে এবং এ শিল্পকে জনপ্রিয় করতে ব্যক্তিগত চর্চার দরকার হয়। শুরুটা সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চায় হোক, এরপর নিজের বিকাশের জন্য ব্যক্তিগত চর্চা। আর দেশ ভাঙে সংগঠন ভাঙবে না! এই ভাঙাটাকে বিভাজন বলাটাই ভালো। তবে ভাঙনটা ইতিবাচক হলে ঠিক আছে। আবৃত্তির জন্য সাংগঠনিক চর্চার পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন।

 

মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের প্রায় ৪০০টি সংগঠন আছে (সহযোগী সংগঠনসহ)। আর আবৃত্তি চর্চার জোয়ার শুরু হয়েছে কিন্তু সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার মাধ্যমেই। সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার আগে এটা কিন্তু পৃথক শিল্প ছিল না। ১৯৮০ সালে সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চার শুরু হয়। আবৃত্তি অনুষ্ঠানে এখন কিন্তু নাটকের দর্শকের চেয়ে কম দর্শক হয় না! গোলাম মোস্তাফা, সেয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, আসাদুজ্জামান নূর, নরেন বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম, গোলাম সারোয়ারসহ অনেকে মিলে এটাকে শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

 

মজুমদার বিপ্লব

এটা আসলে ডিপেন্ড করে দলগুলোর ওপর। তবে, শুদ্ধভাবে উচ্চারণ শিখতে বা কথা বলতে সাংগঠনিক চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক চিন্তা বাদ দিতে হবে। আর সমন্বয় পরিষদকেও ঢেলে সাজাতে হবে। কিছু উদ্যোগ সবার কাছেই গ্রহণীয় নাও হতে পারে। ভালো ভালো আরও অনেক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারত। গঠনমূলক উদ্যোগ নিলে সাংগঠনিক চর্চাও ভালো হয়। ভাঙন আমার কাছে খারাপের দিক।

সর্বশেষ খবর