ঢাকাই চলচ্চিত্রে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাণ হচ্ছে না দীর্ঘদিন। এ কারণে দর্শকের অভাবে সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ছবির এই খরা চরমে পৌঁছেছে। গেল ঈদে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম ছবি মুক্তি পেয়েছে। এতে চলচ্চিত্র জগৎ ও দর্শক যখন চরম হতাশায় নিমজ্জিত তখনই বেশ কয়েকজন নির্মাতা তারকাবহুল কয়েকটি ছবি নির্মাণে এগিয়ে এলেন। এসব তারকার মধ্যে রয়েছেন- শাকিব খান, বুবলী, নুসরাত ফারিয়া, তিশা, বাপ্পী, রোশান, পূজা, পরীমণি, সিয়াম, ডি এ তায়েব, হুমায়রা হিমু, অনন্ত, বর্ষা, মাহি সাইমন, আইরিন, শুভ-ঐশী, স্পর্শিয়া, এ বি এম সুমন প্রমুখ। ছবিগুলো হলো- শাকিব-বুবলীর ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’, নুসরাত ফারিয়া, তিশা ও বাপ্পীর ‘ঢাকা ২০৪০’, রোশান ও পূজা চেরীর ‘জ্বীন’, পরীমণি-সিয়ামকে নিয়ে ‘বিশ্বসুন্দরী’, আনোয়ারা-ডি এ তায়েব-হুমায়রা হিমুর ‘আমার মা’, অনন্ত-বর্ষার ‘দিন দ্য ডে’, মাহি-সায়মনের ‘আনন্দ অশ্রু’, আইরিনের ‘পদ্মার প্রেম’, ‘শুভরাত্রী’ এবং ‘কাউন্টডাউন’, শুভ-ঐশীর ‘মিশন এক্সট্রিম’, স্পর্শিয়ার ‘কাঠবিড়ালি’ ও ‘পেয়ারার বাগান’, সিয়ামের ‘শান’, মিতুল-সিফাতের ‘সব সুখ তোর জন্য’সহ আরও বেশকিছু ছবি। জানা গেছে, এসব ছবির মধ্যে বেশির ভাগেরই কোনোরকম ঢাক- ঢোল না পিটিয়ে মানে জমকালো মহরত না করে নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন নির্মাতা। সংশ্লিষ্ট নির্মাতাদের দাবি আগে প্রচার নয়, মানসম্মত কাজই মুখ্য। এ ধরনের আগে কাজ শুরু হওয়া এবং পরে মহরত হওয়া একটি ছবি হলো- শাকিব-বুবলীর ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’। এ ছবির কাজ আগে শুরু হলেও মহরত হয়েছে গত সোমবার ঢাকা ক্লাবে। এদিকে এমন তারকাবহুল একাধিক ছবির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সিনেমা হল মালিকরা। মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশাদ বলেন, ছবির বাজার মন্দা এই অজুহাতে নির্মাতারা যদি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন তাহলে এই শিল্পের খরা কখনো কাটবে না। ব্যবসা ভালো-মন্দ যাই হোক ঝুঁকি নিতেই হবে। না হলে সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এই দাবি পূরণে নির্মাতারা ব্যাপক হারে এগিয়ে আসবেন এবং দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে রক্ষা করবেন এটাই একমাত্র কাম্য। পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, প্রযোজকরা যদি ব্যবসায়িক মন্দার ভয়ে এই শিল্প থেকে দূরে সরতে থাকেন তাহলে শুধু নির্মাতারা বেকার হবেন না, পুরো শিল্পটিই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। দেশের প্রধান এই গণমাধ্যমটি না থাকলে বিনোদনের অভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদকাসক্তিসহ নানা অপরাধপ্রবণতা বাড়বে। এ অবস্থায় বেশ কজন প্রযোজক বর্তমানে প্রযোজনায় এসেছেন, মানে প্রচন্ড খরায় কিছুটা হলেও স্বস্তির বৃষ্টি নামল। এই স্বস্তি অব্যাহত থাকুক এটাই চাই। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ছবি নির্মাণ কমছে বলে শিল্পীদের মধ্যে বেকারত্ব ও হতাশা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে এদেশের চলচ্চিত্র শিল্প অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে। এই হতাশার অন্ধকারে বেশকিছু ছবির কাজ একসঙ্গে শুরু হওয়া মানে অন্ধকারে কিছুটা হলেও আলোর মুখ দেখা। এই আলো যেন আবার নিভে না যায় সেই অনুরোধ করব নির্মাতাদের। ঝুঁকি নিয়ে হলেও তারা যেন নির্মাণে নিয়মিত হন এবং এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখেন সেই প্রত্যাশা আমার। আমরা যদি পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাণ করতে পারি তাহলে বিদেশি ছবি আমদানির বিরুদ্ধে আর আন্দোলনে যেতে হবে না।