শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রযোজকশূন্য ঢাকাই চলচ্চিত্র

আলাউদ্দীন মাজিদ

প্রযোজকশূন্য ঢাকাই চলচ্চিত্র

প্রযোজনা সংস্থা-শূন্য এখন কাকরাইল ফিল্মপাড়া

প্রযোজকের অভাবে দুর্যোগে পড়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্র। প্রযোজকরা ক্রমেই ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। তাই ছবি নেই। চলচ্চিত্র ব্যবসা মন্দাবস্থার কবলে পড়ায় চলতি দশকের শুরু থেকেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। এখন প্রায় প্রযোজকশূন্য এই শিল্পে ছবির অভাবে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে আর শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে সিনেমা হলগুলো। সর্বশেষ বড় মাপের প্রযোজনা সংস্থার মধ্যে ২০১২ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং ২০১৮ সালে শাপলা মিডিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর মধ্যে জাজ স্থানীয় ও যৌথ মিলিয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২০টি ছবি উপহার দেয়। বেশির ভাগ ছবিই ব্যবসাসফল হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যায় পড়লে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি চলচ্চিত্র নির্মাণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে শাপলা এ পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি ছবি নির্মাণ করলেও সেগুলো খুব একটা ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি বলে দাবি করছে প্রদর্শকরা। জাজ ও শাপলা ছাড়া মাঝে মধ্যে অনেকে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এলেও মানসম্মত ছবি নির্মাণ করতে না পারায় তারা স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। ২০১৪ সালে ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’ নির্মাণের মাধ্যমে প্রযোজনায় আসেন শীর্ষনায়ক শাকিব খান। তার ছবিটি সুপারহিট হলেও তিনি প্রযোজনায় আর নিয়মিত হননি। গত ঈদে আবার মুক্তি পায় শাকিব খানের প্রযোজনা সংস্থা এস কে ফিল্মসের ছবি ‘পাসওয়ার্ড’। এ ছবিটিও দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় গত রবিবার চার ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন অভিনেতা-প্রযোজক শাকিব। চলচ্চিত্রকারদের কথায় চলচ্চিত্রের এই ক্রান্তিলগ্নে শাকিবের এই উদ্যোগ এ শিল্পের জন্য সত্যিই কল্যাণকর। তবে তাকে প্রযোজনা অব্যাহত রাখতে হবে। ১৯৫৬ সালে এ দেশে প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ হলে স্থাপিত হয় প্রযোজনা সংস্থার অফিস। ইকবাল ফিল্মসের ব্যানারে ছবিটি নির্মাণ করেন আবদুল জব্বার খান। তখন এই সংস্থার অফিস স্থাপিত হয় ভিক্টোরিয়া পার্কে অবস্থিত প্রভেনশিয়াল বুক ডিপো ভবনের দ্বিতীয় তলায়। দেশ স্বাধীনের পর গুলিস্তানে গুলিস্তান সিনেমা হল ভবনে প্রযোজনা সংস্থার অফিসগুলো একত্রিত হয়ে গড়ে তোলে ফিল্মপাড়া। দুই হাজার সালের প্রথমদিকে গুলিস্তান সিনেমা হল ভেঙে ফেলা হলে প্রযোজনা সংস্থাগুলো কাকরাইলে চলে আসে। এখানে রাজমনি ভবন, ভূঁইয়া ম্যানশন, ফরিদপুর ম্যানশন, যমুনা ভবন, ইস্টার্ন কমার্শিয়াল ভবনে খোলা হয় প্রযোজনা সংস্থার বিভিন্ন অফিস। তখন থেকেই চলচ্চিত্রপাড়া হিসেবে খ্যাতি লাভ করে কাকরাইল। এই ফিল্মপাড়ায় শতাধিক চলচ্চিত্র প্রযোজনার অফিস এই শিল্পটিকে সরব করে রেখেছিল।

২০০৭ সালের পর থেকে নানা কারণে চলচ্চিত্র ব্যবসায় মন্দাভাব শুরু হলে ধীরে ধীরে প্রযোজনা সংস্থাগুলো বন্ধ করে দিয়ে অফিস গুটিয়ে নিতে শুরু করে প্রযোজকরা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দীন উদ্বেগের সঙ্গে জানান, এখন এই ফিল্মপাড়ায় এক ডজন অফিসও নেই। যেগুলো আছে তাতে চলচ্চিত্রের কোনো কাজ নেই। বাধ্য হয়ে অন্য ব্যবসায় অফিসগুলোকে ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্ট প্রযোজকরা।

মিয়া আলাউদ্দীন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাকরাইলে ৬ তলা বিশিষ্ট ভূঁইয়া ম্যানশন ছিল প্রযোজনা সংস্থার সবচেয়ে বড় অফিস। এখানে অর্ধশতেরও বেশি অফিস ছিল।

বর্তমানে রয়েছে মাত্র তিনটি অফিস। এগুলো হলো- হার্টবিট প্রোডাকশন, তুষার কথাচিত্র এবং শাপলা মিডিয়া। এসব সংস্থা থেকেও নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় না। মিয়া আলাউদ্দীন জানান, বর্তমানে কাকরাইলের বাইরে নিউ ইস্কাটন রোডের মিডিয়া গলিতে হাতে গোনা কয়েকটি প্রযোজনা সংস্থার অফিস খোলা হয়েছে। এগুলো থেকেও নিয়মিত ছবি পাওয়া যায় না। মূলত অন্য ব্যবসায় অফিসগুলো ব্যবহƒত হয়।

দেশ স্বাধীনের আগেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থাগুলোকে ঘিরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত হয় প্রযোজনা সংস্থার অফিস। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তোপখানা রোড, নয়াপল্টন, কাকরাইল, গ্রিন রোড, সিদ্দিক বাজার, নবাবপুর রোড, ওয়াইজঘাট, ইসলামপুর, গুলিস্তান, দিলকুশা, মতিঝিল, বিজয়নগর,  ওয়ারী, পুরানা পল্টন, গুলশান, ধানমন্ডি, আরামবাগ, ফকিরাপুলসহ নানা স্থানে বিস্তৃত হয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থার অফিস। এসব অফিসকে ঘিরে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা ছিল রমরমা। 

সর্বশেষ খবর